শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন
হানিফ উল্লাহ আকাশ,নেত্রকোনা : সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের ভাসাপাড়া এলাকার জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে এবার বোমা এবং বিস্ফোরকসহ বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার সকাল থেকে সেখানে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট, সোয়াট ইউনিট ও বোম ডিসপোজাল ইউনিট তল্লাশি চালায়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ শাহ আবিদ হোসেন ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি আসাদুল্লাহ চৌধুরী, বোম ডিসপোজাল ইউনিটের বোমা বিশেষজ্ঞ পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন এবং নেত্রকোনার পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ। অভিযানে রবিবার ৬টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা (আইইডি), ১টি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি, ২টি মার্শাল আর্ট ড্রেস, ২টি ফ্ল্লাশ লাইট, ৫টি এন্ড্রয়েড ফোন, ৭টি বাটন ফোন, ২টি হাই পাওয়ার দূরবীন, প্লাস্টিকের ২০টি ডামি রাইফেল, ১টি রাম দা, ১টি পাসপোর্ট, ২টি অত্যাধুনিক কম্পাস, ১টি ইলেক্ট্রিক করাত, ৩০টি বেল্ট, ১টি ল্যাপটপ, ১টি প্রিন্টার, ১টি নানচাকু ও ৬টি প্যাকেটবন্দী সিসি ক্যামেরা প্রভৃতি উদ্ধার করা হয়।
এর আগে শনিবার উদ্ধার করা হয় ১টি বিদেশী পিস্তল, ১৭ রাউন্ড গুলি, ২টি ম্যাগাজিন, ১টি হ্যান্ডকাপ ও ২টি ওয়াকিটকি। তল্লাশি শেষে বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা আশপাশের বাড়িঘরের লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে ছয়টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা (আইইডি) নিষ্ক্রিয় করে। ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ শাহ আবিদ হোসেন এক প্রেসব্রিফিংয়ে বলেন, ‘এ বাড়িটিতে ফাহিম ওরফে আরিফ নামের এক যুবকসহ কয়েকজন ভাড়া থাকতো। এই আরিফ গত ৫ জুন নরসিংদীর রায়পুরায় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়। ওই ঘটনার সূত্র ধরে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। তিনি বলেন, ‘প্রফেসর আব্দুল মান্নানের ফোনটি আজ বন্ধ রয়েছে। ঘটনার তার সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ‘তদন্তের স্বার্থে আপাতত এর বাইরে আর কিছু বলতে চাননি তিনি।
জানা গেছে, শনিবার দুপুরে প্রথম নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশ ভাসাপাড়া গ্রামের দোতলা বাড়িটিতে অভিযান শুরু করে। প্রথম দিনের অভিযানে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১৭টি গুলি, ২টি ওয়াকিটকি, ১টি হাতকড়া ও ১ বস্তা জিহাদি বই উদ্ধার করে। এরপর অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট ও সোয়াট টিম এসে রবিবার দ্বিতীয় দফা অভিযান চালায়। অভিযানের নেতৃত্ব কর্মকর্তারা বলেন, বাড়িটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এখানে যে ধরনের এক্সক্লুসিভ ডিভাইস পাওয়া গেছে তার সঙ্গে ২০১৭ সালে মোহাম্মদপুরে একটি জঙ্গি আস্তানায় উদ্ধার করা সরঞ্জামের মিল রয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ প্রতিদিনের কাগজকে বলেন, বাড়িটির ভিতরে ১৫-২০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়ার উপযোগী প্রশিক্ষণ পরিবেশ ছিল।
গ্রামের বাসিন্দারা জানান, নির্জন স্থানে প্রায় ২০ বছর আগে ওই বাড়িটি নির্মাণ করেন আটপাড়া উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার ড. আবদুল মান্নান। তিনি ডুয়েটের শিক্ষক ছিলেন। তিনি সেখানে একটি মহিলা কলেজ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা আর করেননি। বাড়ির ভেতরে থাকা দুটি বড় পুকুরে মাছ চাষ করা হয়। এ ছাড়া প্রাচীরের ভেতরে একটি আধা পাকা টিনের ছাউনি ঘর আছে। ভাড়া দেওয়ার পর ভাড়াটিয়ারা বাড়ির সীমানাপ্রাচীর আগের চেয়ে আরও দেড় ফুট উঁচু করেন। এর ফলে ওই বাড়ির কিছুই বাইরে থেকে দেখা যায় না। বাড়িটির নারকেলগাছ, আমগাছসহ সীমানাপ্রাচীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০টির মতো সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়। ওই বাড়িতে স্থানীয় কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। জানা গেছে, জেলা শহরের বনোয়াপাড়া এলাকাতেও প্রফেসর আব্দুল মান্নানের আরও একটি বাড়ি রয়েছে। তাতে একটি প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কার্যক্রম চলমান। ওই বাড়িতেও পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। এছাড়া বনোয়াপাড়ার নেওয়াজ নগর এলাকারও একটি বাড়ি পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে।