মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:২৪ অপরাহ্ন

আপডেট
নওয়াব হাবিবুল্লাহ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ,হত্যা মামলায় গ্রেফতার কাওরাইদে রেল লাইনের উপর ঝুঁকিপূর্ন অবৈধ বাজার টঙ্গীতে সাংবাদিকের মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত ৩ আসামি গ্রেফতার খাগড়াছড়িতে ডিমের পুষ্টিগুণ বিষয়ক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত জয়পুরহাটে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় জীবিকা ও নিরাপত্তা উন্নয়ন প্রকল্পের অবহিতকরণ নিম্নচাপে পরিণত সাগরের সুস্পষ্ট লঘুচাপ, আরও ঘনীভূত হওয়ার আভাস দোহারে প্রশাসনের বিশেষ অভিযানে জেল জরিমানা আদালতে কাঁদলেন ব্যারিস্টার সুমন, বললেন ‘সরি’ আরেক দফা বাড়ছে নীতি সুদহার, বাড়বে সব ধরনের সুদ এসআই অব্যাহতির পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ আছে কি না, জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
অপরিকল্পিত শিপইয়ার্ডে স্বাস্থ্যঝুঁকি, সামুদ্রিক মাছে ক্ষতিকর ধাতু

অপরিকল্পিত শিপইয়ার্ডে স্বাস্থ্যঝুঁকি, সামুদ্রিক মাছে ক্ষতিকর ধাতু

চট্টগ্রাম: সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিপব্রেকিং ইয়ার্ড ও সংলগ্ন শিল্পকারখানার কারণে সমুদ্রসহ আশপাশের উপকূলীয় এলাকায় বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। পলি (প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট উপাদান) ও সামুদ্রিক মাছ পরীক্ষায় পাওয়া গেছে বিভিন্ন ধাতুর অস্তিত্ব

সম্প্রতি নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক চিকিৎসা এবং বিজ্ঞানবিষয়ক প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ারের ‘এনভায়রনমেন্টাল পলিউশান’ নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও ক্যামিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

‘ইফেক্ট অব শিপব্রেকিং অন স্পেশিয়েটেম্পরাল ডায়নামিক অব মেটাল/লয়েড ইন সেডিম্যান্ট অ্যান্ড সি-ফুড সেইফটি ইন দ্য বে অফ বেঙ্গল’ নামক এ গবেষণা জার্নালে সামুদ্রিক ৬ প্রজাতির ১৭২টি সি-ফুড ও সামুদ্রিক বিভিন্ন অঞ্চলের পলি পরীক্ষা করা হয়। সি-ফুডের মধ্যে লইট্টা, ইলিশ, কাঁকড়া, আইড়, চিংড়ি ও কই বোলা মাছের নমুনা রয়েছে।

গবেষণায় দেখা যায়, সমুদ্র তীরবর্তী বরগুনা যেখানে শিল্পকারখানা নেই, সেখানে দূষণের মাত্রা খুবই কম। অন্যদিকে যেসব এলাকায় শিপব্রেকিং ইয়ার্ড ও শিল্প কারখানা রয়েছে সেসব এলাকায় তুলনামূলক দূষণের মাত্রা বেশি। এসব এলাকার পলি এবং সি-ফুডে লেড (সিসা), ক্যাডমিয়াম, কপার, জিংকসহ বিভিন্ন ধরনের ধাতুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে লইট্টা ও কাঁকড়ায় এসব ধাতুর পরিমাণ বেশি। এ ছাড়া আইড় মাছ ও চিংড়িতেও ভারী ধাতুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে ল্যাব টেস্টে।

২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় তিন বছর ধরে চলে এ গবেষণা। শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুমে এসব নমুনা সংগ্রহ করেন গবেষকরা। যা পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কিউএইএইচএস (QAEHS) ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়।

এতে দেখা যায়, শুষ্ক মৌসুমে শিপব্রেকিং ইয়ার্ড এলাকার পলিতে সাধারণের তুলনায় ধাতুর পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে। তবে সি-ফুডের ক্ষেত্রে বর্ষা মৌসুমে সংগ্রহ করা নমুনায় ধাতুর পরিমাণ বেশি বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। বিশেষ করে পানির একেবারে নিচের স্তরে থাকা মাছের মধ্যে এ ধাতুর পরিমাণ বেশি।

সামুদ্রিক মাছ ও পলি পরীক্ষায় দেখা যায়, অন্যান্য ধাতুর পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও লেড ক্যাডমিয়ামের পরিমাণ বেশি। লেডের ক্ষেত্রে উপস্থিতির গড় হার ২ দশমিক ৬ মাইক্রোগ্রাম/ডেসিলিটার এবং ক্যাডমিয়ামের ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ৩৩ মাইক্রোগ্রাম/ডেসিলিটার। যা ইউনাইটেড স্টেটস এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির (ইউএসইপিএ) তথ্যানুযায়ী লেডের স্বাভাবিক মাত্রা শূন্য দশমিক ৩ মাইক্রোগ্রাম/ডেসিলিটার এবং ক্যাডমিয়ামের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক মাত্রা শূন্য দশমিক ০৩ মাইক্রোগ্রাম/ডেসিলিটার।

গবেষকরা বলছেন, পলিতে ধাতুর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে পরিবেশগত ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষ করে সামুদ্রিক যে বাস্তুসংস্থান রয়েছে তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। এ ছাড়া পলি সংশ্লিষ্ট যেসব সি-ফুড রয়েছে এতে ধাতুর সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে, যা খাওয়ার মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে। গবেষকরা মনে করছেন, ভারি ধাতু থাকা সি-ফুড ক্রমাগত গ্রহণ করলে ক্যান্সারের মতো ঝুঁকি তৈরি করে। তাই পরিবেশ রক্ষা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে শিল্প কারখানা পরিচালনার পরামর্শ গবেষকদের।

গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ফলিত রসায়ন ও ক্যামিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি গবেষণারত। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে সম্প্রতি বেগুন কাণ্ডের কারণে এ গবেষণায় সহযোগী হিসেবে থাকা একাধিক গবেষকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কেউ গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |