বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন
রেজাউল করিম রেজা,ময়মনসিংহ থেকে : বন বিভাগের গেজেটভুক্ত দুই তৃতীয়াংশ জমিই বাংলাদেশ রিভিশনাল সার্ভে (বিআরএস) রেকর্ডভুক্ত হয়নি। ময়মনসিংহের ভালুকায় সরকারি গেজেটভুক্ত বন বিভাগের মোট জমি ২৩ হাজার ৭৮ একর। তন্মধ্যে মাত্র ৭ হাজার ২২৬ একর জমি বন বিভাগের নামে বিআরএস রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। অবশিষ্ট ১৪ হাজার ৬৭০ একর জমি খাস খতিয়ান, ব্যক্তি মালিকানা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দাগ নম্বর ও কাগজ পাওয়া যায়নি বলে অভিহিত করে বন বিভাগের জমিগুলো বাদ দিয়েছে সেটেলমেন্টের সংশ্লিষ্টরা। বন বিভাগ সূত্র জানায়, তৎকালীন ভূমি জরিপকালে ইচ্ছামতো মাঠকর্মীরা বিভিন্ন জনের নামে বনের জমি বিআরএস রেকর্ড করে নিয়েছেন। বন বিভাগের ভূমি জরিপে মহাজালিয়াতির সংবাদ পেয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক মহামান্য হাইকোর্টে ২০২১ সালে একটি রিট মামলা দায়ের করলেও অজ্ঞাত ও রহস্যজনক কারণে এই মামলাটি বিগত তিন বছরেও বিচারিক পর্যায়ে উপনীত হয়নি।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তারা জানান, ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলায় বিভিন্ন মৌজায় সরকারি গেজেটভুক্ত মোট বনভূমির পরিমাণ ২৩ হাজার ৭৮ দশমিক ৩৬ একর রয়েছে। বিগত ৯০ এর দশকের শুরুর দিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ রিভিশনাল সার্ভে (বিআরএস) জরিপ কাজ চলাকালে ভালুকায় সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের সাথে কোন যোগাযোগ না করেই মাঠ পর্যায়ে বন বিভাগের জমিগুলি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নামে তুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তন্মধ্যে বিদ্যমান বন আইনের ২০ ধারায় চূড়ান্তভাবে বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন করে সংরক্ষিত বনভূমি অর্থাৎ রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা করা হলেও ৮ হাজার ৯ শত ৩৬ দশমিক ৪১১ জমি বন বিভাগের নামে রেকর্ডভূক্ত না হয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে তুলে দিয়েছে ভূমি রেকর্ড জরিপ কাজে নিয়োজিত মাঠ পর্যায়ের কর্তা-ব্যক্তিরা।
এছাড়াও বন বিভাগের জমি জেলা প্রশাসকের ১ নং খাস খতিয়ানে তুলে দিয়েছে ৮ হাজার ৭ দশমিক ৯৪ একর জমি। বন বিভাগের জমি বিভিন্ন ব্যক্তির নামে বিআরএস রেকর্ডে তুলে দিয়েছে ৪ হাজার ৬ শত ৬১ দশমিক ৭২ একর জমি, এছাড়াও বন বিভাগের বিভিন্ন জমি মাঠ পর্যায়ের জরিপ কাজে নিয়োজিত লোকজনের কাছে বিভিন্ন দাগ নম্বর তাদের হাতে ছিল না এই অজুহাতে বিআরএস বহির্ভূত হয়েছে ৩ হাজার একশত ৮১ দশমিক ৮৫ একর জমি। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিআরএস সার্ভে চলাকালে মাঠ পর্যায়ের লোকজনদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করে বন বিভাগের সরকারি জমিগুলো রেকর্ড বহির্ভূত করা হয়েছে।
এহেন ধৃষ্ঠতাপূর্ণ জরিপ কাজে লোকজনের হেলা-ফেলার কারণে বনের জমি রক্ষায় বন বিভাগ এখন নানাভাবে হিমশিম খাচ্ছে। গেজেটভুক্ত সরকারি জমি রক্ষায় বন বিভাগ ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আশানুরূপ কোন সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ফলে বনের জমি রক্ষায় বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন। বনের কর্মকর্তারা এখন শুধু বন রক্ষার নামে ঊর্ধ্বতর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো ছাড়া আর কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পাচ্ছে না। বিআরএস ভূমি রেকর্ড করতে গিয়ে মহাজালিয়াতির খবর পেয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ২০২১ সালে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। বিগত তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও এই রিট পিটিশনটি বিচারিক পর্যায়ে উপনীত হয়নি। বন বিভাগ থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও কোন কাজে আসেনি। বেলা’র চেয়ারম্যান বর্তমানে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।