শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৩ অপরাহ্ন

আপডেট
পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখবে ভোক্তা অধিদপ্তর

পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখবে ভোক্তা অধিদপ্তর

ভোক্তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিত্যপণ্যের যৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সে লক্ষ্যে উৎপাদন কারখানাগুলো পরিদর্শন করে পণ্যের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা খুঁজে বের করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভোক্তা ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানান ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে এ সভায় নিত্যব্যবহার্য পণ্য সাবান, ডিটারজেন্ট, টুথপেস্ট, লিকুইড ক্লিনারের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে ইউনিলিভারের সিএফও জাহিদ মালিথা, স্কয়ারের হেড অব অপারেশন মালিক সাইদ, এসিআইয়ের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পলাশ হোসাইনসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।

ভোক্তাদের অভিযোগ, কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে বাজারেও সব ধরনের নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো মনে করে, পণ্যের দাম সমন্বয়ের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত চতুরতার আশ্রয় নিচ্ছে উৎপাদন ও বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলো। উৎপাদন বা পরিবহন খরচ যতটা বেড়েছে, তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি বাড়ানো হচ্ছে পণ্যের দাম।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে কয়েক মাস ধরেই বিশ্ববাজারের মতো দেশের বাজারেও নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ডলার ও কাঁচামালের দামসহ উৎপাদন খরচ যে পরিমাণ বেড়েছে তাতে পণ্যের দাম আরও বাড়ানো দরকার। যদিও তারা ভোক্তাদের কথা বিবেচনায় রেখে সে পরিমাণ দাম বাড়াতে পারছেন না।

মতবিনিময় সভায় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা দাবি করেন, ২০২০ সালের শেষ দিক থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দামসহ উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে এর অর্ধেক। বিগত সময়ে দাম সমন্বয়ও করা হয়নি। এ অবস্থায় কোম্পানিগুলোর পিঠ এখন দেওয়ালে ঠেকে যাচ্ছে। এর কিছুটা চাপ পড়ছে ভোক্তাদের ওপর।

সভায় ভোক্তা অধিদপ্তর বাজারের তথ্য তুলে ধরে জানায়, ২০২০ সালে আধা কেজির যে ডিটারজেন্টের দাম ছিল ৬০ টাকা, সেটি এখন ৯০ টাকা। ৫২ টাকার সাবানের দামও এখন ৭৫ টাকা। অর্থাৎ এ দুই পণ্যের দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত। এর কারণ হিসেবে কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা বলেন, তাদের টয়লেট্রিজ পণ্যের ৮০ শতাংশ কাঁচামালই আমদানি করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে এসব কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৯৬ শতাংশ পর্যন্ত।

সভায় কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) প্রতিনিধি কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘ব্র্যান্ড-ভ্যালু আর মানুষের ইমোশনকে পুঁজি করে বড় কোম্পানিগুলো ভোক্তাদের ব্ল্যাকমেইল করছে কি না, সে বিষয়ে নজরদারি করা উচিত।’

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘কোনো পণ্যের দাম বাড়াতে হলে তার পক্ষে যৌক্তিক কারণ দেখাতে হবে কোম্পানিগুলোকে। সেজন্য তাদের ফ্যাক্টরিতে আমরা যাব। কত দামে কাঁচামাল আমদানি হচ্ছে, কোন পণ্য উৎপাদনে কত খরচ হচ্ছে এবং কোন পণ্য কী দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে সেগুলো আমরা বিশ্লেষণ করতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘পরবর্তীসময়ে আমরা পর্যবেক্ষণ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দেব। এরপর বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্তে আসবে।’

সফিকুজ্জামান বলেন, ‘এখন বাড়তি দাম দিয়ে নিত্যব্যবহার্য পণ্য কিনতে ভোক্তাদের কষ্ট হচ্ছে। বিশেষত সীমিত ও নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট বেশি হচ্ছে। সে কারণেই আমরা মতবিনিময় সভায় বসেছি। পণ্যের যৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে কিনা, সেটা আমরা দেখতে চাই।’

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |