শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২১ পূর্বাহ্ন

আপডেট
সন্তান ফেলে গেল মাকে, দায়িত্ব নিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন

সন্তান ফেলে গেল মাকে, দায়িত্ব নিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন

২০ বছর আগে তার স্বামী মারা যান গোল বানু বেগমের। একমাত্র ছেলে মাকে একা ফেলে রেখে চলে গেছেন। দিনের পর দিন না খেয়ে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে ছিলেন গ্রামের জরাজীর্ণ এক পরিবেশে। নিকটবর্তী আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতায় মাঝেমধ্যে খাবার‌ পেলেও অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হতো।

এমন খবর পেয়ে বিত্তবানদের সহযোগিতা নিয়ে গোল বানুর কাছে হাজির হলো ‘পটুয়াখালীবাসী’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারা এই বৃদ্ধের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছে। এর মধ্যে দৈনিক তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।

স্থানীয়ভাবে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে দিনমজুরি ও রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন বৃদ্ধার ছেলে। বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে সুদে টাকা ও বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বিপদে পড়েন। পরে ঋণের টাকা শোধ করতে না পেরে মায়ের বয়স্ক ভাতার বই এনজিও কর্মীর কাছ বুঝিয়ে দিয়ে ঢাকায় চলে যান।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, গোল বানু বেগমের সরকারি বয়স্ক ভাতা তাও নিজের কাছে পেতেন না। সন্তানের দেনা পরিশোধের জন্য এনজিও কর্মীর মোবাইলে সেই বয়স্ক ভাতা নিয়ে নিত।

প্রতিবেশী মহিমা বেগম বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর বিভিন্ন হাটবাজার থেকে ভিক্ষা করে চলতেন গোল বানু। অসুস্থ হওয়ার পর আর পারছিলেন না ভিক্ষা করতে। এরপর যখন টাকার অভাবে নিজের সন্তান তাকে ছেড়ে চলে যায়, তারপর থেকেই আমরা দেখাশোনা করি। আমরা নিজেরাই খুব কষ্টে আছি। যতটা পারি তারে সহযোগিতা করি। এই সংগঠনের সদস্যরা তার দেখাশোনা ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছে। প্রতি মাসে তার বাড়িতে বাজার করে দিয়ে যায়। এখন মোটামুটিভাবে খেয়েদেয়ে সুস্থ আছে।

 

সমাজসেবক ও ‘পটুয়াখালীবাসী’ সংগঠনের উপদেষ্টা মোজাম্মেল নাসরিন এমা  জানান, এক ছেলে তাকে ফেলে রেখে যাওয়ায় তিনি অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। তাকে সহযোগিতা করতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। আমি যেভাবে এগিয়ে এসেছি, এভাবে আহ্বান জানাব যাদের সামর্থ্য আছে, তারাও সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। আপনারা আমার জন্যও দোয়া করবেন আমি যেন এভাবেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি।

‘পটুয়াখালীবাসী’ সংগঠনের সদস্য সাবরিনা মেহজাবিন স্বর্ণা বলেন, অসুস্থ গোল বানু না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন, এমন খবর পেয়ে আমরা তাকে দেখতে আসি। তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই। একটা মানুষ সুস্থ থাকতে তিন বেলা খাবারের প্রয়োজন। আমরা তার ব্যবস্থা করেছি। আমাদের সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা প্রতি মাসে বাজার করে তার বাড়িতে পৌঁছে দেন।

তিনি আরও বলেন, বৃদ্ধার সার্বিক দেখাশোনার জন্য আমাদের স্বেচ্ছাসেবক আসলাম দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন। আল্লাহ তায়ালা যত দিন তাকে বাঁচিয়ে রাখবেন, আমরা চেষ্টা করব সংগঠনের পক্ষ থেকে তার তিন বেলা খাবার ও যাবতীয় ব্যবস্থা করার।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক শীলা রানী দাস বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে বৃদ্ধার খবর জানতে পেরে আমি তাকে দেখতে যাই। এক এনজিও কর্মীর মোবাইল নম্বরে বৃদ্ধার বয়স্ক ভাতার টাকা চলে যেত, জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে সেই এনজিও কর্মীকে ডেকে এ পর্যন্ত যত টাকা তিনি নিয়েছেন, সেই টাকা উদ্ধার করে বৃদ্ধার হাতে তুলে দিই। এখন থেকে তার নাতির মোবাইল নম্বরে টাকা চলে যায়। এ ছাড়া চিকিৎসাসেবার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করা হয়।

প্রসঙ্গত, পটুয়াখালীবাসী সংগঠন ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন সময়ে মানবিক সেবায় কাজ করে থাকে তারা। বিশেষ করে স্থায়ী প্রজেক্টের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তারা। তাদের উল্লেখযোগ্য প্রজেক্টগুলো হলো ভ্যান গাড়ি প্রজেক্ট, রিকশা প্রজেক্ট, সেলাই মেশিন প্রজেক্ট, গরু-ছাগল প্রজেক্ট ইত্যাদি। এ ছাড়া করোনাকালীন তারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |