সরকারি ড্রাইভারের নারি কেলেঙ্কারি আড়াল করতে সাংবাদিকদের নামে সাজানো মামলা

বিশেষ প্রতিনিধি , প্রতিদিনের কাগজ

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:২৫ এএম

বান্দরবানের লামা উপজেলায় উপজেলা পরিষদের ড্রাইভার জিয়াউর রহমানের নারী কেলেঙ্কারি ও মদ্যপানের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তাঁকে বাঁচাতে উঠে পড়ে লেগেছেন লামা থানার ওসি তোফাজ্জল হোসেন। থানার ওসির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় প্রকৃত অপরাধীকে রক্ষা করতে উল্টো ৫ জন সাংবাদিকসহ ১১জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামি হলেন দৈনিক আজকের বসুন্ধরা পত্রিকার রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধ সাংবাদিক মোহাম্মদ সুমন, দৈনিক আমার সংগ্রাম, রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি আদিল আহামেদ, দৈনিক এশিয়াবাণী পত্রিকার প্রতিনিধি মোহাম্মদ আয়ুব আলী ও আনসার বিডিপি সদস্য মুক্তা। মামলা নং- ১০/৫৪ তারিখ- ১৪-৬-২০২৫।

মামলার বাদী হয়েছেন উপজেলা পরিষদের ড্রাইভার স্ত্রী হাছিনা আক্তার। স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলা পরিষদের ড্রাইভার জিয়ার স্ত্রীকে বাদী করে ওসি তফাজ্জল হোসেন তদন্ত ছাড়াই চাঁদাবাজির মামলা নথিভুক্ত করেন এবং প্রভাব খাটিয়ে সাংবাদিককে জেলে পাঠান। এতে এলাকায় চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি ড্রাইভার জিয়ার কিছু আপত্তিকর ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, লুঙ্গি ও খোলা শার্ট পরে সরকারি রেস্টহাউজের বারান্দায় বের হন জিয়া।

সাংবাদিকের ক্যামেরা টের পেয়ে দ্রুত ভেতরে ঢুকে পড়েন। কিছুক্ষণ পর প্যান্ট পরে বের হলেও পরে পিছনের দরজা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এসময় নিজের মুখেই মদপানের স্বীকারোক্তি দেন তিনি। কিন্তু মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গাড়ির চাকা মেরামতের কাজে রেস্টহাউজে গিয়েছিলেন জিয়া। ভিডিও ফুটেজের সঙ্গে যার কোনো মিল নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওসির সাথে টাকার লেনদেন করে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে কৌশলে জিয়া তার স্ত্রীকে দিয়ে মামলা করিয়েছেন।

এদিকে জিয়া ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মাদক ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও সাধারণ মানুষ। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল চারটায় উপজেলা পরিষদ প্রেসক্লাব চত্বরে ‘জনসাধারণ ও লামা কলেজ সচেতন ছাত্র জনতা’র ব্যানারে পৃথক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে আইজিপি, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগীর স্বজন ও সচেতন মহল। অভিযোগে বলা হয়, লামা পৌরসভার টিএন্ডটি পাড়ার সরকারি কোয়ার্টার ও জেলা পরিষদের রেস্টহাউজে দীর্ঘদিন ধরে মাদকসেবন, যৌন ব্যবসা, গান-বাজনা ও অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে জিয়া ও তার সহযোগীরা। ৪মে স্থানীয়রা হাতেনাতে ধরলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদকারীদের মারধর, প্রাণনাশের হুমকি এবং সরকারি পানির লাইন থেকেও প্রতিবেশীদের পানি নিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ আমলে চাকরি পাওয়া জিয়াউর রহমান অল্প কয়েক বছরের ব্যবধানে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে যান। তিনি লামার মিরিঞ্জা এলাকায় ‘ভ্যালি রিসোর্ট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’ নামে বিলাসবহুল রিসোর্ট গড়ে তোলেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেখানে নিয়মিত বসে মদ ও জুয়ার আসর। তবে অভিযোগের বিষয় জিয়াউর রহমান সাংবাদিক কে বলেন, ভাই সাংবাদিক সুমনের কথা বাদ দেন আপনার জন্য কি করা লাগবে বলেন। কত টাকা দিতে হবে বলেন।স্থানীয়রা বলছে, ড্রাইভার জিয়ার অপরাধ আড়াল করতে ওসি তোফাজ্জল হোসেনের মদদ ন্যায়ের পরিপন্থী। সাংবাদিককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপরও সরাসরি আঘাত।

তারা দাবি করেন—জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দ্রুত সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসাথে সরকারি রেস্টহাউজে মদ্যপান, নারী কেলেঙ্কারি ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। এই বিষয়ে লামা থানার ওসি তোফাজ্জল হোসেনকে জিজ্ঞেস করা হলে,ওসি বলেন সাংবাদিক সুমনের বিষয়টি আমরা ইতিমধ্যে তদন্ত করেছি এবং আরো অধিকতর তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন। সাংবাদিক নেতা ফয়সাল হাওলাদার জানান, এই সাজানো মামলা দ্রুত প্রত্যাহার না করলে সারাদেশে কর্মসূচি দেওয়া হবে। প্রয়োজনে ওসিসহ ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ঝাড়ু-জুতা মিছিল করা হবে।

Link copied!