শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২১ অপরাহ্ন

আপডেট
কারাগারে মানুষ গড়ার কারিগর জেল সুপার নেছার আলমকে নিয়ে ফেসবুকে অপপ্রচার

কারাগারে মানুষ গড়ার কারিগর জেল সুপার নেছার আলমকে নিয়ে ফেসবুকে অপপ্রচার

নিজস্ব সংবাদদাতা :
আমার ব্রত একটাই। প্রতিদিন একজন করে মানুষকে পথে আনা। হিসেবটাও খুবই সোজা। প্রতিদিন একজন করে বছরে ৩’শ৬৫ জন। এভাবেই মানুষকে বদলে দেবার স্বপ্ন দেখি আমি। মোটিভেশন করে মানুষকে যদি সুপথে আনতে পারি তবে সেটাই হবে আমার সবচাইতে বড় প্রাপ্তি’। সরকারি দায়িত্বের বাইরে নিজের এই ব্রতের কথাই প্রতিদিনের কাগজকে বলছিলেন নেছার আলম (৪৮)।

 

গত ৮ জানুয়ারী থেকে  prison Leaks নামীয় একটি ফেক আইডি খুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অপপ্রচার চালিয়ে তার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন, সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করছে। ফেসবুকে এধরনের ভুয়া ও মানহানিকর পোস্ট প্রচার করা ও সরকারী দপ্তরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। এধরনের পোস্ট প্রচারকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুরের জেল সুপার নেছার আলম।

 

তিনি ইতিপূর্বে সুনামের সাথে গাজীপুর এবং কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার হিসাবে কর্মরত ছিলেন । বর্তমানে তিনি শরিয়তপুর জেলা কারাগারে জেল সুপার হিসাবে কর্মরত । তার সাফল্য দেখে একটি চক্র ফেক আইডি খুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। নেছার আলম জেলার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার তত্ত্বাবধানেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের যুদ্ধাপরাধী জামায়াত ও বিএনপির ৪ নেতা কামারুজ্জামান, আলী আহসান মুজাহিদ, মতিউর রহমান নিজামী ও সালাহউদ্দিন কাদেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এ সব ঘটনায় নানাভাবেই হুমকি ধামকি পেয়েছেন তিনি।

 

মৃত্যুদণ্ডে সরকারকে সহযোগিতা করায় আপনি আমাদের পরবর্তী টার্গেট। আমরা আপনাকে সপরিবারে খতম করে দেব’- মুঠোফোনে এমন হুমকি পেয়েও গায়ে মাখেননি নেছার আলম । ‘নিজের সততা,দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি অবিচল’- বলছিলেন নেছার আলম। জেল সুপার নেছার আলম বলেন, আমি দায়িত্ব পালনকালে এসব বিষয় ছিলো আমার জীবনের সবচাইতে বড় এবং স্মরণীয় ঘটনা। তাই শত হুমকি পায়ে ঠেলে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা নির্বিঘ্নে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করতে পেরেছি। নিঃসন্দেহে আমার পেশাগত জীবনের ইতিহাসে সেরা অর্জন এসব ঘটনা’- বেশ গর্বের সাথেই বলছিলেন নেছার আলম আরেকটি কারণে নেছার আলম ইতিহাস হয়ে থাকবেন। সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার গছিয়া গ্রামের মরহুম ফরিদ উদ্দিনের পুত্র নেছার আলম। ডাক নাম মুকুল। একভাই দুই বোনের মধ্যে জ্যেষ্ঠ মুকুল ছিলেন কলেজ শিক্ষক। সিলেট এমসি কলেজে দর্শনে স্নাতক করে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

 

মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে দিরাই জগদল কলেজে যোগ দেন শিক্ষক হিসেবে। বেশকিছু সময় শিক্ষকতার এক পর্যায়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দেবার বিষয়ে মনস্থির করেন তিনি। কারা অধিদপ্তরের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে পরীক্ষা দিয়ে যথারীতি উর্ত্তীণ হন। ১৯৯৯ সালের ১৫ জুলাই ডেপুটি জেলার হিসেবে যোগ দেন সরকারি দপ্তরে । তার আগে কারগারের চার দেয়ালের ভেতরের কার্যক্রম নিয়ে তেমন কোন ধারণাই ছিলো না নেছার আলমের। ‘প্রথম কর্মস্থল ছিলো যশোর। তারপর ঢাকা,চট্টগ্রাম,সিলেট,গাজীপুরসহ বিভিন্ন কারাগারে সুনাম ও সম্মানের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। জেল সুপার নেছার আলম কারাগারে আসা বন্দি ও কয়েদীদের প্রতি সব সময় সংবেদনশীল। প্রথম জীবনে কলেজ শিক্ষকতার স্মৃতিগুলো মিশে আছে তার রক্তে। নেছার আলমের লক্ষ্যই থাকে প্রতিদিন ন্যূনতম একজন মানুষকে জীবন সম্পর্কে বোঝানো।

 

তাকে অপরাধ ছেড়ে সুপথে আনা। এভাবেই ভিন্ন কায়দায় মানুষ গড়ার চেষ্টা করেন তিনি। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের মেয়ে ফাহিমা আলমকে জীবন সঙ্গী করেছেন তিনি। চার সন্তানের মধ্যে দুই ছেলেকে নিয়ে ফাহিমা আলম যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। নেছার আলম নিজেও ঘুরে এসেছেন সে দেশ। সেখানে অভিবাসী হবার সুযোগ পেয়েও হননি। কেন? কেনই বা হবো? পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন,”এটা আমার দেশ। আমার ভালোবাসা এই দেশ ঘিরে। গিন্নীর দিক দিয়ে আমার ১’শ ১৯ জন আত্মীয় ছাড়াও আমার নিজের বহু স্বজন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। সুযোগ পেয়েও আমি অভিবাসী হইনি। দুই ছেলে নিয়েই বন্দি ও কয়েদিদের বাইরে অবসর কাটে আমার। এদের একজন মেডিকেলে আর অন্যজন ব্যারিস্টারি পড়ছে। এখন ওদের নিয়েই যত স্বপ্ন আমার। আপনি তো ছিলেন ছাত্রলীগের নেতা। কেমন ছিলো সেসব দিন? ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগ করেছি এটা ঠিক।

 

ছিলাম সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। সেটা ইতিহাস। এখন তো আমি পুরোদস্তুর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে তখনকার জীবনটাই ছিলো অন্য রকম সে সময়ের স্মরণীয় কোন বিশেষ ঘটনা? অবশ্যই স্মরণীয় একটি ঘটনা আজো দাগ জ্বলজ্বলে স্মৃতি হয়ে ঠাঁই নিয়েছে আমার মনে। মাঘের রাত। কনকনে শীত। বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী লীগের অন্যতম বর্ষীয়ান শীর্ষ নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী সেই নেতা এসেছেন আমাদের এলাকায়। নির্বাচনী প্রচারে। সুরমা নদীর ঠাকুরভোগ ঘাটে পৌঁছে আটকে গেলেন। কোন নৌকা নেই। কর্মীদের নিয়ে নেতা বসে আছেন। ওদিকে সময় বয়ে যাচ্ছে।

 

কনকনে শীতের রাতের হিমশীতল নদীর পানিতে আমি ঝাঁপ দিলাম। তখনো কেউ কিছু বুঝতে পারেনি। ও পাড়ে সাঁতরে গেলাম। নৌকা নিয়ে এলাম। নেতা দেখে তো অবাক। আসলে তখনকার সময় ছাত্রলীগ আমাদের এটাই শিখিয়েছিলো। নেতাদের প্রতি তখনকার এই শ্রদ্ধা,ত্যাগ আর ভালোবাসাই ছিলো কর্মী হিসেবে আমাদের মূল্যবোধ। দেখেন ওই একটি ঘটনাতেই আব্দুস সামাদ আজাদের মতো ডাক সাইটে নেতা আমাকে তার জীবদ্দশায় মনে রেখেছিলেন ু স্মৃতি হাতড়ে আবেগে আপ্লুত হন নেছার আলম।

 

কারাগারের চার দেয়ালে থেকে নিজেকে কখনো অবরুদ্ধ মনে হয়না? আপনারা বাইরে থেকে কারাগার সম্পর্কে যা ভাবেন তা কিন্তু সব সময় সঠিক নয়। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কারা অধিদপ্তরকে পাল্টে দিয়েছেন। এখন কারাগার নয়। আমরা বলি সংশোধনাগার। এখানে মানুষ নিয়েই তো আমাদের কাজ। তাদের সুখ,দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতেই দিন কেটে যায়। বন্দি আর কয়েদি যাই বলেন না কেন। সবার আগে তারা মানুষ। আমরা ভাবি তাদের কল্যাণের কথা। সুপথে আনার কথা’। যোগ করেন শরীয়তপুর জেলা কারাগারের নেছার আলম। কোন ভবিষ্যত পরিকল্পনা? ‘অবশ্যই আছে। মানুষের সেবা করার। সরকারি চাকরি শেষে প্রত্যক্ষভাবে আরো বেশি মানুষকে সেবা করতে চাই।

 

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |