চট্টগ্রাম বন্দরে স্ব-পদে বহাল 'আওয়ামী দোসর' সেতুর বেপরোয়া কাণ্ড: সহকর্মীকে হুমকির অভিযোগ

কে এম ফোরকান , নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৬ অক্টোবর, ২০২৫, ০৩:২২ পিএম

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক বিভাগের প্রধান সহকারী রফিকুল ইসলাম সেতুর বিরুদ্ধে এক সহকর্মীকে লাঞ্ছিত করা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারী ব্যক্তি বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানিয়েছেন। রফিকুল ইসলাম সেতুকে 'আওয়ামী দোসর' হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগও উঠেছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা এক ভুক্তভোগীর অভিযোগ অনুযায়ী, গত ২৯/০৯/২০২৫ইং তারিখে তিনি আয়কর সংক্রান্ত কাজের জন্য বন্দর ভবনে আসেন। কাজ শেষে ট্রাফিক বিভাগের শিপিং শাখায় তাঁর পূর্ব পরিচিত এক সহকর্মীর সঙ্গে পরামর্শ করে কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় রফিকুল ইসলাম সেতু তাঁকে অমার্জিত ভাষায় ডেকে বলেন, "চাকরি ঠিক মতে করিস। মানুষকে পানি নিয়ে কোন কষ্ট দিবি না।"

এই কথার প্রতিবাদ করলে সেতু আরও আগ্রাসী হয়ে হুমকি দিয়ে বলেন, "আমি কে তুই জানস? তোকে যেভাবে বলেছি সেভাবে করবি, তোর অফিসারের সাথে আমার কথা বলার টাইম নাই।"

ভুক্তভোগী মহসিন যখন জানান যে তিনি অফিসারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবেন, তখন রফিকুল ইসলাম সেতু চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে তাঁকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করার জন্য এগিয়ে আসেন এবং অকথ্য ও অমার্জিত ভাষায় গালিগালাজ করেন। ভুক্তভোগী শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করার কথা বললে সেতু আরও উত্তেজিত হয়ে বলেন, "তুই আমাকে শৃংখলা শিখাচ্ছোস, তুই কিভাবে চাকরী করস আমি দেখে নিবো।"

ঘটনার সময় শিপিং শাখার অন্যান্য সকলে এগিয়ে এসে সেতুকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। ভুক্তভোগীর অভিযোগ অনুযায়ী, শিপিং শাখার সকলে এবং নিম্নমান বহীঃ সহকারী তারেক এই সম্পূর্ণ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।

রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্ব-পদে ১২ বছর বহাল: অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম সেতু 'আওয়ামী দোসর' হিসেবে পরিচিত এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকার আমলে তাঁর সাথে প্রভাবশালী নেতাদের সাথে সখ্যতা ছিল। চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা সেতু তৎকালীন আওয়ামী লীগের এক নেতার সুপারিশে চাকরি পান এবং বিগত ১২ বছর ধরে বহাল তবিয়তে একই পদে কর্মরত আছেন।

ঘুষ বাণিজ্য ও অবৈধ সম্পদ: 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সহকর্মী অভিযোগ করেছেন যে সেতু শীপ হ্যান্ডেলিং/বার্থ অপারেটর লাইসেন্স, শীপিং লাইসেন্স নিয়ে ঘুষ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ায়ও তাঁর ঘুষ লেনদেন ও অনিয়মের বিষয়টি 'ওপেন সিক্রেট'।

বন্দর সূত্র জানা যায়, ২০২৪ সালে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে ঢাকা পানগাঁও বন্দরে বদলি করা হয়েছিল, কিন্তু ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক এনামুল করিমের আস্থাবাজন হওয়ায় তাঁর বদলি থেমে যায়। এনামুল করিমের কথিত ক্যাশিয়ার এর বিষয়টি সবার কাছে "ওপেন সিক্রেট" তাঁর আশ্রয়ে এখনো চট্টগ্রাম বন্দর ভবনেই কর্মরত আছেন।

অভিযোগের বিষয়ে রফিকুল ইসলাম সেতুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমেই গণমাধ্যমকর্মীকে পরিচালক ট্রাফিক (এনামুল করিম) এর অফিসে নিয়ে যান। পরিচালক এনামুল করিম প্রথমে গণমাধ্যমকর্মীর কাছে এখানে আসার জন্য বন্দর সচিবের অনুমতি আছে কিনা, সেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন। দীর্ঘ আলোচনার পর পরিচালক কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি বলে জানান।

পরবর্তীতে অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম সেতু বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীর মাধ্যমে নিউজ না করার শর্তে অনৈতিক সুবিধা ও টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন, সংবাদ প্রকাশ করলে তার বড় ধরনের ক্ষতি হবে। সংবাদ প্রকাশ করলে তার ক্ষতি হবে। রফিকুল ইসলাম সেতুর লাঞ্ছনার শিকার কর্মী বর্তমানে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস সহ কর্মস্থলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি কোনো আওয়ামী দোষর এর সাথে কোনো ধরণের সংঘাতে জড়াতে চান না বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন।

বন্দর কর্তৃপক্ষের একজন উচ্চমান সহকারীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সহকর্মীকে লাঞ্ছিত করা, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং নিয়ম-বহির্ভূতভাবে বদলি ঠেকানোর মতো গুরুতর অভিযোগগুলো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।

Link copied!