শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২১ পূর্বাহ্ন

আপডেট
ভূঞাপুরে নদী ভাঙনে নিঃস্ব যমুনা পাড়ের মানুষ 

ভূঞাপুরে নদী ভাঙনে নিঃস্ব যমুনা পাড়ের মানুষ 

আমিনুল ইসলাম, ভূঞাপুর(টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি :
নদী ভাঙন শব্দটা যেনো টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা পূর্ব পাড়ের বসবাসরত মানুষের ভাগ্যের সাথে মিশে গেছে। আর এজন্য হয়তো ভাঙন পিছু ছাড়ছে না নদী তীরবর্তী মানুষের, যা স্বাভাবিকভাবে দেখছে দায় সাড়া কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ১৫ শতাধিক বসতভিটা ও কয়েক’শত একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মানুষ তার শেষ মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুও হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে আশ্রয়ের খোঁজে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
এদিকে চোখের সামনেই নিজের বসতভিটা ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে দেখে অঝোরে কাঁদছে শত শত মানুষ। এদের অশ্রুঝরা কান্না দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো ঠিকই শুনতে পাচ্ছে। তবে দেশের দায়সাড়া কর্তৃপক্ষ কি এসব নিঃস্ব মানুষের কান্না দেখতে ও শুনতে পাচ্ছে?  সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভূঞাপুুর উপজেলার খানুরবাড়ী, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া ও চিতুলিয়া পাড়া ঘুরে তীব্র নদী ভাঙনের তথ্যচিত্র দেখা গেছে। তবে ওইসব এলাকায় বন্যা নয়, বর্ষাকালের দূর্যোগ হচ্ছে নদী ভাঙন। বন্যা হলে বড়জোর এক-দুই সপ্তাহ দুর্ভোগ থাকে। যদি নদী ভাঙনে বাড়ি ভেঙে যায়, এর মতো আর কষ্ট হয় না।
ঘূর্ণিঝড়ে ঘর উড়ে গেলেও ভিটেটুকু থাকে; বন্যায় ফসল ভেসে গেলেও জমিটুকু থাকে; আগুনে সব পুড়ে গেলেও ছাইটুকু থাকে। আর নদীভাঙনে মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুও শেষ হয়ে যায়। কষ্টে মানুষের দুচোখে অশ্রু বয়ে যায় । ভিটেমাটি হারানোর এতটাই কষ্ট , যে কষ্ট মানুষ জীবনে ভুলতে পারে না।
চিতুলিয়া পাড়া আব্দুল আজিজের স্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন আনছিলাম। লোন আইনা বহু কষ্টে বাড়িটুকু করছিলাম সুখ শান্তিতে থাকার জন্য। কিন্তু সর্বনাশা নদীর ভাঙনে আমার ভিটেটুকু  কাইড়া নিছে। দুঃখের কথা কি আর কমু , আমার কোনো বেটা পুত্র নেই, আমার স্বামী দিন মজুরের কাজ করে। কামাই কইরা খাইতেই কষ্ট।   কাজ  করতে পারলে চলে, না করতে পারলে না খাইয়াও থাকতে হয়।
তিনি আরো বলেন, এই বয়সে কি আর জীবনে বাড়ি করতে পারমু। শেষ বয়সে আল্লাহ এই কষ্ট কপালে থুইছিল। এতো কষ্ট লাগে মনে করেন, একটা পাখির বাসা ভাঙলে পাখি কেমন করে সে জায়গায় বইয়া বইয়া। আমি যে ফাঁকে থাকি, আমার মনে হয় না আমার বাড়ি ভাঙছে!  আমার মনে হয় আমি বাড়ি থাইক্যা এহন আইছি এই বলেই সে কান্না করে দেন। তার দুচোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে তখন গাল অবধি ঝরছিল।
আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার এ বয়সে আমি এ পর্যন্ত বাড়ি তিন টানা দিছি। নদী ভাঙনে আমরা খুবই অসুবিধা য় ও কষ্টে আছি। এখন আবার ভেঙে যাচ্ছে, অনেক জায়গা ছিলো ইতোমধ্যে ভেঙে গেছে। এখানে দুই-এক হাজার মতো বাড়ি নদীতে ভেঙে গেছে। বাড়ি ভেঙে যাওয়া মানুষগুলোর যাওয়া কোনো জায়গা নাই। তারা সড়কের পাশে বা কারো বাড়িতে গিয়ে থাকতেছে। যদি এখানে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হতো অনেক বাড়ি রক্ষা পেতো। যা ফেলা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
মোঃ জাকির হোসেন বলেন, এখনো নদী ভাঙন অব্যাহত আছে। এ মধ্যে বালু ঘাটের জন্যও ভাঙছে। নদীতে বড় বড় ড্রেজার, বলগেট নদীর তীরে ভিড়ানো নদীর স্রোত ও ঢেউয়েও ভাঙছে। তাছাড়া পানি বৃদ্ধি ও কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙছে। তবে বেশি ক্ষতি হয় ড্রেজার ভিড়ানোর জন্য। অল্পসংখ্যক জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল যা নদীতে তলিয়ে গেছে। যেভাবে বাড়িঘর বিলীন হচ্ছে, সেভাবে কাজ করছে না কর্তৃপক্ষ।
এ পাড় থেকে  প্রায় চার-পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে তিনটি পাড়া ছিল ইতোমধ্যে ভেঙে গেছে। ভাঙন যখন শুরু হয় অনেকসময় বসতভিটা সাথে ঘরবাড়িও নদীতে চলে যায়। তখন  মানুষ চরম আতঙ্কে থাকে। ভাঙনের বিশাল বড় কষ্ট যা প্রকাশ করা যায় না। এ মুহুর্তে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিলে তাও মানুষ একটু স্বস্তি পেতো। এখনো হাজার হাজার পরিবার ভাঙন আতঙ্কে প্রতিদিন দিন পার করছেন। স্থায়ীভাবে একটি বাঁধ হলে ওইসব পরিবার ও গ্রামগুলো রক্ষা পেতো।
এ ব্যাপারে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। বেড়িবাঁধের প্রোজেক্ট বা কাজ এখনও শুরু হয়নি। তবে অচিরেই এর কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |