বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৫ পূর্বাহ্ন

এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে নবীজির সঙ্গে থাকবে

এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে নবীজির সঙ্গে থাকবে

মুফতী ইয়াসীন আরাফাত: ইসলাম মানবতার ধর্ম। ইসলামি জীবনাদর্শে বিশ্বমানবতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। মানবসভ্যতায় সম্প্রীতির পৃথিবী আর সর্বজনীনতার প্রকৃষ্ট নজির স্থাপন করেছে ইসলাম। ইসলামি সমাজ দর্শন চায় মানবসমাজকে দয়া, মায়া, মমতা ও ভালোবাসার ডোরে গেঁথে একটি সুখী সমৃদ্ধ কল্যাণকামী সমাজ গঠন করতে। তারই ধারাবাহিকতায় ইসলাম এতিম ও অসহায় শিশুর অধিকার রক্ষার্থে শুধু নৈতিক নির্দেশনাই দেয়নি, বরং এতিমের ব্যাপারে প্রশাসনিক ও আইনি অধিকারের ভিত্তিও দাঁড় করিয়েছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এতিমের অধিকার রক্ষা, তাদের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ, তাদের প্রতি অন্যায়-অবিচার না করা, তাদের প্রতিপালন, পুনর্বাসন ও সুরক্ষা ইত্যাদি নিঃস্বার্থভাবে সম্পাদন করার ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়েছে।

মক্কার কুরাইশরা এতিমদের ওপর জুলুম-নির্যাতন করত। পিতা মৃত্যুবরণ করলে চাচা তার ভাতিজার সমুদয় সম্পদ আত্মসাৎ করত। অথচ কোনো পিতৃহীন এতিমকে অসহায় ও বেওয়ারিশ মনে করে তার ধন-সম্পদ জবরদস্তিমূলকভাবে নিজ অধিকারভুক্ত করে নেওয়া অন্যায়। এমন গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকতে কোরআন-হাদিসে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এতিমদের তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দাও। ভালো সম্পদের সঙ্গে খারাপ সম্পদ বদল করো না। আর তাদের সম্পদের সঙ্গে নিজেদের ধন-সম্পদ সংমিশ্রিত করে তা গ্রাস করো না। নিশ্চয় এটা বড়ই মন্দ কাজ।’ (সুরা নিসা ২)

পক্ষান্তরে যারা নিঃস্বার্থভাবে এতিমদের প্রতিপালন ও পুনর্বাসন করে এবং এতিমদের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করে তাদের উত্তম বিনিময় রয়েছে। আল্লাহতায়াল ইরশাদ করেন, ‘তারা আহার্যের প্রতি আসিক্ত সত্ত্বেও (আল্লাহর ভালোবাসায়) অভাবী, এতিম ও বন্দিকে আহার্য দান করে। (এবং তারা বলে) শুধু আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তোমাদের আহার্য দান করি। বিনিময়ে তোমাদের থেকে কোনো প্রতিদান চাই না।’ (সুরা দাহর ৮-৯)

এতিমের প্রতিপালন করার দ্বারা জান্নাতে উচ্চাসন লাভ হয়। জান্নাতে নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে থাকার অন্যতম একটি আমল হচ্ছে এতিম প্রতিপালনের প্রতি নিজেকে নিয়োজিত রাখা। ইসলাম সমাজের ধনবান, সামর্থ্যবান ও বিত্তশালীদের সম্পদে নিঃস্ব, এতিম, বিধবা ও দুর্দশাগ্রস্তদের অধিকার নিশ্চিত করেছে। যারা এতিমকে ভালোবাসে, তাদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করে, তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং তাদের লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করে, প্রিয়নবী (সা.) সেসব লোকদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, মুসলমানদের ওই বাড়ি সর্বোত্তম, যে বাড়িতে এতিম আছে এবং তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয়। আর ওই বাড়ি সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যে বাড়িতে এতিম আছে অথচ তার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়। অতঃপর তিনি তার দুই আঙুল দিকে ইশারা করে বলেন, আমি এবং এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এরূপ কাছাকাছি অবস্থান করব। (সহিহ মুসলিম)

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |