শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৫ পূর্বাহ্ন

আপডেট
প্রধানমন্ত্রীর ঘর না পেয়ে আশ্রয়ণের বারান্দায় রাত কাটান  ভিক্ষুক আসিয়া 

প্রধানমন্ত্রীর ঘর না পেয়ে আশ্রয়ণের বারান্দায় রাত কাটান  ভিক্ষুক আসিয়া 

মো. আব্দুল মান্নান, ফুলপুর
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর না পেয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পে অন্যের ঘরের বারান্দায় রাত কাটান ময়মনসিংহের ফুলপুরের আসিয়া খাতুন (বয়স আনুমানিক ৬৫) নামে এক ভিক্ষুক। আসিয়ার জন্ম হয়েছে উপজেলার ভাইটকান্দি ইউনিয়নে পরের বাড়িতে। জন্মের ৭দিন পরই তার বাবা গিয়াস উদ্দিন মারা যান। নানা ও মামুর আশ্রয়ে লালিত পালিত হওয়ার পর বিয়ে হয়েছিল উপজেলার পয়ারী ইউনিয়নের গুপ্তেরগাঁও গ্রামে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তার কোন ছেলে মেয়ে নেই। ৭ দিনের একটি পোষা মেয়ে এনে লালন পালন করে তাকে বিয়ে দিয়েছেন আসিয়া। তার সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে হাউমাউ করে কেঁদে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার জীবনডাই যাচ্ছে দুঃখে দুঃখে।
আমার কেউ নাই। আমারে সাত দিনের রাইখ্যা আমার বাপ মইরা গেছে। সারা জীবন পরের বাড়িতে বাউইল্যা থাইক্যাই দিন কাডাইছি। অহন এই বুড়া বয়সেও পাড়া ঘুইরা ভিক্ষা কইরা খাই। অসুখ বিসুখ অইলে দেহনের কেউ নাই। মাইনষে সরহারি ঘর পাইতাছে দেইখ্যা আমারও মন চাইছিন; একটা ঘর যুদি পাইতাম! তিনি আরও বলেন, একটা ঘরের জন্য আবেদনও করছিলাম। এরপর আমার ভিক্ষার চাউল বেঁইচ্যা এই আশ্রয়ণেরই ঘর মালিক আনোয়াররে ১০ হাজার টেহা দিছি। আনোয়ার আমারে একটা ঘর লইয়া দেওয়ার প্রলোভন দেহায়া টেহাডা নিছে। আর জায়েদার মা ও কাসেমের বউও নিছে ৪ হাজার টেহা একই কথা কইয়া। কিন্তুুক আইজ পর্যন্ত ঘর আর পাইলাম না।
ইউনু স্যারের এইনোও গেছি। বহু ঘুরাঘুরি করছি। আনোয়ার অহন ফোন ধরে না। ইউনু স্যারে কইছিন  দেখবো। কিন্তু কই? দেখলো না ত। পরের বারান্দায় থাহি। রাইত অইলে বাতাসে শীত লাগে। পেশাব পায়হানার জাগা নাই। কষ্টে দিন কাডাই। অহন হুনতাছি কাসেমের বউ আয়া পরবো। পরে আমারে আর তারার বারান্দায়ও থাকতে দিতো না। বাইর কইরা দিবো। পরে আমি কই থাকবাম?’ এসব কথা বলে হাউমাউ করে কেঁদে দেন আসিয়া। জানা যায়, ফুলপুরে চার দফায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে মোট ১৭৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে দুই শতাংশ করে জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। নগুয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৪৪টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হলেও ওখানে ঘরের মালিক মফিদুল, মানিক, তফাজ্জল, মুরশিদা, দুলাল ও আনোয়ার থাকেন না। সরেজমিনে কয়েকদিন গিয়েও তাদের দেখা মেলেনি।
নগুয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প কমিটির সভাপতি মো. বেলাল হোসেন বলেন, এরা সবাই ধনী। এদের অন্য জায়গায় থাকার ঘর আছে। এজন্যই তারা এখানে থাকেন না। আশ্রয়ণের বাসিন্দা মরজিনা, বাবুল ও অরুন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, যাদের ঘরের দরকার নাই, যারা ঘরে থাহে না; তাদের ঘরগুলো আসিয়ার মত অসহায়  ভিক্ষুকদের দিয়ে দিলে ভাল হয়। শেফালী নামে একজন মহিলা তার দুইডা বাচ্চা নিয়া এইনো হেইনো থাহে। ওই মহিলাডাও একটা ঘর পাওয়ার উপযুক্ত। এ ব্যাপারে  ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম সাজ্জাদুল হাসানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,  সরেজমিন গিয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |