বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩৫ অপরাহ্ন

২৪ ব্যাংক হিসাবে ৩৬ কোটি টাকা লেনদেন

২৪ ব্যাংক হিসাবে ৩৬ কোটি টাকা লেনদেন

বিশেষ প্রতিনিধি : সাবেক সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিমের ২৪টি ব্যাংক হিসাবের খোঁজ পাওয়া গেছে। সবগুলোই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর খোলা। সর্বশেষ তথ্যানুসারে ওই অ্যাকাউন্টগুলোতে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা জমা ও উত্তোলনের তথ্য মিলেছে। বিপুল এই অর্থ তার আয়ের সঙ্গে পুরোপুরি অসঙ্গতিপূর্ণ। এ ছাড়া তার স্ত্রী গৃহিণী হলেও তার নামে ৭৪ লাখ টাকার সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে রাজধানীর বসুন্ধরার এন ব্লক, উত্তরা মডেল টাউনে ৫ কাঠা জমির ওপর বাড়ি, ধানমন্ডিতে আড়াই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও দুটি গাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে।

তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন তৈরি করছে দুদকের অনুসন্ধান টিম। যার আলোকে শিগগিরই মামলার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা  এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এখন পর্যন্ত সাবেক হুইপের বিরুদ্ধে যতটুকু দালিলিক প্রমাণ পাওয়া গেছে তা মামলা করার জন্য যথেষ্ট। দালিলিকভাবে হয়তো এসব সম্পদের মূল্য কম, তবে বাস্তবে শত কোটি টাকার বেশি বলেই জানা গেছে। বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যদিও বিদেশে টাকা পাচারের প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি কিংবা ওই তথ্য সময় সাপেক্ষ। এখন অনুসন্ধান টিমের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই দুদক আইনি ব্যবস্থা নেবে। সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিমের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে ৩৫ কোটি ৭১ লাখ ৪৯ হাজার টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লেনদেন হলো— ব্র্যাক ব্যাংকের তিনটি অ্যাকাউন্টে প্রায় দুই লাখ টাকা, এঙ্মি ব্যাংকের উত্তরা শাখায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের প্রধান শাখায় ১ কোটি ৯ লাখ, সোনালী ব্যাংকের সংসদ ভবন শাখায় ৩ কোটি ৪০ লাখ ৪৪ হাজার, দিনাজপুরের ট্রাস্ট ব্যাংকে ১২ কোটি ৪৪ লাখ ৩৮ হাজার, ইউসিবি ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখায় ২ কোটি ২০ লাখ, সিটি ব্যাংকে প্রায় ৩৮ লাখ, প্রাইম ব্যাংকের দিনাজপুর শাখায় ৬ লাখ ১ হাজার টাকা, যমুনা ব্যাংকের দিনাজপুর শাখায় ২০ লাখ টাকা ও আইএফআইসি ব্যাংকে ২৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে পাওয়া হিসাবগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে ইকবালুর রহিমের নিজ নামে ও তার প্রতিষ্ঠানের নামে চালু করা প্রায় সকল হিসাবই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর খোলা। ইকবালুর রহিমের স্ত্রী একজন গৃহিণী।

তার নামেও পৃথক আয়কর নথি খোলা রয়েছে। তার স্ত্রী নাদিরা সুলতানার প্রকৃত কোনো আয়ের উৎস নেই। তারপরও তার নামে ৭৪ লাখ ৮২ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে গত ২৮ আগস্ট দিনাজপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি ইকবালুর রহিমের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুদক। তার বিরুদ্ধে বসুন্ধরা, উত্তরায় ৫ কাঠা জমির ওপর বাড়ি, ধানমন্ডিতে ফ্ল্যাট, দুটি গাড়ি কেনার তথ্য পাওয়া যায় গোয়েন্দা অনুসন্ধানে। এ ছাড়া দিনাজপুরের উথরাইল মৌজা, পুচকুর মৌজা, রামপুর মৌজা ও জালালপুর মৌজায় তার নামে বিপুল পরিমাণ জমি থাকার সন্ধান মিলেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিম বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে তার ক্ষমতার অপব্যবহার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে নিজ নামে এবং পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন। দুদকের সদর দপ্তরের ৩ সদস্যের অনুসন্ধান টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছেন। দুদকের পরিচালক সৈয়দ তাহসিনুল হকের নেতৃত্বে টিমের অপর সদস্যরা হলেন— সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলী ও উপসহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান খান।

সূত্র জানায়, অনুসন্ধানকারী দল অনুসন্ধান পর্যায়ে ৯১ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ দেড় শতাধিক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র সংগ্রহ করেছে। অনুসন্ধান পর্যায়ে গত ২৮ অক্টোবর সাবেক এমপি ইকবালুর রহিম ও তার স্ত্রী নাদিরা সুলতানার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যদিও তিনি আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকেই পলাতক রয়েছেন। ধারণা করা হয় ইতোমধ্যে তিনি বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। এ বিষয়ে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। বর্তমানে নথিপত্র সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে। দুদকের অনুসন্ধান টিম প্রতিবেদন দাখিল করলে কমিশন আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2025 Protidiner Kagoj |