বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৫৭ অপরাহ্ন
আবুল হাসনাত মিনহাজ, চট্টগ্রাম : মোবাইল ফোন থেকে নির্গত রশ্মি শিশুদের দৃষ্টিশক্তির ভীষণ ক্ষতি করে। যেসব শিশু দৈনিক পাঁচ-ছয় ঘণ্টা মোবাইল ফোনে ভিডিও গেমস খেলে, খুব অল্পবয়সে তাদের চোখের সমস্যা হবে। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যখন মোবাইল ফোনকে সিগারেটের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
আজকাল মোবাইলে কার্টুন কিংবা গেমসে ভোলানো হয় শিশুদের। ফলে মোবাইল ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসে অতিমাত্রায় আসক্ত হয়ে পড়ছে তারা। অথচ এক সময় রূপকথার গল্প শুনিয়ে শিশুদের খাওয়ানো কিংবা ঘুম পাড়ানো হতো।শিশুর বায়না পূরণে মোবাইল গেমস দেখা বা গান শোনা যেন এক ধরনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। মোবাইল ফোনের বিকিরণের কারণে অন্ধত্বসহ চোখে ভয়াবহ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে শিশুদের ।ইউটিউবে বাচ্চারা শিশুতোষ বিভিন্ন ভিডিও দেখতে দেখতে অনেক সময় ঢুকে পড়ে নিষিদ্ধ সাইটে। পর্ণগ্রাফিতে আসক্তিও হয় এভাবে অনেকের। তবে আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে শিশু-কিশোর, প্রাপ্তবয়স্করা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইন্টারনেট ব্যবহার করে। অতিমাত্রায় ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য জরুরি কাজগুলো বাধাগ্রস্ত হয়। ইন্টারনেটের প্রতি নেশাগ্রস্ত হওয়ার জন্য খাওয়া, ঘুমানো, গোসল, লেখাপড়া, বাসার সদস্যদের সময় দিতে ভুলে যায়। যখন কোনো মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারলে অস্থির হয়ে ওঠে, এই ধরনের পরিস্থিতিকে বলে ইন্টারনেট অ্যাডিকশন ডিস-অর্ডার।
আরও পড়ুন: ভৈরবে জনদুর্ভোগ নিরসনে রাস্তা থেকে কাচা বাজার উচ্ছেদ
পেশায় একজন ডাক্তার নাসরীন বেগম জানান, তার এগারো বছরের ছেলে রাইহান একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পড়ছে। সে তার বন্ধু-বান্ধব বা কাজিনদের সাথে ব্যস্ত থাকে অনলাইনে টিকটক দেখা, নানান গেমস নিয়ে।মাঠে গিয়ে খেলায় তাদের উৎসাহ নেই। আমরাও সময়ের অভাবে নিয়ে যেতে পারছি না। গৃহিণী ফাতেমা বেগম জানান নিজে একসময় নজরুল সংগীত গাইতেন।তার দুই সন্তানকেও গান বা আবৃত্তির মত কোনও চর্চায় ব্যস্ত রাখতে চেয়েছেন। ক্রিকটে বা ফুটবল ক্লাবেও ভর্তি করতে চেয়েছেন । কিন্ত এসব বিষয়ে সন্তানদের আগ্রহ নেই। লেখাপড়া, আর ঘুমের সময়টুকু বাদ দিয়ে তারা ব্যস্ত থাকে মোবাইল আর কম্পিউটার নিয়ে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, কোমলমতি শিশুদের এই মোবাইল আসক্তি একদিকে যেমন মেধা ধ্বংস করছে, তেমনি আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে কর্মস্পৃহা। মাত্রাতিরিক্ত হারে সেলফোন ব্যবহারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ। তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে বাস্তবিক জগতের চেয়ে ভার্চুয়াল জগতের প্রতি মোহ ও আসক্তি বাড়ছে শিশুদের। ঘন্টার পর ঘন্টা তারা বুঁদ হয়ে থাকছে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসে
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু কিশোর ও পারিবারিক বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক জানান,এই প্রযুক্তি নির্ভরতা এবং অনলাইন আসক্তি শিশুদের জীবনে বড় ধরনের দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, এখান থেকে অনেকসশয় নিষিদ্ধ সাইটগুলোর সাথেও যোগাযোগ ঘটে যাচ্ছে শিশুদের।এ ধরনের আসক্তি শিশুদের সামাজিক দক্ষতা নষ্ট করছে।শিশুদের শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যা তৈরি হয়।একটানা দীর্ঘসময় মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে একদিকে চোখের ক্ষতি হচ্ছে।অন্যদিকে তৈরি হচ্ছে মানসিক বিভিন্ন সমস্যা। শিশুদের কল্পনাশক্তি, চিন্তা শক্তিও কমে যাচ্ছে।