সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৫ অপরাহ্ন
নিজস্ব সংবাদদাতা :ভদ্রবেশে-ছদ্মবেশী প্রায় ৪ শতাধিক নারী ময়মনসিংহ মহানগরীসহ ১৪ উপজেলার শহর ও গ্রাম অঞ্চলে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। পারিবারিকভাবে অনেকেই স্বামীকে ব্যবসায় সহায়তা করতে গিয়ে মাদক সম্রাজ্ঞী খেতাব পেয়েছেন। শহরের প্রায় শতাধিক পয়েন্টে ইয়াবা, হেরোইন ও ফেনসিডিল ব্যবসায় এরা তৎপর।
সূত্র জানায়, শহরের পাটগুদাম, শম্ভুগঞ্জ, বড় বাজার, কেওয়াটখালী, বাকৃবি শেষ মোড়, চরপাড়া, মাসকান্দা, আকুয়া, কাঁচিঝুলি, নতুন বাজার, সানকিপাড়া, সানকিপাড়া শেষ মোড়, সেনবাড়ি, তিনকোণা পুকুর পাড়, ব্রাহ্মপল্লী, পুরোহিতপাড়া, কৃষ্টপুর, সেহড়া চামড়া গুদাম, স্টেডিয়াম এলাকা,চরপাড়া কপিক্ষেতসহ প্রায় শতাধিক স্পট ময়মনসিংহের গুরুত্বপূর্ণ মাদক পয়েন্ট।
এসব পয়েন্টে হাত বাড়ালেই হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজা মেলে।প্রায় ৫ শতাধিক নারী মাদক ব্যবসায়ী নিরাপত্তার প্রশ্নে উঠতি বয়সী নারীদের দিয়ে মাদক পরিবহনের কাজটি সারছে। মাদক পরিবহনকারী এসব নারীর সংখ্যা শতাধিক বলে প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার অনুসন্ধানে উঠে আসে । বোরকা পরে স্কুল-কলেজের ছাত্রী বেশে ব্যাগে করে এরা মাদক আনা নেওয়ার কাজ করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসায়ী নারীদের অনেকেই পারিবারিকভাবে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। নিজের স্বামীকে মাদক ব্যবসায় সহায়তা করতে এ সর্বনাশী রাজ্যে পা বাড়াচ্ছেন তারা। এরপর সময়ের পরিক্রমায় নিজেও মাদক সম্রাজ্ঞী বনে গেছেন।জানা গেছে, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া দক্ষিণপাড়া খালপাড় এলাকা থেকে ১০ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ৭০ গ্রাম হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ী এক দম্পতিকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ। পুলিশের হাতে ধরা পড়া এ দম্পতির নাম ওয়াজেদ (২৬) ও উর্মিলা আক্তার (২৪)।
কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ জানায়, গত তিন ৫ মাসে ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রায় অর্ধ-শতাধিক নারী মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। আটক নারীদের বেশিরভাগ ইয়াবা ও হেরোইন ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত।সম্প্রতি ময়মনসিংহ নগরীর একটি হোটেল থেকেময়মনসিংহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর এক কোটি টাকা মূল্যের এক কেজি ৫০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করেছে। এ সময় মাদক বিক্রির তিন হাজার আটশো টাকা এবং মাদক ব্যবসায় ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকারসহ চারজনকে আটক করা হয়। গত ২০ আগস্ট দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অধিদফতরের উপ- পরিচালক মোহাম্মদ খোরশিদ আলম এ তথ্য জানান।
অভিযানকালে ময়মনসিংহের একটি হোটেল থেকে মাদক ব্যবসায়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা মেহেদী হাসান ও নাসিরুলকে এবং শেরপুর থেকে দুই সহোদরা রুবিনা ও রুমাকে আটক করা হয়। মাদকগুলো চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে শেরপুর পাচার করা হচ্ছিলো। দুই সহোদরার নামে শেরপুরে একাধিক মামলা রয়েছে।এদিকে গফরগাঁওয়ে ‘ইয়াবা সুন্দরী’ এবং ফুলবাড়িয়ায় ‘ইয়াবা কন্যা’ উর্মি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র হাতে ধরা পড়ার পর ফাঁস হয়ে যায় ময়মনসিংহে ইয়াবা ব্যবসার রোডম্যাপ। বিশেষ করে ২২ বছর বয়সী ইয়াবা কন্যা উর্মির কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৫২ পিস ইয়াবা। পাওয়া যায় ইয়াবা কানেশনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
এছাড়া মাসখানেক আগে শহরের কৃষ্টপুর এলাকার হনুফা ও লাইলী হেরোইনসহ ধরা পড়েন। পরে জামিনে বেরিয়ে আবারো সেখানে শুরু করেছেন জমজমাট হেরোইন ব্যবসা। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশি ছত্রছায়ায় বছরের পর বছর এসব নারী ব্যবসায়ীরা দিব্যি মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশের দুর্বল চার্জশিটের কারণে এরা ক’দিন জেল খেটে জামিনে ছাড়া পেয়ে আগের ব্যবসাতেই মনোনিবেশ করছেন।
কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে আটক ব্যক্তিরা হেরোইন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এদের ধরা হয়েছে। মাদক আইনে এদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।