বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১৩ পূর্বাহ্ন

শেরপুরে মাটিতে পুতে রাখা গৃহবধুর লাশ উদ্ধার গ্রেফতার ২

শেরপুরে মাটিতে পুতে রাখা গৃহবধুর লাশ উদ্ধার গ্রেফতার ২

শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুরের নালিতাবাড়ীর একটি সমতল বনভূমির জঙ্গল থেকে কাকের ডাকে সনাক্তের পর মাটি খুঁড়ে উদ্ধারকৃত নাছিমা বেগম এর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করেছে থানা পুলিশ। হত্যাকান্ডের ৫ দিন পর লাশ উদ্ধার এবং লাশ উদ্ধারের ১১ দিন পর চাঞ্চল্যকর তথ্যের পাশাপাশি পুলিশ হেলিম মিয়া (৪০) ও নজরুল ইসলাম (৩০) নামের দুই অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে। আজ মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, গত ২০ আগস্ট শনিবার বিকেলে পূর্ব মানিককুড়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন গ্রাম পুলিশ আমির আলীর স্ত্রী ও ৫ সন্তানের জননী নাছিমা বেগম (৩৫)। এরপর ২৩ আগস্ট মঙ্গলবার নাছিমার স্বামী নালিতাবাড়ী থানায় নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করেন। ২৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল দশটার দিকে নাছিমার মা’সহ স্বজনেরা বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে থাকা বিশিগিরিপাড়া গ্রামে বন বিভাগের সমতল বনভূমির জঙ্গলে নাছিমার সন্ধান করছিলেন। এসময় একদল কাক জঙ্গলে ডাকাডাকি করায় নাছিমার মা ঝোপের মাঝে ডুকে গন্ধ ও মাছির উপস্থিতি টের পান। পরে আরও সামনে এগুলে মাটিতে পুঁতে রাখা লাশের দেহাবশেষ বেড়িয়ে থাকায় হাতের চুরি ও ওড়না দেখে মেয়ের লাশ সনাক্ত করেন তিনি। খবর পেয়ে থানা পুলিশ, সিআইডি, সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট ও র‌্যাব সদস্যরা গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত ও লাশ উদ্ধার করে।

এদিকে, সন্দেহভাজন হিসেবে একই সময়ে হেলিম মিয়াকে (৪০) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তবে সন্দেহভাজন অপর অপরাধী নজরুল ইসলাম (৩০) ততক্ষণে পালিয়ে যায়। পুলিশি তদন্তে বেড়িয়ে আসে, ২০ আগস্ট শনিবার বিকেলে ওই বাগানের পাশে থাকা নজরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে ৫০ টাকা ধার চান নাছিমা। এসময় ৫০ টাকা ধার দিলে নজরুলের স্ত্রী বাড়িতে না থাকায় নাছিমা তাকে শারিরিক সম্পর্কের কথা বলে বাগানে ডেকে নিয়ে যান। ঝোপের আড়ালে গিয়ে দু’জনে মিলে প্রায় ২০-২৫ মিনিট শারিরিক সম্পর্ক করে বেড়িয়ে আসছিলেন। এসময় সেখান দিয়ে আসতে থাকা হেলিম ওরফে ইলিম তাদের দেখে ফেলে বিষয়টি প্রকাশের ভয় দেখায়। একপর্যায়ে নাছিমাকে টেনে ঝোপে নিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সাথে থাকা অলঙ্কার খোলে নেওয়ার চেষ্টা করে হেলিম।

এতে বাঁধা দিলে নাছিমার গলায় থাকা ওড়না দিয়ে গলায় পেচিয়ে ধরে এবং নজরুলকে টেনে ধরতে বলে হেলিম। পরে উভয়ে মিলে দুইপাশে টেনে ধরলে নাছিমা শ্বাসরোধ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। এসময় হেলিম নাছিমার বুকে কয়েকটি লাথি দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর হেলিমের কথামতো নজরুল বাড়ি থেকে কোদাল নিয়ে প্রথমে একটি গর্ত করার চেষ্টা করে। হেলিম তা নিষেধ করে ঝোপের ভিতরে গিয়ে আরেকটি গর্ত করে নিজেই। এরপর নজরুল কাঁধে করে নাছিমাকে নিলে উভয়ে মিলে নাছিমাকে মাটিচাপা দেয়। সাথে থাকা অলঙ্কার খোলে নেয় হেলিম।

অপরদিকে, পুলিশি তদন্তে নজরুলের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে গত ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঢাকার বংশাল এলাকা থেকে নজরুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে উভয়ের জবানবন্দি গ্রহণকালে তারা দোষ স্বীকার করায় মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |