শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২৮ অপরাহ্ন

আপডেট
দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত নরসিংদী জেলা কারাগার

দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত নরসিংদী জেলা কারাগার

খায়রুল আলম রফিক :

বেড়েছে সেবার মান, কারা অভ্যন্তরের সামগ্রিক উন্নয়নের চিত্র ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে খুশি কারাবন্দিরা। সবমিলিয়ে বদলে গেছে নরসিংদী জেলা কারাগারের চিত্র। বর্তমান জেল সুপার মোঃ শফিফুল আলমের দক্ষ পরিচালনায় নরসিংদী জেলা কারাগার এখন দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত কারাগার । এমনটাই জানালেন সদ্য জামিনে মুক্ত বেশ কয়েকজন কারাবন্দি। তাদের মতে, বর্তমান জেল সুপার মো. শফিউল আলমের যোগ্য নেতৃত্বে ও কঠোর পদক্ষেপে নরসিংদী জেলা কারাগার বাংলাদেশের অন্যান্য কারাগারের তুলনায় ব্যতিক্রম এক নজির সৃষ্টি করেছে।

‘রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ’ এ স্লোগানকে বাস্তবে রূপ দিতে নরসিংদী জেলা কারাগারের ভেতরে ও বাইরে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একাগ্রচিত্তে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। জেলার, ডেপুটি জেলার, সুবেদার, প্রধান কারারক্ষী ও কারারক্ষীরা বন্দিদের আন্তরিক সেবা দান ও ভালো ব্যবহার দিয়ে নজির সৃষ্টি করেছেন। কারাগারের স্বার্থ রক্ষায় তারা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি, মো. শফিউল আলম আলম জেল সুপার হিসেবে যোগদান করার পর থেকে কারা অধিদপ্তরের বিধি-বিধান অনুসরণ করেই এই কারাগারটি পরিচালিত হচ্ছে। বিধি মোতাবেক প্রাপ্য সকল সুবিধা বন্দিদের সমানভাবে দেয়া হচ্ছে। সেখানে টাকার বিনিময়ে আলাদা কোনো সুবিধা দেয়ার সুযোগ নেই।
বিশেষ করে জেল সুপারের নেতৃত্বে কারাগারে শান্তি-শৃঙ্খলা সৃষ্টি, কারা মনিটরিং, অসুস্থ বন্দিদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, কারা ক্যান্টিনে ন্যায্যমূল্যের ব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক তদারকি, বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ, উন্নতমানের খাবার পরিবেশন, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, সর্বোপরি বন্দিদের মৌলিক চাহিদাসমূহ পৌঁছে দিতে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

শতভাগ সততায় অবিচল থেকে এই করাগারটিকে দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত কারাগারে রূপান্তর করতে রাত দিন কাজ করে যাচ্ছেন জেল সুপার মো. শফিউল আলম। নরসিংদী জেলা কারাগার ঘুরে দেখা গেছে, ফুলে ফলে ভরপুর কারাগারটিতে শীত মৌসুমে অনায়াসে মিলেছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, গাজর, খিরা (শশা), টমেটো, কাঁচা মরিচ, বেগুন ও নানা জাতের শাক-সবজি। নিজেরাই উৎপাদন করে তরতাজা এসব নির্ভেজাল সবজি খেয়ে পরম তৃপ্ত বন্দিরা। এ ছাড়া আগের ছোট্ট পরিসরের অপরিচ্ছন্ন রান্নাঘরটি বর্তমানে সম্প্রসারিত হয়েছে।

সদ্য কারামুক্ত রাসেল প্রতিদিনের কাগজ কে জানান, তারা একটি মামলায় বেশ কিছুদিন কারান্তরীণ ছিলেন। বর্তমানে কারাগারের পরিবেশ বেশ চমৎকার। এখানকার প্রতিটি বন্দিকে সমান সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারামুক্ত আজিজুর রহমান বলেন, কারাগারে উন্নতমানের খাবার দেয়া হয় বন্দিদের। কারা কর্তৃপক্ষ খুব সুন্দরভাবে কারাগারে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

মাদবদীর ইকবাল সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, আমার দেখামতে, কোনো মাদক সিন্ডিকেট বাড়তি কোনো সুযোগ-সুবিধা তথা আরাম-আয়েসে থাকতে না পারে সেজন্য জেল সুপার সব সময় সজাগ রয়েছেন। প্রতিদিন তিনি কারাগারের সকল ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন এবং বন্দি মাদক সিন্ডিকেটের কারণে কারো অসুবিধা হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেন।

শুধু তাই নয়, মাদক সিন্ডিকেট যেন কোনো প্রকার অনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে না পারে সেজন্য কারারক্ষীদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। এ কারণে মাদক সিন্ডিকেট বিপাকে পড়েছে। তারা কোনো প্রকার বেআইনি সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে জেল সুপার শফিউল আলমকে বদলির পাঁয়তারা করছেন। জেল সুপার মো. শফিউল আলম বলেন, কারাগার একটি স্পর্শকাতর সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ দিন ধরে আমি এখানে কর্মরত।

কাঠামো ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য আমার সার্বিক প্রচেষ্টা ও কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় কারাগারের উন্নয়নের চিত্র পাল্টে দেওয়ার চেষ্টায় রয়েছি। এখানকার সেবার মান বাড়িয়েছি। মাদকের প্রবেশ যাতে না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি। এখানে অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো প্রশ্নই আসে না। যদি কারাগারের কোনো সদস্য অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরো জানান, কারাবন্দীরা সমাজ ও দেশের বোঝা নয়, কারামুক্ত হলেই তারা হবেন পরিবার ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ। ফেলে আসা অতীতের সব উশৃঙ্খল পথ ছেড়ে অলোর পথে ফিরিয়ে আনতে এসব হাজতি-কয়েদির কারাভ্যন্তরে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, বিনোদন, প্রশিক্ষণ দানসহ ও করা হচ্ছে জনহিতকর নানা প্রকার মোটিভেশন। শিশুদের বিনোদনের জন্য কারাগারে নির্মাণ করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ পার্ক।

মায়ের অপরাধে বিনা কারণে জেলে থাকা এসব শিশুদের জন্য রয়েছে ডে-কেয়ার (পরিচর্যা) সেন্টার। শিক্ষকরা রোজ তাদের প্রাথমিক ও মৌলিক শিক্ষা দিয়ে চলেছেন। কারাভ্যন্তরে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নকারীদের বেশিরভাগই হচ্ছেন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত ও স্বেচ্ছাশ্রমে আগ্রহীরা।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |