শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০০ অপরাহ্ন

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে দেশব্যাপী পাঁচ দিনের জনসংযোগ শুরু কাল

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে দেশব্যাপী পাঁচ দিনের জনসংযোগ শুরু কাল

নিউজ ডেস্ক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে মানুষের মনোভাব জানতে যৌথভাবে সারা দেশে জনসংযোগ করবে। আগামীকাল সোমবার থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা পাঁচ দিন এই জনসংযোগ কর্মসূচি চলবে। গতকাল শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। জনসংযোগ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশে লিফলেট ও সমাবেশ কর্মসূচিও পালিত হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি বিশ্বাস করে এই প্রোক্লেমেশন অব রেভ্যুলেশন বাস্তবায়ন ও ঘোষণা জাতীয় এবং ঐতিহাসিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এই অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের প্রত্যেক শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। আমাদের প্রত্যাশা এই ঘোষণাপত্রে জনমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।’ ৬ থেকে ১১ জানুয়ারি সারা দেশে জনসংযোগ করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘এ সময় আমরা লিফলেট বিতরণ, সমাবেশ এবং বিভিন্ন মাত্রায় জনসংযোগ করব। বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা কী, তারা কী দেখতে চায় এ প্রোক্লেমেশনে, সেটা শোনার জন্য আমরা মানুষের কাছে ছুটে যাব।

আগামী সপ্তাহ জুড়ে দেশের প্রতিটি জেলায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় ছাত্র-নাগরিক-কৃষক-শ্রমিক, সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে একযোগে জনসংযোগ চালাব। হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু নিজেই বলেছে, তারা জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে। তাই আমরা গত ৩১ ডিসেম্বরের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা থেকে বিরত থেকেছি। সরকার ঘোষণাপত্র নিয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেয়নি। আমাদের আহ্বান থাকবে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকার শিগগিরই কাজ শুরু করবে। অভ্যুত্থানে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন। সরকারকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’ আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ সরকার সব মানুষের টুটি চেপে ধরেছিল। আমরা প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কাছে ছুটে যেতে চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘ঘোষণাপত্র প্রণয়নে সরকারের কার্যক্রম এখনো দৃশ্যমান নয়। সরকার অবিলম্বে এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রণয়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ঘোষণাপত্র প্রণয়নে সব রাজনৈতিক দলের ইতিবাচক সাড়া ও সহযোগিতা রয়েছে। দৃষ্টিভঙ্গিগত কিছু পার্থক্য থাকলেও সবার মতামতের ভিত্তিতেই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ প্রমুখ।

বাংলাদেশের ইতিহাসের গতিপথ বদলে দেওয়া ২০২৪ সালের শেষ দিন মঙ্গলবার ‘মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচি’ ঘোষণা করে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। শহিদ মিনারের ঐ কর্মসূচি থেকেই ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের কথা ছিল। সেই প্রস্তুতি নিয়ে সারা দেশ থেকে ছাত্র-জনতাকে শহিদ মিনারে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এই ‘জুলাই প্রোক্লেমেশন’ হবে ‘আগামীর বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র’। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে এর মাধ্যমে ‘নাসসি বাহিনী’র মতো ‘অপ্রাসঙ্গিক’ ঘোষণা করা হবে। একই সঙ্গে ১৯৭২ সালের ‘মুজিববাদী’ সংবিধানের ‘কবর’ রচনা করা হবে। এই কর্মসূচি নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার মধ্যে গত রবিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষণাপত্রের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু এক দিনের ব্যবধানে সোমবার সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে একই ধরনের ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এরপর সোমবার গভীর রাতে জরুরি বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণা দেয়, অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, তারা তাতেই সমর্থন দেবে। এরপর নতুন বছরের প্রথম দিন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘জুলাই প্রোক্লেমেশন’-এর খসড়া তৈরির কাজ এখনো শুরু হয়নি।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2025 Protidiner Kagoj |