দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ১০০ এডটেক স্টার্টআপের তালিকায় ‘বিজ্ঞানপ্রিয়’

আলমগীর হোসেন , নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৪:৫১ পিএম

দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ ১০০ এডটেক (শিক্ষা খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার সংশ্লিষ্ট) স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। এই তালিকাটি প্রকাশ করেছে হোলন আইকিউ নামের একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম।

প্রতি বছর দ্রুত বর্ধনশীল, উচ্চ সম্ভাবনাময় এবং প্রভাবশালী শিক্ষামূলক স্টার্টআপগুলোকে চিহ্নিত করতে এই তালিকা প্রকাশ করে ‘হোলন-আইকিউ’। ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বৈশ্বিক প্রভাব পরিমাপ করে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষা, স্কিল ডেভেলপমেন্ট ও ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনে যেসব প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে তাদেরই এই তালিকায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

‘বিজ্ঞানপ্রিয়’ বাংলাদেশের একটি বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম। গবেষণাধর্মী তথ্যের ওপর কনটেন্ট, বিজ্ঞানের নানা বিষয়ের ওপর তথ্যচিত্র ও ওপেন-ফোরাম ফেসবুক গ্রুপ ‘বিজ্ঞানপ্রিয় পরিবার’ পরিচালনার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রায় ১৬ লক্ষ বিজ্ঞানপ্রেমীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই প্ল্যাটফর্মটি। তাছাড়া তাঁদের অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল-মুভমেন্ট, প্রযুক্তিনির্ভর প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ ‘প্রজেক্ট প্রাচি’ ও আসন্ন ডিজিটাল ক্লাসরুম অপারেটিং সিস্টেম অ্যাপ ‘ক্লাসরুট’ ‘বিজ্ঞানপ্রিয়’কে একটি সময়োপযোগী প্রতিষ্ঠানের রূপ দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যুরো অব এডুকেশনাল ইনফরমেশন অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকস (ব্যানবেইস) এর ২০১৯–২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বছর গড়ে ৩ লাখ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পরীক্ষার পর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সরে যান। দ্য ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯৯৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞানে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমেছে প্রায় ৪৮ শতাংশ। এই তথ্য ভবিষ্যতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবন ও গবেষণার ক্ষেত্রেও একটি বড় ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়। এ সমস্যাকে সামনে রেখে, বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষায় সচেতনতা ও জনপ্রিয়করণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গত ৭ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে ‘বিজ্ঞানপ্রিয়’।

‘বিজ্ঞানপ্রিয়’ মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত হয়। যেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিসহ দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন। বিজ্ঞানকে ভালোবাসেন কিংবা বিজ্ঞানের নানা জিনিস নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন এমন মানুষদের কথা মাথায় রেখেই কাজ করে ‘বিজ্ঞানপ্রিয়’।

‘বিজ্ঞানপ্রিয়’র প্রতিষ্ঠাতা শাওন মাহমুদ জানান, ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের একটা ‘ইকোসিস্টেম’ তৈরি করতে চাই। যেখানে শিশুরা তাঁদের নিগূঢ় কৌতুহল থেকে বিচ্যুত হবেন না, যারা বিশুদ্ধ-বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন তাঁরাও অবগত থাকবেন, ‘কেন তাঁরা এই বিষয়ে পড়ছেন’। রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তাও বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা ও উন্নত প্রযুক্তির ওপরেই নির্ভর করে। ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড কিংবা হোলোন আইকিউ এর মতো আন্তর্জাতিক পরিচিতিগুলো মাইলফলকের মতো আমাদের বারংবার জানান দেয়, আমরা সঠিক পথেই আছি।’

উল্লেখ্য, মাতৃভাষায় বিজ্ঞানকে সহজবোধ্য করে তোলা এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০২৪ সালে শাওন মাহমুদকে ব্রিটিশ রাজ পরিবার কর্তৃক ডায়ানা অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়।

Link copied!