সংগীতশিল্পী জুবিন গার্গর মৃত্যু রহস্য নিয়ে জল ঘোলা হয়েই চলেছে। এবার তার ব্যান্ড সদস্য এবং মূল সাক্ষী শেখর জ্যোতি গোস্বামী জুবিনকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ এনেছেন।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনযায়ী, জুবিনের ব্যান্ড সদস্য শেখরজ্যোতি গোস্বামী পুলিশের জেরায় অভিযোগ করেছেন, প্রয়াত শিল্পীর ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা এবং অনুষ্ঠানের সংগঠক শ্যামকানু মহন্ত গায়ককে বিষ দিয়ে হত্যা করতে পারেন।
তিনি বলেন, তার মৃত্যুকে দুর্ঘটনাজনিত বলে ধামাচাপা দেওয়ার ষড়যন্ত্রও করে থাকতে পারেন। জেরায় শেখরজ্যোতি দাবি করেন, সিদ্ধার্থ শর্মার অনেক আচরণই সন্দেহজনক ছিল। শেখরজ্যোতি নাকি নিজেই সব ড্রিঙ্কসের আয়োজন করেছিলেন। অন্য কাউকে সেই কাজ তিনি করতে বারণ করেছিলেন।
এদিকে জুবিনের মৃত্যুর দিনে বোটের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়েছিলেন সিদ্ধার্থ। মাঝসমুদ্রে গিয়ে বোটটি টালমাটাল অবস্থা হয়েছিল।
পুলিশকে শেখরজ্যোতি বলেছেন, যখন জলে নেমে জুবিন গর্গ নিশ্বাস নিতে পারছিলেন না, তখন নাকি সিদ্ধার্থ চেঁচিয়ে বলছিলেন, ‘যেতে দাও, যেতে দাও’। এদিকে যখন জুবিন গার্গের নাক-মুখ দিয়ে যখন ফেনা জাতীয় জিনিস বেরোচ্ছিল, তখন সিদ্ধার্থ বারবা বলছিলেন, এটা অ্যাসিডের কারণে হয়ে থাকতে পারে।
শেখরজ্যোতি আরও জানান, বোটের কোনও ভিডিও বাইরের লোককে দেখাতে বা পাঠাতে বারণ করেছিলেন সিদ্ধার্থ।
এদিকে এরই মাঝে সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্স গায়কের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ভারতীয় হাইকমিশনের কাছে হস্তান্তর করেছে।
এতে জানানো হয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টের একটি কপি এবং জুবিন গর্গের মৃত্যুর প্রাথমিক তথ্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ভারতের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০তম বার্ষিকী এবং ভারত-আসিয়ান পর্যটনবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন ৫২ বছর বয়সি জুবিন গার্গ।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের একটি দ্বীপের কাছে সাঁতার কাটার (স্কুবা ডাইভিং) সময় ডুবে গিয়ে তার মৃত্যু হয় বলে প্রাথমিক ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল।
রিমান্ড মেমোর বরাত দিয়ে নিউজ ১৮ বলেছে, মূল সাক্ষী শেখর জ্যোতি গোস্বামী বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ করেছেন।
গোস্বামী দাবি করেন, যখন জুবিনের মুখ ও নাক দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল, তখন ম্যানেজার শর্মাকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ‘যাব দে, যাব দে’ (যেতে দাও)। শর্মা তখন জরুরি চিকিৎসাসহায়তা না দিয়ে কেবল ‘অ্যাসিড রিফ্ল্যাক্স’ বলে উড়িয়ে দেন। সাক্ষীরা মনে করছেন, এই অবহেলা জুবিনের মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করেছে।
গোস্বামী জোর দিয়ে বলেন, জুবিন ছিলেন ‘দক্ষ সাঁতারু’। ফলে তার স্বাভাবিকভাবে ডুবে যাওয়ার কোনো কারণ ছিল না। গোস্বামী আরও অভিযোগ করেছেন, শর্মা তাকে ইয়ট দুর্ঘটনার কোনো ভিডিও ফুটেজ শেয়ার না করার নির্দেশ দিয়ে প্রমাণ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
জুবিন গার্গের মৃত্যুসংক্রান্ত ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট চারজনকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন—জুবিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা, ইভেন্ট ম্যানেজার শ্যামকানু মহন্ত, ব্যান্ড সদস্য ও মূল সাক্ষী শেখর জ্যোতি গোস্বামী এবং আরেকজন সহশিল্পী (ব্যান্ড সদস্য)।
আপনার মতামত লিখুন :