ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে মো. আবদুল্লাহ (২৮) নামে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত এসআই মহিম উদ্দিনকে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সাসপেন্ড ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে মৃত ওই যুবকের লাশের ময়না তদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মৃত ওই যুবক পার্শ্ববর্তী বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালি ইউনিয়নের বাহেরচর (বাড়াইলচর) গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওবায়দুর রহমান সোমবার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ সুপার (এসপি) এহতেশামুল হক খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ হেফাজতে এ আলোচিত মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এলাকায় এখন আলোচনার ঝড় বইছে। জানা যায়, সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়াইল গ্রামে একটি চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্দেহভাজন হিসেবে সলিমগঞ্জ পুলিশ আব্দুল্লাহকে আটক করে মারধর করে।
পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় সলিমগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে সোপর্দ করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ফাঁড়িতে সোপর্দ করার পর পুলিশ তার ওপর আরো নির্যাতন চালায়। এতে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ছোট্ট এই চুরির ঘটনার সন্দেহভাজন হিসেবে সলিমগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে আবদুল্লাকে চার দিন আটকে রাখা হয়। অথচ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মহিম উদ্দিন এ ঘটনা নবীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কিংবা থানার ওসিকে অবগত করেনি।
এদিকে আবদুল্লাহর পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের বর্বর নির্যাতনে আব্দুল্লাহর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে তাকে সলিমগঞ্জ অলিউর রহমান জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিন দিন চিকিৎসা চলার পর অবস্থা আরো খারাপ হলে গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আব্দুল্লাহর মৃত্যু হয়।
এদিকে আব্দুল্লাহর মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে আজ সোমবার সকালে সলিমগঞ্জ ফাঁড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। ঘটনার পর পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে তার নির্দেশে সলিমগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. মহিউদ্দিনকে সাসপেন্ড ও গ্রেপ্তার করে আজ দুপুরের পর আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই সাকিল মিয়া বাদী হয়ে আজ সোমবার নবীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সলিমগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মহিউদ্দিন, তবি মিয়া, আলামিন, আয়নাল হক এ চারজনের নাম উল্লেখ করে আরো ২০–২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এ বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওবায়দুর রহমান সন্ধ্যায় বলেন, ‘এ বিষয়ে মামলা নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত এসআই মহিম উদ্দিনকে সাময়িক সাসপেন্ড ও গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে আরো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :