নোয়াখালী জেলার এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে এক অপ্রত্যাশিত বাস্তবতা সামনে এসেছে—পুরো জেলার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে হাতিয়া উপজেলা। শিক্ষা নিয়ে যেই দ্বীপ একসময় গর্ব করতো “জ্ঞানই শক্তি”, সেই হাতিয়াতেই এখন হতাশা, কান্না আর দায় এড়ানোর রাজনীতি।
একসময় হাতিয়ার তরুণরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সুনাম কুড়িয়েছিলো মেধা ও ফলাফলের জন্য। আজ সেই হাতিয়াই জেলার নিচের সারিতে। প্রশ্ন উঠছে—এ দায় কার? শিক্ষক, প্রশাসন, নাকি রাজনীতি?
যদি এখনই জবাবদিহি না আসে, তবে হাতিয়ার শিক্ষা হয়তো পরিণত হবে আরেকটি ‘হারানো আলোর দ্বীপে’।
এবারের পরীক্ষায় হাতিয়া উপজেলার গড় পাশের হার মাত্র ৪৮.৬ শতাংশ, যা জেলার সর্বনিম্ন। অন্যদিকে, সদর, বেগমগঞ্জ ও চাটখিল উপজেলায় পাশের হার ছিলো গড়ে ৭৫ শতাংশের ওপরে। হাতিয়ার বেশ কয়েকটি কলেজে একাধিক বিভাগ থেকে শতভাগ ফেলের ঘটনাও ঘটেছে।
দেখা যায়, দ্বীপের একমাত্র দ্বীপ সরকারি কলেজ যেখানে সব বিভাগে ৪৭৬ জন পরীক্ষা দিয়ে ফেল ৪০২ জন!
স্থানীয় অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষা ব্যবস্থার এই ভেঙে পড়ার পেছনে দায়ী রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ, অনিয়মিত ক্লাস ও শিক্ষকদের উদাসীনতা।
কলেজপড়ুয়া ছাত্রী সাদিয়া আফরিন বলেন, আমরা সারা বছর ক্লাস পাইনি, শিক্ষকরা রাজনীতি আর কোচিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। পরীক্ষার আগে এসে ১৫ দিনে পুরো সিলেবাস শেষ করা অসম্ভব।”
অকৃতকার্য একজন ছেলের বাবা জানান, বর্তমানে কলেজে রাজনীতি চলে, পড়াশোনা না। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে।
অনেকজন অভিভাবক বলেন, হাতিয়ার শিক্ষাব্যবস্থায় দলীয় প্রভাব ভয়াবহভাবে প্রবেশ করেছে। কলেজ পরিচালনা কমিটি থেকে শুরু করে সব জায়গায় চলছে রাজনৈতিক দখলবাজি।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন রাজনৈতিক আশ্রয়ে চলছে। যারা যোগ্য তারা বঞ্চিত, আর যাদের রাজনৈতিক ‘ব্যাকিং’ আছে তারা পদে পদে সুবিধা নিচ্ছে। এই অবস্থায় শিক্ষার মান উন্নয়ন অসম্ভব।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, হাতিয়ার শিক্ষাক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে ‘শিক্ষা রোডম্যাপ’ দরকার—যাতে শিক্ষক সংকট, অবকাঠামো, প্রশাসনিক তদারকি ও রাজনীতি মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত হয়।
জেলা শিক্ষা অফিসার প্রতিদিনের কাগজকে বলেন, আমরা তথ্য বিশ্লেষণ করছি। কিছু কলেজে শিক্ষকদের অনিয়মিত উপস্থিতি এবং অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে অব্যবস্থাপনা পাওয়া গেছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, ফলাফল সত্যিই হতাশাজনক। আমরা কারণ বিশ্লেষণ শুরু করেছি। শিক্ষা অফিসের সঙ্গে সমন্বয় করে দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। শিক্ষক উপস্থিতি ও পাঠদানের মান নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :