বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৩ অপরাহ্ন
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা বা এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা কমে যাবে। এর প্রস্তুতির জন্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং বাজার সম্প্রসারণের কথা বলা হলেও অগ্রগতি নেই। শুধু আলোচনা করে বাজার সুবিধা পাওয়া সহজ হবে না। এজন্য প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ডব্লিউটিও-এমসি-১২ আউটকাম :নেক্সট স্টেপস ফর বাংলাদেশ এজ এ গ্র্যাজুয়েটিং এলডিসি’ শিরোনামে আয়োজিত সংলাপে বক্তারা এ কথা বলেন। ডব্লিউটিওর সর্বশেষ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ফলাফল নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এই সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান। সঞ্চালনা করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এখন শুধু পণ্য বা বাণিজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না, তারা এখন পণ্য উত্পাদন প্রক্রিয়ায় চলে গেছে। শুধু পরিবেশ বা শ্রমিক অধিকার নয়, এখন মানবাধিকার ইস্যুগুলোও সামনে চলে আসবে। এর জন্য এলডিসি উত্তোরণ পরবর্তী সময়ের প্রস্তুতিতে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনও আনতে হবে। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরো বলেন, ডব্লিউটিওর উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে আমাকে প্রশ্ন করা হলো, তোমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বলে গেল দেশের এত এত উন্নতি হয়েছে। ২০৪১ সালে উচ্চ আয়ের দেশে উপনীত হবে। আবার ডব্লিউটিওর বৈঠকে বলা হলো, এলডিসি উত্তোরণের পরেও আগের সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলে কোনটা সঠিক। দেবপ্রিয় বলেন, আমাদের আগে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আনতে হবে। এখন থেকে উন্নয়নশীল দেশ বিবেচনা করে আমাদেরকে এগুতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও থাকা দরকার। এসডিজি, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ সকল উন্নয়ন পরিকল্পনাকে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সঙ্গে মিল রেখে একটি উত্তোরণ পরিকল্পনায় নিয়ে আসতে হবে। শুধু আলোচনা করে বাজার সুবিধা পাওয়া সহজ হবে না।
অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটনাকে অনেক বড় করে দেখা হচ্ছে। কারণ আগে যারা এলডিসি উত্তোরণ করেছে তারা আকারে খুব ছোট দেশ। তবে এবারের ডব্লিউটিও বৈঠকে সমস্যার স্বীকৃতি আছে কিন্তু প্রতিশ্রুতি নেই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন বলেন, রপ্তানির সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বহু বছর ধরেই আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু তাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। গবেষণা বাড়াতে হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, রপ্তানি বহুমুখীকরণের কথা বলা হলেও এখনো ৮৩ শতাংশ আসছে তৈরি পোশাক শিল্প হতে। রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলে ১২টি খাত নিয়ে কাজ চলছে। আশা করছি, এখান থেকে ভালো ফল পাব। তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সংকট আরো গভীর হয়েছে। তা মোকাবিলায় এফবিসিসিআই একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে এবং এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এতে ভর্তুকি, ট্যারিফ কাঠামো ও পণ্য বহুমুখীকরণের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আমাদের অনেক সম্ভাবনাও রয়েছে যেমন জিএসপি সুবিধা ছাড়াই মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি ভালো হচ্ছে। তাহলে অন্য বাজারে পারব না কেন। তৈরি পোশাক শিল্পের ৫৭-৬০ শতাংশ যাচ্ছে ইউরোপের বাজারে। তারা ২০২৬ সালের পরেও সুবিধা অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, বর্তমানে পলিটিক্যাল ইকনোমিতে আমি তেমন আশাবাদী নই। কারণ অনেক দেশই নিজেদের স্বার্থে ডব্লিউটিওকে পাশ কাটিয়ে ভূ-রাজনীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছে।