শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৫ পূর্বাহ্ন

আপডেট
সুনামগঞ্জে সংস্কারের অভাবে ট্রেন চলাচল বন্ধ ৩ বছর

সুনামগঞ্জে সংস্কারের অভাবে ট্রেন চলাচল বন্ধ ৩ বছর

সুনামগঞ্জে চলতি বছরের জুন মাসে ভয়াবহ বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের ভয়াবহ স্রোতে ছাতক-সিলেট রুটের রেললাইনের প্রায় ১২ কিলোমিটার লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। পাথর নেই রেললাইনের নিচে। অনেক জায়গায় মাটি সরে গেছে। অধিকাংশ স্থানে ঝুলে রয়েছে স্লিপার। কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছে ছোট-বড় হাজারো গর্ত। গর্তের কিছু স্থানে স্লিপারের কাঠও সড়ে গেছে। করোনার প্রথম স্ট্রেজ থেকে আজ অবদি প্রায় ৩ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে জনগুরুত্ব পূর্ণ এই রেলপথটি। ঝং ধরে মরিচা পড়েছে। অযত্নে পড়ে আছে বগি। ক্ষতি হচ্ছে সরকারের শতশত কোটি টাকা। নেই কোন জোড়ালো উদ্দ্যোগ।

সারজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উত্তর দিকের গড়গাঁও থেকে তাজপুর, রায়সন্তুষপুর থেকে খারগাঁও, মাধবপুর থেকে ছাতক ও দক্ষিণ দিকে গোবিন্দগঞ্জ থেকে আফজলাবাদ রেলস্ট্রেশন পর্যন্ত রেলপথে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। দুই মাস অতিবাহিত নেই সংস্কারের কোন উদ্দ্যোগ! সংস্কার হবে কিনা জানা নেই রেল কতৃপক্ষের! জানাযায়, করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ে সারাদেশের সঙ্গে ছাতক-সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ৩ বছরেও সেটি চালু হয়নি। এর মধ্যে সম্প্রতিক বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যোগাযোগের প্রচীন এই রেলপথটি।

 

রেলকতৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৪ সালে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছাতক বাজার পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাথর, বালু, চুনাপাথর, কমলালেবু, তেজপাতাসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহনে মূলত রেলপথটি নির্মিত হয়েছিল। পরে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ১৯৭৯ সালে রাজস্ব আয়ে ছাতক বাজার স্টেশন শীর্ষস্থানে ছিল। এরপর নানা অজুহাতে কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেন ও বগি সংখ্যা। ধীরে ধীরে অচল অবস্থায় এসে ঠিকে ছাতক-সিলেট রেলব্যাবস্থাপনা। তার মধ্যে করোনার প্রথম পকোপে বন্ধই হয়ে যায়। আরো জানা যায়-

 

ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ বাজারের কাচাঁমাল ব্যবসায়ীরা জানান, প্রায় তিন বছর ধরে ছাতক-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এখানে স্থাপিত রেলওয়ের নিয়ন্ত্রাধীন একমাত্র কংক্রিট স্লিপার কারখানাও বন্ধ। এ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দায়ী। ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে দ্রুত রেলপথটি চালু করা অতিব প্রয়োজন।

 

ট্রেনে যাতাযাত কারি যাত্রীরা জানিয়েছে- ছাতক থেকে ৪৫ মিনিটে পৌঁছানো যেতো সিলেটে। খাজাঞ্চীগাঁও, সংপুর ও আফজালাবাদ স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে। এলাকার কয়েক হাজার

মানুষের সিলেট ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল। সড়কপথের চেয়ে পণ্য পরিবহনে খরচ কয়েক গুণ কম হতো রেলপথে। সকালে ও বিকেলে ট্রেনে সিলেট থেকে ছাতকে যেতে ভাড়া ছিল মাত্র ১০ টাকা। ওই পথে বাসে যেতে এখন ভাড়া গুনতে হয় ৭০ টাকা। এ ছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া ১০০ থেকে ১২০ টাকা। রেলপথটি লাভজনক হওয়ার কারণে পাথর পরিবহনের জন্য দেশের একমাত্র ছাতক-ভোলাগঞ্জ রজ্জুপথ (রোপওয়ে) নির্মাণ করা হয়েছে। ছাতকে রয়েছে রেলওয়ের তিন শতাধিক একর ভূমি ও অর্ধশতাধিক স্থাপনা। এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথটি দ্রুত সংস্কারের দাবি স্থানীয়দের।

 

সল্প বেতনে চাকুরি করা সুদিপ তারণ জানান, আগে কম খরচে ট্রেনে সিলেটে যাওয়া যেত। এখন বাসে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যেতে হয়। খরচও বেড়েছে বেতন বাড়ে নি। যেতে সময়ও লাগে বেশি অনেক। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাতায়াতে।

 

এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, সুনামগঞ্জের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ছাতক-সিলেট রেলপথটি সংস্কার ও চালুর ব্যাপারে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ছাতক রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এ ই এন) জোবায়ের আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বন্যায় রেলপথের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রেলপথের ক্ষয়-ক্ষতির সঠিক পরিসংখ্যান ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন। মেরামত সম্পন্ন হলে পরে রেলপথ চালুর জন্য আমরা চেষ্টা করবো।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |