শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৪৯ অপরাহ্ন
নিউজ ডেস্ক: পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতের এজলাস কক্ষ পুড়ে যাওয়ায় পিলখানার বিস্ফোরক মামলার বিচার কাজ কেরাণীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশের অস্থায়ী আদালত ভবনে হবে।
রোববার রাতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ আদেশ দিয়েছে।
পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে ঢাকার নিউমার্কেট থানায় করা মামলার বিচার কাজের জন্য ২০১০ সালের ২৮ ডিসেম্বর আলিয়া মাদরাসা মাঠের অস্থায়ী আদালত ভবনকে অস্থায়ী আদালত ঘোষণা করে আদেশ দেওয়া হয়েছিল।
সেটি বাতিল করে মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ নতুন আদেশে বলেছে, ঢাকা জেলার কেরাণীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশের অস্থায়ী আদালত ভবনকে অস্থায়ী আদালত ঘোষণা করা হল।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
সে ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে আছে।
মাদরাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে বিস্ফোরক মামলাটির শুনানি চলছিল।
আদালত বসানোর প্রতিবাদে ৮ জানুয়ারি রাতভর আন্দোলনের পরদিন সকালে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মধ্যেই রাতে আগুনে পুড়ে যায় অস্থায়ী আদালতের এজলাসসহ বিভিন্ন অবকাঠামো।
এ কারণে ৯ জানুয়ারি পিলখানার ঘটনায় করা বিস্ফোরক মামলার শুনানি হয়নি।
সেদিন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বোরহান উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে বিচারকাজ করা সম্ভব নয়।”
মামলার শুনানির দিন পরে ঠিক করা হবে বলেছিলেন তিনি।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন।
অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজও শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।
ক্ষমতার পালাবদলের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি উঠছে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
এই হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার।