মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯ অপরাহ্ন

সংযুক্ত আরব আমিরাতে জুমা’র খোৎবা বিষয়ঃ মহানবী সাঃ’র মি’রাজ

সংযুক্ত আরব আমিরাতে জুমা’র খোৎবা বিষয়ঃ মহানবী সাঃ’র মি’রাজ

মোহাম্মদ আরমান চৌধুরী : 

*** সকল প্রশংসার মালিক মহান রব্বুল আলামিন, যিনি তাঁর নবী সাঃকে উর্দ্ধাকাশে ভ্রমণ করিয়ে ছিলেন ।
*** অনন্ত অসীম রহমত ও দয়া নাজিল হোক মহানবী সাঃ, তাঁর পবিত্র পরিবার রাঃ, তাঁর সাহাবীগণ রাঃ, তাবেঈনগণ রাঃ সহ সমগ্র মুসলিম জাতির উপর ।
*** হে ঈমানদারগণ ! আল্লাহকে ভয় করো এবং তাঁর প্রিয় রসুল সাঃ’র প্রতি ঈমান আনয়ন করো । তা’হলে তিনি তাঁর রহমতে তোমাদেরকে ডবল পুরুষ্কার দান করবেন । তোমাদেরকে নূর প্রদান করবেন । যেনো তোমরা তাঁর সাহায্যে চলতে পারো । তোমাদেরকে মাফ করে দেবে । আল্লাহপাক পরম করুণাময় এবং দয়ালু ।
সূরা আল্ হাদীদ ২৮
*** নবুয়তের যে কোন এক রাত্রে ফিরিশ্তা সম্রাট হযরত জিব্রাইল আঃ মহানবী সাঃকে মক্কার বায়তুল্লাহর নিকটবর্তী বাসা থেকে ফিলিস্তিনের বায়তুল মোকাদ্দাস জামে মসজিদে নিয়ে আসেন এবং সেখান থেকে আল্লাহর নির্দেশে উর্দ্ধাকাশে নিয়ে যান । এটা মহানবী সা’র প্রতি একটি অসাধারণ মু’জিযা । যেখানে দুনিয়ার সকল শক্তি সারেন্ডার । এ ঘটনা বিশ্বাস করা মুসলিম জাতির জন্য ফরজ ।
*** মি’রাজের ঘটনায় বিশ্বাস হীনতা প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহপাক বলেন “ তোমাদের সাথী পথভ্রষ্টও নয় এবং বিপদগামীও ছিলেন না । মহানবী সাঃ নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণে কোন কথা বলেন না । তিনি কেবলই ওহীর কথা বলেন ।”
সূরা আন নাজাম ২-৪
*** উর্দ্ধাকাশে প্রবেশের সময়ে ফিরিশ্তাগণ নবীগণ عليهم السلام সবাই মহানবী সাঃকে মোবারকবাদ দেন ।
ছহীহুল বোখারি ৩২০৭
ছহীহ মুসলিম ১৬৪
*** বাবা সাইয়্যিদুনা আদম আঃ বলেন “ স্বাগতম হে আমার আদরের সন্তান । আপনি আমার অনেক প্রিয় বেটা ।”
ছহীহুল বোখারি ৭০৭৯
*** ঠিক এভাবে আসমান সমূহে সাইয়্যিদুনা ইউছুফ ঈসা হারুণ ইয়াহয়া ইদরিস মুসা আলাইহিমুস সালামদের সাথে সাক্ষাত হয় । সকলেই তাঁকে সম্ভাষণ জানান । এবং বলেন স্বাগতম হে উত্তম নবী সাঃ । হে উত্তম ভাই ।”
ছহীহুল বোখারি
ছহীহ মুসলিম ।
*** ৭ম আকাশে দেখা হয় সাইয়্যিদুনা ইব্রাহিম আঃ’র সাথে । তিনি সেখানে অবস্থিত বায়তুল মা’মুর মসজিদের সাথে হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন । তিনি মহানবী মহাম্মদ সাঃকে বললেন “ আপনার উম্মতকে আমার সালাম বলবেন । আরো বলবেন যে, জান্নাতের মাটি পবিত্র । তাঁর পানি সুমিষ্ট । জান্নাত হচ্ছে অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন সমতল ভূমি । তাঁর বৃক্ষ হলো ‘ সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার ।”
সুনানে তিরমিযি ৩৪৬২
