বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি তৈরি করে চলেছে দেশের বৃহৎ টেক্সটাইল শিল্পগোষ্ঠী নোমান গ্রুপ। ৮০ হাজারের বেশি শ্রমিকের জীবন ও জীবিকার ভরসা হয়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠান শুধু কর্মসংস্থানই নয়, প্রতিবছর রপ্তানি আয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দিয়েও দেশের অর্থনৈতিক ভিতকে করেছে দৃঢ় ও স্থিতিশীল। চার দশকের অভিজ্ঞতা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন এবং শতভাগ কমপ্লায়েন্স মেনে পরিচালনার ফলে দেশে-বিদেশে তৈরি হয়েছে নোমান গ্রুপের অগাধ সুনাম।
গাজীপুরের টঙ্গী ও শ্রীপুরে নোমান গ্রুপের রয়েছে ৩৪টি আধুনিক টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস কারখানা। এসব কারখানায় বর্তমানে সরাসরি কর্মরত রয়েছে প্রায় ৮০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী, যারা নির্ভরতার সঙ্গে নিজেদের কর্মজীবন গড়ে তুলেছেন এখানে। শ্রমিকবান্ধব নীতিমালার কারণে নোমান গ্রুপের কারখানায় কখনও শ্রমিক অসন্তোষ কিংবা বিক্ষোভ হয়নি—যা দেশের শিল্পখাতে এক বিরল দৃষ্টান্ত।
নিয়মিত বেতন-ভাতা, সময়মতো ওভারটাইম, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মস্থলে চিকিৎসাকেন্দ্র, শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার সুবিধাসহ কর্মীদের জন্য রয়েছে এক মানবিক কর্মপরিবেশ। শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিশ্চিত করার উদাহরণ তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
নোমান গ্রুপের পণ্য বিশ্বের ৮০টির বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের ৯০৩টির বেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান নোমান গ্রুপের তৈরি পোশাক, হোমটেক্স ও টেরিটাওয়েল পণ্য আমদানি করছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ১.৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় করেছে—যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
নোমান গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস টানা ১২ বছর জাতীয় রপ্তানি ট্রফি অর্জন করেছে। এছাড়া নোমান টেরিটাওয়েলসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রপতি শিল্প পদক অর্জন করেছে বহুবার। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা দীর্ঘদিন ধরে সিআইপি (শিল্প ও রপ্তানি) হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
শুধু শিল্প নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রেও নোমান গ্রুপের অবদান প্রশংসনীয়। কারখানার আশপাশে সড়ক সংস্কার, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান, স্থানীয় জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। পরিবেশ সুরক্ষায় নেয়া হয়েছে আধুনিক ও টেকসই ব্যবস্থা। জিরো ওয়েস্ট নীতি, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া, বর্জ্য শোধনাগার, কারখানায় বৃক্ষরোপণ ও সবুজায়নসহ রয়েছে পরিবেশ সচেতন নীতি।
দেশীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ নিয়মিত পরিশোধ করে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক ক্ষেত্রেও গড়েছে বিশ্বাসযোগ্যতা। প্রায় ১৫০০ বিঘা জমি কিনে নিজস্ব বিনিয়োগে কারখানা স্থাপন করেছে তারা—কোনো জমি দখল বা আইনি জটিলতার অভিযোগ নেই।
তবে দেশের শিল্প ও অর্থনীতির এই সাফল্যে ঈর্ষান্বিত একটি মহল সম্প্রতি নোমান গ্রুপের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দেশের বৃহৎ একটি শিল্পগোষ্ঠীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে কর্মচারীরা এটিকে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।
নোমান গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম বলেন, “দেশের মানুষ ও শ্রমিকরাই আমাদের আসল শক্তি। আমরা তাদের সম্মানের সঙ্গে পাশে থাকতে চাই। বিদেশে নয়, আমরা দেশের মাটিতেই সম্পদ গড়েছি। এই দেশই আমাদের ভবিষ্যৎ।”
দেশের বেসরকারি শিল্প উন্নয়নের যাত্রায় নোমান গ্রুপ এখন একটি উদাহরণ। কর্মসংস্থান, রপ্তানি আয় ও সামাজিক দায়বদ্ধতার এই সমন্বিত সাফল্যই আজ নোমান গ্রুপকে দেশের টেক্সটাইল খাতের অন্যতম রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :