শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২১ পূর্বাহ্ন

আপডেট
শ্রীলঙ্কায় ফিরলেন পালিয়ে বিদেশ যাওয়া গোতাবায়া

শ্রীলঙ্কায় ফিরলেন পালিয়ে বিদেশ যাওয়া গোতাবায়া

ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পালিয়ে দেশত্যাগের দেড় মাসেরও বেশি সময় পর দেশে ফিরেছেন শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। গত জুলাইয়ের দেশত্যাগের পর প্রথমে মালদ্বীপ, সেখান থেকে সিঙ্গাপুর, পরে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান তিনি।

স্থানীয় সময় শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত ১২টার পর সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ব্যাংকক থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে কলম্বোর অদূরে বন্দরনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। এ সময় বিমানবন্দরে তার দলের আইনপ্রণেতারা তাকে স্বাগত জানান। পরে সশস্ত্র সৈন্যদের কড়া পাহারা দিয়ে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন রাজাপাকসে।

সাবেক এই রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, রাজাপাকসে কলম্বোতে একটি সরকারি বাসভবনে থাকবেন, তার জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. অরুণা কুলাতুঙ্গা বলেছেন, রাজাপাকসেও একটি সরকারি বাসস্থান পাবেন, যা তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীকে হস্তান্তর করা হবে।

গত জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাতের আঁধারে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদে থাকা অবস্থায়ই একটি সামরিক বিমানে করে গোতাবায়া রাজাপাকসে মালদ্বীপ পালিয়ে যান। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ অনুমোদনের পর রাজাপাকসে এবং তার স্ত্রী কাতুনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুই দেহরক্ষীসহ মালদ্বীপে পাড়ি জমান। মূলত বিমান বাহিনীর একটি ফ্লাইটে তাদের দেশত্যাগের সুযোগ দেওয়া হয়।

গত ১৩ জুলাই গোপনে দেশত্যাগ করে মালদ্বীপ যান রাজাপাকসে। পরদিন ১৪ জুলাই সৌদি আরবের একটি ফ্লাইটে করে যান সিঙ্গাপুরে। সে দেশের সরকার তাকে ১৪ দিনের ‘ভিজিট পাস’ দেয়। তবে সিঙ্গাপুরে প্রবেশের পরই দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি ব্যক্তিগত সফরে গেছেন। সিঙ্গাপুর অবস্থানের সময় ১৪ জুলাই নিজের পদত্যাগপত্র দেশে পাঠান গোতাবায়া। ১৫ জুলাই তার আনুষ্ঠানিক পদত্যাগের ঘোষণা দেন শ্রীলঙ্কার সংসদ স্পিকার।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারি, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত তলানিতে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো।

এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কাকে ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার প্রাথমিক এক চুক্তিতে (স্টাফ লেভেল) পৌঁছেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আগামী চার বছর ধরে এই অর্থ শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া হবে বলে গত বৃহস্পতিবার বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি ঘোষণা দিয়েছে।

কলম্বোতে আইএমএফের প্রতিনিধি দলের টানা ৯ দিনের আলোচনা শেষে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার নতুন তহবিল-সমর্থিত কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ঋণের কাঠামো পুনর্গঠন করা।

সংস্থাটি বলেছে, ঋণের স্থায়িত্ব এবং অর্থায়নের মাঝে যে নিবিড় শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা থেকে পরিত্রাণের জন্য পাওনাদারদের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা এবং বহুপাক্ষিক অংশীদারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থায়নের প্রয়োজন হবে শ্রীলঙ্কার।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |