শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৮ অপরাহ্ন

আপডেট
সম্পদের হিসাব দিতে হবে রাজউক কর্মকর্তাদের গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থী নিহত মালয়েশিয়া প্রবাসীদের মারধরের ঘটনায় হাইকমিশনের দুঃখ প্রকাশ ময়মনসিংহ বিভাগীয় বইমেলার সমাপনী পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শব্দের চেয়ে দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তত আছে: পুতিন সড়ক দুর্ঘটনায় পরীমনির প্রথম স্বামী নিহত বাংলাদেশ চোখের সেবা সম্প্রসারণে অরবিসের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: প্রধান উপদেষ্টা ইসরায়েলি হামলায় একদিনে লেবাননে নিহত ৫৯ কক্সবাজারে বিএনপি নেতা’কে তুলে নিতে ঘর ঘেরাও করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ধাপে ধাপে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে সরকার, জানিয়েছেন হাসান আরিফ
স্ত্রীরা স্বামীর জন্য কত কি করেন একবারও কি ভেবে দেখেছি? তাদের জন্য আমাদের করণীয় কি?

স্ত্রীরা স্বামীর জন্য কত কি করেন একবারও কি ভেবে দেখেছি? তাদের জন্য আমাদের করণীয় কি?

মো. আব্দুল মান্নান
আসলে আমরা অনেকেই শুধু জানি যে, স্বামীর আনুগত্য ও খেদমত করা স্ত্রীর উপর ওয়াজিব। স্বামীর নিকট তার সাধ্যের বাইরে কোন খাদ্য খাবার বা পোশাক পরিচ্ছদের আবদার স্ত্রী করতে পারবে না। স্বামী অপছন্দ করে এমন কোন কাজ করতে পারবে না। সতীত্ব রক্ষা করে চলতে হবে। স্বামীর টাকা পয়সা হেফাজত করবে। অনুমতি ছাড়া খরচ করতে পারবে না। স্বামী তার চাহিদা পূরণ করতে আহ্বান করলে সব কাজ ফেলে সাড়া দিতে হবে। এটা ফরজ। স্বামী অস্বচ্ছল বা কুৎসিত হলেও তাকে তুচ্ছ করা যাবে না। স্বামীর মধ্যে শরীয়তবিরোধী কোন আমল থাকলে তাকে দীনদার বানাতে হবে। স্বামীর নাম ধরে ডাকা যাবে না। কারো সামনে স্বামীর সমালোচনা করা যাবে না। স্বামীর আপনজনদের সাথে কথা কাটাকাটি করা যাবে না।

ভালো ব্যবহার করতে হবে। স্বামীর উদ্দেশ্যে সেজেগুজে থাকতে হবে। স্বামীর মন মেজাজ বুঝে চলতে হবে। স্বামীর ঘরের রান্না বান্না, কাপড় চোপড় ধোয়া, শ্বশুড় শ্বাশুড়ি ও আত্মীয় স্বজনের খেদমত করাসহ স্বামীর সন্তানাদি লালন পালন করতে হবে। শুধু তাই নয়, আমরা চাই স্ত্রী যেন গোলামের মত খেটে কাজ করে আমার সংসার ঠিক রাখে। সবার কথা বলছি না। আমাদের অধিকাংশরা এটাই জানেন কিন্তু স্ত্রীদের জন্যেও যে আমাদের কিছু করণীয় আছে সেটা কয় জনেইবা জানেন?
মাদরাসা ৭দিনের ছুটি দেওয়ায় ২ দিনের জন্য ছেলেমেয়ে নিয়ে আমার শ্বশুড় বাড়িতে বেড়াতে গেছেন বাড়িওয়ালী। ফ্রিজে খাবার থাকলেও এগুলো গরম করে খাওয়া কষ্টকর বলে হোটেলেই কাম সারছিলাম। মোবাইলে কথায় কথায় ছোট বোন তা জানতে পারে। বাসা থেকে অল্প দূরে ওই বোনের বাড়ি। তাই বার বার মানা করলেও সেখান থেকে সে খানা পাঠায়। ছোট বোনজামাই এই দুইদিন ধরে খাবার নিয়ে আসে। টিফিন বক্সের বাটিগুলো খুলে থাল ধুয়ে জগ দিয়ে একটু পানি এনে খানাগুলো খেতে এত কষ্ট! খাওয়ার পর থাল বাসন ধুইতে গিয়ে আরও বিপাকে। সাবান দিয়ে বার বার ধুয়েও বাটির তলা থেকে তেলই উঠাতে পারছিলাম না। আগে বুঝতাম না।

এসব ছোট ছোট কাজ এত কষ্ট! এখন তা টের পাচ্ছি। আগে কিছু হতে না হতেই বাড়িওয়ালীকে বলতাম সারাদিন কি কর? একটু রানদো আর খাও। এইতো। এতেই এত কষ্ট? তিনি বলতেন থাল বাসন ধোয়া লাগে না? কাপড় চোপড় কে ধোয়? বাচ্চা লালনপালন? সংসারের কাজ কে করে? ঘর মুছে কে? তিনি যাই বলুক না কেন মনে করতাম এগুলো একেবারেই মামুলি ব্যাপার। এতে যে কষ্ট আছে, আমি তা বুঝতেই চাইতাম না। এখন এই দুই দিনে শুধু খানাগুলো টিফিন বক্স থেকে নামিয়ে খেয়ে দেখলাম, এসব টুকটাক কাজে আসলে কত কষ্ট! গৃহিণীর প্রতি ভালবাসা বেড়ে গেল। আল্লাহ তায়ালা তাকে জাযায়ে খায়ের দান করুক।

আসলে প্রত্যেক স্বামীকেই তার স্ত্রীর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিৎ। তাদের হক আদায় করা উচিৎ। আমরা শুধু আমাদের হক সম্বন্ধে জানি। আমাদের বিবিদেরও যে হক রয়েছে এবং তা আমাদের আদায় করতে হয় সে বিষয়ে কি আমরা জানি? মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীনের লেখা আহকামে যিন্দেগী একটি ভাল কিতাব আছে। এর ৪২৪ পৃষ্ঠা থেকে ৪২৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত ‘স্ত্রীর জন্য স্বামীর করণীয় তথা স্ত্রীর অধিকারসমূহ’ শিরোনামে প্রায় ২০টি হক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এগুলো আমাদের জানা ও মানা উচিৎ। শুধু এতটুকুই নয় বরং সংসার জীবন করতে হলে জানতে হবে আরও অনেক কিছু এবং স্ত্রীদের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ভালবাসা ও সহনশীল হয়ে তাদেরকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দিয়ে যেতে হবে।

স্ত্রীদের হক সম্বন্ধে ওই কিতাবে বলা হয়েছে- হালাল মাল দ্বারা স্ত্রীর ভরণপোষণ দেওয়া স্বামীর উপর ফরজ। স্বচ্ছলতা থাকলে স্ত্রীর জন্য চাকর নওকরের ব্যবস্থা করা স্বামীর উপর ওয়াজিব। স্ত্রীর বসবাসের জন্য পৃথক ঘর করে দিতে হবে। তার সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে। স্ত্রীর চরিত্রের ব্যাপারে অহেতুক সন্দেহ বা কুধারণা রাখা যাবে না। হায়েস নেফাসসহ স্ত্রীকে প্রয়োজনীয় মাসআলা মাসায়েল শিক্ষা দিতে হবে। তার চাহিদা অনুযায়ী তাকে সময় দিতে হবে। স্ত্রীর বাবা-মা বা মুহরেম আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করার সুযোগ দিতে হবে। স্ত্রীর গোপনীয় কোন বিষয় অন্য কারো সাথে প্রকাশ করা যাবে না। পারিবারিক শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে স্ত্রীকে শাসন করার অধিকার স্বামীকে দেওয়া হলেও কোন অবস্থাতেই এর সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না। স্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্য মাঝে মাঝে তাকে সময় দিতে হবে। তাদের মান অভিমান করার অধিকার আছে। ভুল ত্রুটি হলে স্ত্রীকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। স্ত্রীর মোহরানা আদায় করতে হবে। স্ত্রীর প্রতি অবিচার করা যাবে না। কারো একাধিক স্ত্রী থাকলে ভরণপোষণ, রাত্রিযাপন ও অন্যান্য বিষয়ে সমতা রক্ষা করা ওয়াজিব। এসব হক যথাযথভাবে আদায় করলে কারো সংসারে অশান্তি থাকবে না বরং ওই সংসারটা বেহেশতের একটা টুকরায় পরিণত হবে। আল্লাহ তায়ালা স্ত্রীদের ব্যাপারে আমাদেরকে যত্নশীল হওয়ার তাওফীক দান করুক।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |