বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২২ পূর্বাহ্ন

ব্র্যাক কর্মী থেকে কৃষানী নুরজাহান বেগম 

ব্র্যাক কর্মী থেকে কৃষানী নুরজাহান বেগম 

আমিনুল ইসলাম,ভূঞাপুর:
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় ৩ দিন ব্যাপী কৃষি মেলা-২০২২ এর উদ্বোধন হয়েছে। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে আলোচনা সভা ও মেলার শুভ উদ্ধোধন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ ইশরাত জাহানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মোঃ হুমায়ূন কবীর। এসময় মেলার উদ্ধোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোছাঃ নার্গিস বেগম প্রমুখ।
মেলায় কথা হয় উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের চরনিকলা গ্রামের কৃষানী নূরজাহান এর সাথে, তিনি বলেন আমি মাস্টার্স পাশ করে ব্র্যাক এনজিও এরিয়া ম্যানাজার হিসেবে কর্মরত থেকে অবসর নিয়ে নিজে উদ্যোগী হয়ে নার্সারী করি। নিজের নার্সারীর উৎপাদিত ফুল, ফলজ,বনজ ও ওষধির ও চারা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন । তার জায়গা-জমি ছিল না বললেই চলে। সাংসারিক কাজের ফাঁকে তিনি দীর্ঘদিন শ্রমিকদের কাজ করে সামান্য অর্থ উপার্জন করতেন। এতে তার সংসার চলত কষ্টে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থেকে প্রশিক্ষণ শেষে আজ থেকে ষোল বছর আগে নিজের বিশ শতাংশ জমিতে নানা জাতের ফলজ,বনজ ও ওষধির বিজ সংগ্রহ করে চারা উৎপাদন করেন। সেই চারা হাট-বাজারে বিক্রি করেন। এতে তার বেশ মুনাফা হয়। মুনাফার টাকায় পাঁচ বিঘা জমি এগ্রিমেন্ট ও একবিঘা ক্রয় করেন। এই মোট ছয়বিঘা জমিতে ফলজ,বনজ ও ওষধি জাতীয় গাছের চারার নার্সারী রয়েছে। প্রায় তিন বছর আগে একলাখ টাকায় পনের কাঠা জমি এগ্রিমেন্ট নেন। এই জমিতে শুরু করেন ফুল চাষ। তার চাষ করা ফুলের জাতের মধ্যে রয়েছে গোলাপ,গাঁদা, চন্দন মল্লিক,কৃষমাস,টগর ও জবাসহ প্রভুতি। জমিতে যখন নানা জাতের ও নানা রঙের ফুল একসাথে ফুটে ওঠে তখন আনন্দে মন ভরে ওঠে ও এলাকায় ফুলের মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। তার উৎপাদিত ফুল নিজ ভ্যানগাড়িতে বহন করে বিভিন্ন হাট-বাজার,মেলা ও গ্রামাঞ্চলে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন তার ম্যানাজার সাইফুল। নার্সারীতেও বিক্রি করেন। তিনি মনে করেন ফলজ,বনজ ও ওষধি গাছের চারার তুলনায় বর্তমানে ফুল ও ফুলগাছের চাহিদা বেশি এবং মুনাফাও বেশি। তাই তিনি ফুল চাষে ঝুঁকে পড়েন। তিনি টপসহ প্রতিটি ফুলগাছ বিক্রি করা হয় ৪০-৪৫ টাকা। শুধু ফুলগাছ বিক্রি করা হয় ১০-২০ টাকা। এতে প্রতিদিন গড়ে একহাজার থেকে দেড়হাজার ফুল বিক্রি হয়। প্রতিনিয়ত সকালে নার্সারী পরিচর্যা করি। পরিচর্যার কাজ শেষ করে খাওয়া-দাওয়া সেরে ভ্যানগাড়িতে ফূলগাছ উঠিয়ে দিয়ে বিক্রির জন্য পাঠিয়ে দেন গ্রামাঞ্চলে ও পড়ন্ত বেলায় হাট-বাজারে। বিক্রি শেষে বাড়ি ফিরি সন্ধ্যায় তার ম্যানাজার সাইফুল । তিনি আরো জানিয়েছেন, ফুল ও নানা জাতের গাছের চারা বিক্রির টাকায় এ পর্যন্ত একটি আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ,দেড় বিঘা জমি ক্রয়,এক বিঘা জমি এগ্রিমেন্ট,বিশহাজার টাকায় একটি ভ্যানগাড়ি ক্রয় করতে পারছি। আমি একজন সফল নার্সরী। আমার সংসারে এখন আর দুঃখ-কষ্ট নেই। বিয়ে সাদী করা হয়নি এখন এই নার্সারী আমার সংসার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মোঃ হুমায়ূন কবীর বলেন দিনদিন ফুলের চাহিদা বেড়েছে। বিভিন্ন দিবস উদযাপন,বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ নানা কাজে ফুলের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এখন আর আগের মতো বাহির থেকে ফুল কিনতে হয়না। ফুল চাষ করে তিনি একদিকে লাভবান হচ্ছেন,অন্যদিকে এলাকার মানুষের ফুলের চাহিদা পূরণ করছেন। ফুলচাষ একটি লাভজনক ফসল। ফুলচাষীদের আমরা যথাযথ সুপরামর্শ ও নানা ভাবে সহযোগিতা করে আসছি।
কৃষি মেলায় ১৬ টি স্টলে  বিভিন্ন ধরণের ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ, আধুনিককরণ ও বাণিজ্যিকরণ সহজকরণে কৃষি যন্ত্রপাতির সমাহার দেখা গেছে। অনুষ্ঠান শেষে কৃষকদের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |