বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৮ অপরাহ্ন

মাদকের ভয়াল থাবা থেকে দেশ বাঁচানো জরুরি

মাদকের ভয়াল থাবা থেকে দেশ বাঁচানো জরুরি

সরকার আসে আর যায়। অনেক কিছু পরিবর্তন হয়। কিন্তু মাদক ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগ রাঘববোয়াল রয়ে যায় রাজার হালে। রাজনৈতিক রঙ পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে পাল্টে যায় তাদের রুপ। যেখানে যা সাজতে হয় তাই সাজতে তারা সিদ্ধহস্ত। অনেকেই মাদকের তিলশমায় এখন সমাজের কথিত ভিআইপি সিআইপি।

গোয়েন্দা তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ মাদক সম্রাটরা এখনো রয়েছে বহাল তবিয়তে। মাঝে মাঝে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মাদক ব্যাবসায়ী আটক হলেও আইনের ফাঁকপোকর তৈরি করে এরা বের হয়ে বিভিন্নবেশে দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। একই সাথে তাদের রয়েছে নিজস্ব সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী। কেউ বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাদের সর্বনাশ করে মাদক সম্রাটরা। ফলে সর্বনাশা মাদক এখন দেশব্যাপী আরো ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বগ্রাসী এ মরণ নেশার কারণে দেশের লাখ লাখ মানুষ বিশেষ করে তরুণ ও যুব সমাজ বিপথগামী হয়ে পড়ছে। তবে শুধু তরুণরা নয়, এখন কিশোর, এমনকি কিশোরীরাও মাদকাসক্ত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়েও মিয়ানমার থেকে সড়ক ও নৌ পথে ইয়াবাসহ নানা মাদকদ্রব্য দেশে ঢুকছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের তরুণ ও যুব সমাজকে। মাদকের বিষাক্ত ছোবলে অকালে ঝরে পড়ছে তাজা প্রাণ। শূন্য হচ্ছে মায়ের বুক। অভিভাবকরা আতঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত কখন মাদকের নেশার জালে আটকা পড়ে তাদের প্রিয় সন্তান।

আগে মাদক বলতে ছিল প্রধানত গাঁজা ফেন্সিডিল। এখন সে সঙ্গে যোগ হয়েছে আরো অনেক নাম। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর মাদক হচ্ছে ইয়াবা ও আইস। জানা গেছে শারীরিকভাবে যেকোনো মাদকের ক্ষতি মারাত্মক। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কেউ দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে তার মধ্যে মানবিক গুণাবলি বলে কিছু অবশিষ্ট থাকে না। খুন-খারাবিসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তারা করতে পারে না। অথচ ভয়ংকর মাদক ইয়াবা এখন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। এর নেশা যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে যায় তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই। এ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে সন্তানকে রক্ষার জন্য অভিভাবকদের সঙ্গে পুরো জাতি আজ শঙ্কিত।

সাধারণতঃ কোনো দ্রব্য সহজলভ্য হলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বা মানুষের হাতে চলে যায়। বর্তমানে দেশে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে এই মাদক। নানা কৌশলে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রচুর মাদক ঢুকছে। দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন হেরোইন, আফিম, প্যাথেডিন, ইয়াবা, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি হয়। এর মধ্যে ইয়াবা বেশ সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। ইয়াবা এখন মুড়িমুড়কির মতো বিক্রি হচ্ছে দেশে। এই ইয়াবা আসে মূলত মিয়ানমার থেকে। সীমান্তে তার চোরাচালান আমরা আটকাতে পারছি না। যে কারণে ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে এটি দ্রুত। এর খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইয়াবা হেরোইনের চেয়েও ক্ষতিকর। এটা এক ধরনের যৌন উত্তেজক মাদক। ইয়াবা সেবনের ফলে সাময়িক শারীরিক উদ্দীপনা বাড়লেও কমতে থাকে জীবনীশক্তি। কিন্তু সমাজ, দেশ ও জাতিকে সুস্থ রাখতে হলে সর্বনাশা এ কারবার জরুরিভিত্তিতে বন্ধ করা প্রয়োজন। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে মাদকদ্রব্যের প্রাপ্তি যাতে সহজলভ্য না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

যে কোনো মূল্যে ঠেকাতে হবে মাদকের অনুপ্রবেশ। দেশেও যাতে মাদকদ্রব্য উৎপাদন হতে না পারে সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে হবে। দুঃখজনক হচ্ছে, মাঝে-মধ্যে ছোটখাট মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের চালান ধরা পড়লেও কুশীলবরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। অন্যদিকে মাদক ব্যবসায় যুক্ত থাকার অভিযোগে যাদের আটক করা হয়, তারাও কয়েক দিনের মধ্যেই জামিনে বেরিয়ে এসে আবার ওই কারবারে যুক্ত হয়। অভিযোগ রয়েছে, সমাজের প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তি এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের টিকিটি স্পর্শ করতে পারে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। মাদক সিন্ডিকেট যতই শক্তিশালী হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মাদক তথা মাদকাসক্তি প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে মাদকদ্রব্য ও মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত মাদকদ্রব্যের অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করা, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। এছাড়া বেকারদের কর্মসংস্থান ও স্কুল-কলেজে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে শিক্ষা দান এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। মাদক নির্ভরশীল ব্যক্তির চিকিৎসার সব পর্যায়ে পরিবারের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রয়োজন। মাদক নির্ভরশীল ব্যক্তি স্বভাবতই চিকিৎসা নিতে চায় না। কারণ, সে বুঝতেই পারে না, তার চিকিৎসার প্রয়োজন। তাই দেশের স্বার্থে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে আমাদের।

লেখক :

ফরিদুল মোস্তফা খান 
সম্পাদক প্রকাশক স্বাধিকারী ও মুদ্রাকার দৈনিক কক্সবাজারবাণী

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2025 Protidiner Kagoj |