বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৪ পূর্বাহ্ন

ভাঙা আয়নায় মুখ দেখলে বিপদ হয়?

ভাঙা আয়নায় মুখ দেখলে বিপদ হয়?

মানবসমাজে বহুল ব্যবহৃত একটি জিনিস আয়না। যাতে মানুষ তার নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়। ফলে নিজের সাজ-সজ্জায় কোনো ত্রুটি থাকলে তা ঠিক করে নিতে পারে। আয়না মানুষের বাহ্যিক ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিতে সাহায্য করে।

এ জন্যই মহানবী (সা.) এক মুমিনকে অন্য মুমিনের আয়না বলে আখ্যা দিয়েছেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য আয়নাস্বরূপ এবং এক মুমিন অপর মুমিনের ভাই। তারা একে অপরের ক্ষতি করা হতে রক্ষা করে এবং তার অনুপস্থিতিতে তাকে রক্ষা করে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯১৮)

অর্থাৎ এক মুমিন তার অন্য মুমিন ভাইয়ের মধ্যে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখলে তাকে অবহিত করে সেই ত্রুটি থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করবে এবং অন্যদের থেকে তার সেই ত্রুটিগুলো গোপন রাখবে।

কোনো বিষয়ের স্বচ্ছতা ও স্পষ্টতা বোঝাতে গিয়েও অনেক ক্ষেত্রে আয়না দিয়ে উদাহরণ দেওয়া হয়। তবে আয়নাকে কেন্দ্র করে কিছু কুসংস্কারও সমাজে প্রচলিত আছে। যেমন আমাদের দেশেও একটি কথা প্রচলিত আছে— ভাঙা আয়নায় চেহারা দেখা ভালো নয় কিংবা ভাঙা আয়নায় চেহারা দেখলে বিপদ আসে।

এ রকম কুসংস্কার শুধু এই দেশেই প্রচলিত নয়, প্রাচীনকাল থেকে বহু দেশে আয়না নিয়ে বিভিন্ন রূপকথার গল্প প্রচলিত আছে; সে সঙ্গে রটেছে আয়নাকেন্দ্রিক বিভিন্ন কুসংস্কার। প্রাচীন রোমানরা মনে করত মানুষের সাতটা করে জন্ম থাকে। আর কেউ যদি কোনো জন্মে একটা আয়না ভেঙে ফেলে তবে আয়নার ভাঙা টুকরাগুলোর ভেতরে সেই ব্যক্তির আত্মা আটকা পড়ে যায়। আবার পুনর্জন্ম না হওয়া পর্যন্ত সেই ব্যক্তির মুক্তি ঘটে না বলেই মনে করত রোমানরা।

প্রাচীন কিছু সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করা হতো যে আয়নার মধ্যে মানুষের আত্মা বা মানুষের ভেতরের প্রকৃত সত্তার ছায়া পড়ে। এ ধারণাটি হয়তো এই বিশ্বাস থেকে এসেছে যে ভ্যাম্পায়ার বা মানুষরূপী রাক্ষসদের আত্মা নেই। আর তাই তাদের কোনো ছায়া পড়ে না।

বাস্তবতা হলো, আয়না মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আনার কোনো শক্তি রাখে না। ফলে আয়নাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত কুসংস্কার ও অশুভ লক্ষণগুলো ভিত্তিহীন। এগুলো বিশ্বাস করলে ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবদুল্লাহ (বিন মাসউদ) (রা.) থেকে বর্ণিত, বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন. অশুভ লক্ষণ (বিশ্বাস করা) শিরকি কাজ। বর্ণনাকারী এ ধরনের বিশ্বাসগত দুর্বলতা থেকে মুক্তির একটি চিকিৎসাও দিয়েছেন, তা হলো—‘আমাদের মধ্যে অশুভ লক্ষণের ধারণা আসে, তবে আল্লাহর ওপর ভরসার দ্বারা তা দূরীভূত হয়। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৫৩৮)

শুধু আয়না কেন, কোনো কিছুতেই কুলক্ষণ আছে, ধারণা করা অজ্ঞতা। মহানবী (সা.) তাঁঁর উম্মতদের এ ধরনের কুসংস্কারের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। কুসংস্কারে বিশ্বাস মানুষকে প্রকৃত দ্বিন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। ঈমানকে ত্রুটিযুক্ত করে। মানুষকে কুফর, শিরকে লিপ্ত করে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে ছাড়ে।

আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদাহ (রহ.) তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, মহানবী (সা.) কোনো কিছুকেই কুলক্ষণ মনে করতেন না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৯২০)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, সাদ ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, ‘পেঁচা অশুভ নয়, ছোঁয়াচে রোগ নেই এবং কোনো জিনিস অশুভ হওয়া ভিত্তিহীন। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৯২১)

অতএব, ভাঙা আয়নায় মুখ দেখাকে অশুভ মনে করা ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় কাজ। আর এ ধরনের বিশ্বাস অন্তরে শিরকের বাসা বেঁধে দেয়। হ্যাঁ, ভাঙা আয়না ব্যবহার করতে গিয়ে অসতর্কতাবশত হাত-পা কেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে বা বাসার ছোট বাচ্চাদের তা দিয়ে কোনো অঘটন ঘটানোর আশঙ্কা থাকে, তখন অবশ্যই তা ব্যবহার থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। কিন্তু আয়নাকেন্দ্রিক প্রচলিত কুসংস্কারে বিশ্বাস করা যাবে না।

মহান আল্লাহ এ ধরনের কুসংস্কার থেকে সবাইকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |