আইজিপি বাহারুল আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে কঠোর আন্দোলন

স্টাফ রিপোর্টার , প্রতিদিনের কাগজ

প্রকাশিত: ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:১৮ পিএম

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বর্তমান আইজিপি বাহারুল আলমের নাম আসায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শহীদ পিন্টু স্মৃতি সংসদ। আইজিপিকে অপসারণের দাবিতে তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিল। এই সময়সীমা শনিবার দিবাগত রাতে শেষ জানিয়ে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা বলেছেন, আইজিপি বাহারুল আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তারা আরও কঠোর আন্দোলনে নামবে।

শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এ হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এদিন সাবেক এমপি নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর হাত ধরে রাজনীতিতে আসা শত শত ছাত্রদল ও যুবদল নেতা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। এসময় তারা ‘বিচার চাই-বিচার চাই, পিন্টু হত্যার বিচার চাই। ফাঁসি-ফাঁসি-ফাঁসি চাই, বাহারুলের ফাঁসি চাই। আমার ভাই কবরে খুনি কেন বাহিরে’সহ নানা স্লোগান দেন।

অন্যদিকে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে দায়ীদের তালিকায় নাম আসায় বর্তমান আইজিপি বাহারুল আলমকে বরখাস্ত করতে প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। শনিবার ন্যাশনাল ল’ ইয়ার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এস এম জুলফিকার আলী জুনু এ চিঠি পাঠান।

মানববন্ধনে যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শহীদ পিন্টু স্মৃতি সংসদের সভাপতি রফিক আহমেদ ডলার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাধীন তদন্ত কমিশন বিএনপি জামায়াত বা এনসিপি গঠন করেনি; এটি অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত কমিটি। সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে সাবেক এসবিপ্রধান ও বর্তমান আইজিপি বাহারুল আলমের নাম দেখে আমরা হতবাক। নতুন বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান হিসেবে তার নাম আসা অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্বেগ জনক।

তিনি বলেন, আমাদের দেওয়া ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শনিবার রাতে শেষ, কিন্তু আমরা মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি আইনকে সম্মান করে। আইজিপিকে অপসারণ না করা হলে আমরা আবারও প্রেসক্লাবে আসব এবং পরে পুরান ঢাকাবাসী কঠোর আন্দোলনে নামব। রফিক আহমেদ ডলার অভিযোগ করেন, হাসিনা সরকারের নির্দেশে ভারতের ষড়যন্ত্রের অংশ হয়ে বাহারুল আলম ঢাকা-৭ ও ৮ আসনের ছাত্রদল-যুবদল-মহিলাদল নেতাকর্মীদের নাম মিথ্যা মামলায় ঢুকিয়েছেন। এসবিপ্রধান হিসেবে নিরপেক্ষ রিপোর্ট দেওয়ার দায়িত্ব থাকলেও তিনি তা করেননি। বরং পিন্টু ভাইকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়।

তিনি দাবি করেন, বিডিআর ম্যাসাকারে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার বিচার যেমন চাই, তেমনি পিন্টু ভাইয়ের হত্যার বিচারও চাই। বাহারুলকে অপসারণ ও গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। শহীদ পিন্টু স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির সেলিম বলেন, ১৬ বছর খুনি হাসিনার নির্যাতনের পর আমরা জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। এখনো কেন তার দোসররা রাষ্ট্রযন্ত্রে থাকবে? আমরা আইজিপির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনিনি। অভিযোগ এনেছে স্বাধীন তদন্ত কমিশন। অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তার পদত্যাগ করা উচিত ছিল।

সংগঠনের উপদেষ্টা সাঈদ হাসান মিন্টু বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে নাসিরউদ্দিন পিন্টুকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে পরিকল্পিতভাবে জেলহত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বর্তমান আইজিপি‌সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে গ্রেপ্তার করতে হবে। আইজিপিকে অপসারণ না করা হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। শহীদ পিন্টু স্মৃতি সংসদের নেতা ফয়সাল হেদায়েত বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্দেশে মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করে পিন্টুকে স্লো পয়জন দিয়ে হত্যা করা হয়।

এই মামলার পেছনে আইজিপি বাহারুলের সরাসরি ভূমিকা ছিল—আমরা সম্প্রতি তা জেনেছি। মানববন্ধনের পুরো সময় ‘বিচার চাই’, ‘বাহারুল অপসারণ চাই’— স্লোগানে জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকা উত্তাল হয়ে ওঠে। ন্যাশনাল ল’ ইয়ার্স কাউন্সিলের চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় জীবনের এক করুণতম অধ্যায় ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ড যেখানে দেশের ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ অসংখ্য সদস্য নির্মমভাবে শহীদ হন। এখনও জাতীয় বেদনা ও বিচার প্রত্যাশার এক অমলিন স্মৃতি হয়ে আছে।

আলমের নাম উত্থাপিত হওয়ায় দেশের ন্যায়বিচার, জনআস্থা এবং বিচার প্রতিষ্ঠার প্রশ্ন নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালনরত একজন কর্মকর্তার নাম এমন একটি রাষ্ট্রদ্রোহী ও ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের তদন্তে উল্লেখ হওয়া ঘটনাটিকে অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গুরুতর করে তুলেছে। জাতির রক্তাক্ত স্মৃতি-বহনকারী এই ঘটনায় যে কোনও অভিযোগ, সংশ্লিষ্টতা, গাফিলতি বা দায়িত্বে ব্যর্থতা বিষয়ে পদে বহাল অবস্থায় থাকা ব্যক্তি অপরাধ বিচারের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও জনবিশ্বাসের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করণ, দুর্নীতি-দমন এবং রাষ্ট্রের আস্থা পুনর্নির্মাণ। সেই পরিপ্রেক্ষিতে একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্টে নাম আসা সত্ত্বেও তার দায়িত্বে বহাল থাকা, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থার ওপর জনমনে সন্দেহ তৈরি করছে। ন্যায়বিচারের স্বীকৃতি শুধু আদালতের রায়ে নয়, বরং সরকারের যথাযথ পদক্ষেপে প্রতিফলিত হওয়াও জরুরি। অতএব, দেশের স্বার্থ, বিচারব্যবস্থার মর্যাদা এবং ভবিষ্যতের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা রক্ষার্থে আমি ও আমরা ন্যাশনাল ল’ ইয়ার্স কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বিনীতভাবে প্রার্থনা করছি।

এতে আরও বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্ত রিপোর্টে নাম আসায় বর্তমান আইজিপি বাহারুল আলমকে অবিলম্বে আইজিপি পদ থেকে অব্যাহতি/বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হোক। মামলার পূর্ণাঙ্গ ন্যায়বিচার ও তদন্তের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তার ভূমিকা ও দায় নির্ণয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে সরকারের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ কামনা করছি, যাতে রাষ্ট্র ও জনগণ উভয়ে ন্যায়বিচারের বাস্তব প্রতিফলন অনুভব করতে পারে। প্রসঙ্গত, এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে দায়ীদের তালিকায় নাম আসায় বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমকে অপসারণ করতে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।

প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সচিব ও আইন মন্ত্রণালয় সচিবকে এ নোটিশ পাঠানো হয়। সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী এ নোটিশ পাঠান। তারা হলেন, অ্যাডভোকেট মো. আব্দুস সামাদ, অ্যাডভোকেট শাহিন হোসেন ও অ্যাডভোকেট মো. আতিকুর রহমান।

Link copied!