ইনজামামের সনদ বাতিল: তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন

আলমগীর হোসেন , নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৫:৪৭ পিএম

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই অভ্যুত্থানে বাধা দেওয়ার অভিযোগে শাস্তিপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮–১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইনজামামুল হাসানের বহিরাদেশ ও সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করে।

মানববন্ধনে বক্তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত স্থগিত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেন, "একজন শিক্ষার্থীর সনদ বাতিল করে দেওয়া মানে তার ভবিষ্যৎ পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া। তদন্ত প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ইনজামামুল কখনোই সহিংসতায় জড়িত ছিল না। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে তার বক্তব্য যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা রক্ষার নামে কাউকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করা যাবে না।"

এ বিষয়ে ইনজামামুল বলেন, "আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা—তিনটিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমার বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করা হয়নি। মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগে এই ঘৃণিত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। 'জুলাই গণ অভ্যুত্থানে বাধাদান, হত্যা ও ধর্ষণের হুমকির' অভিযোগে গঠিত তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আমাকে কোনো নোটিশ, ফোনকল, ডাকা বা ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য বলা হয়নি। প্রশাসন থেকে আমাকে কোনো নোটিশ, ফোনকল, ডাকা বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই সর্বোচ্চ শাস্তি—স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি-বিধান, বাংলাদেশের আইন, আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারমূলক ন্যায়বিচার নীতির পরিপন্থী। আত্মপক্ষের সমর্থনের অধিকার এ দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থী তথা নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কিন্তু আমাকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমার বক্তব্য শোনা হয়নি, আমার অবস্থান উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। জুলাই গণ অভ্যুত্থানে আমার ভূমিকা ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে এবং সে সময় আমি আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে শিক্ষার্থীদের পক্ষে আমার ব্যক্তিগত অভিমত ব্যক্ত করেছি। আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কোনো ধরনের খারাপ আচরণ কিংবা শিক্ষার্থীদের বাধাদান, হত্যা ও ধর্ষণের হুমকির মতো গর্হিত কাজে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ফলে এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ একপেশে, অস্বচ্ছ মিথ্যা, বানোয়াট ভিত্তির ওপর নির্মিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। তৃতীয়ত, এই ধরনের অন্যায্য সিদ্ধান্ত কেবল আমার ওপর অন্যায় করা হয়নি, বরং সামাজিকভাবে আমার অবস্থানকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। আমার ও আমার পরিবারের আত্মসম্মান, সামাজিক অবস্থান এবং সুন্দর ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ জীবনের কথা বিবেচনায় রেখে আমার দাবি: ১. প্রহসন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বহিষ্কার আদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ২. আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সুনির্দিষ্ট ভিত্তি প্রকাশ করতে হবে। ৩. আমার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ দেওয়া হয়েছে এবং অভিযোগদাতার পরিচয় আমাকে জানাতে হবে। ৪. পুনরায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে এবং আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। ৫. প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। আমি শান্তিপূর্ণভাবে, গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার মাধ্যমে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছি। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমার প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।"

উল্লেখ্য, এর আগে মানববন্ধনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেন। একই দাবিতে ৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কুমিল্লা অ্যাসোসিয়েশনের শিক্ষার্থীরাও পৃথক একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। গত ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০তম সিন্ডিকেট সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাধা, হুমকি, হামলায় আহতদের চিকিৎসায় বাধা এবং উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ইনজামামুল হাসানসহ ১৩ জন শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়া হয়। শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের ছাত্রত্বে রয়েছে তাদের স্থায়ী বহিষ্কার এবং যারা কোর্স সম্পন্ন করেছে তাদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

Link copied!