*** সর্বশেষ মহানবী সাঃকে সিদরাতুল মুন্তাহা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয় । যেখানে তাঁর পূর্বে বা পরে কাউকে নিয়ে যাওয়া হয়নি এবং হবেওনা ।
সূরা নাজাম ১৪-১৫ তাফসীর দেখুন ।
*** কবি আহমদ শউক্বী রহঃ বলেন হে নবী সাঃ ! আপনি যে স্থানে পৌঁছে গেছেন , পাখা দিয়ে উড়াল দিয়েও কেউই তাঁর ধারে কাছে স্পর্শ করতে পারবেনা ।
*** তিনি তাঁর নিকটবর্তী হলো ( হযরত জিব্রাইল আঃ’র ) । দুই ধনুকের চেয়েও কম দূরত্ব ছিলো । অতঃপর আল্লাহপাক তাঁর প্রতি যা’ ওহী প্রেরণ করার করলেন ।”
সূরা আন নাজাম ৮-১০
*** মহানবী সাঃ’র প্রতি ওহী নাজিল করার মধ্যে ছিলো ৫০ ওয়াক্ত নামাজ । সাইয়্যিদুনা মুসা আঃ’র পরামর্শে মহানবী সাঃ আল্লাহর কাছে নামাজ হ্রাস করার আবেদন জানান এবং বলেন আমার উম্মত শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যন্ত দূর্বল । তাঁরা সক্ষম হবেনা । তখন আল্লহপাক কমিয়ে পাত ওয়াক্ত করে দেন এবং এই পাঁচ ওয়াক্তে ৫০ ওয়াক্তের ছওয়াব লাভের ঘোষণা দেন ।
ছহীহুল বোখারি
ছহীহ মুসলিম
*** মহানবী সাঃ তাঁর রবের বিশাল বিশাল নিদর্শন সমূহ পরিদর্শন করেছেন ।
সূরা আন নাজাম ১৮
*** মহানবী সাঃ বেহেশ্তে প্রবেশ করতঃ দেখলেন সেখানকার পিলার সমূহ হীরার তৈরী । মাটিতে মিশ্কের সুগন্ধ ।
ছহীহুল বোখারি
ছহীহ মুসলিম
*** তিনি আরো দেখলেন হীরার তৈরী প্রাসাদ সমূহ । তিনি সেখানে দেখলেন কাউসার নদী । যা এক মাসের পথ । হযরত জিব্রাইল আঃ জানালেন ইয়া রসুলাল্লাহ ! এ কাউসার আল্লাহপাক আপনাকে দান করেছেন ।
ছহীহুল বোখারি ৬৫৮১.৭৫১৭.
মুসনাদে আহমদ ১৩৫৩৫
*** আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পরকালের জন্য আমল করো হে ভাই । প্রতিবেশী থাকবে মহানবী সাঃ এবং এর নির্মাণকারী হলেন মহান রহমান । স্বর্ণের তৈরী প্রাসাদ এবং অত্যন্ত সুগন্ধময় ।
بستان الواعظين و  رياض السامعين ١٨٠
*** অতঃপর মহানবী সাঃকে জাহান্নাম পরিদর্শন করানো হলো । তিনি সেখানে দেখলেন কিছু মানুষ লম্বা লম্বা নখ দ্বারা নিজেদের চেহারা ও বুকে আঁচরাচ্ছে ! জানতে চাওয়া হলে জিব্রাইল আঃ বললেন “ এরা মানুষের মাংস ভক্ষণকারী বা গীবতকারী ।
সুনানে আবু দাউদ ৪৮৭৮
*** মি’রাজের এই মহান সফরে হাদিয়া দেয়া হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ , সূরা আল্ বাক্বারার শেষ দুই আয়াত এবং শির্ক থেকে দূরে থাকা ব্যক্তির মুক্তি ।”
ছহীহ মুসলিম ১৭৩
*** আল্লাহপাক বলেন “ নবীদের কাহিনী সমূহে রয়েছে বুদ্ধিজীবিদের জন্য শিক্ষা । এগুলো কোন বানানো কিস্সা নয় । আগের কিতাব সমূহের সত্যায়নকারী এবং ব্যাপক বিশ্লেষণ । ঈমানদারদের জন্য হেদায়াত ও রহমত ।”
সূরা ইউছুফ ১১১
*** হে আল্লাহ ! আমাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াত সহকারে পড়ার তওফিক দান করুন । আমাদের মা বাবাদেরকে ক্ষমা করুন । তাঁদেরকে জান্নাতুল ফিরদাউসের মেহমান করুন । আমিন ইয়া রব ।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |