শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন

ইবির ৫ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ হাইকোর্টের

ইবির ৫ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ হাইকোর্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন- ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার ঊর্মি, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আদালতের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সিলগালা করে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে আদালত আদেশে বলেন, ‘জড়িত শিক্ষার্থী, হল প্রশাসনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নেবে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া পাঁচ শিক্ষার্থীকে সব ধরনের শিক্ষা ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম থেকে সরিয়ে তাদের ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হলো।’

বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতির রাজিক আল জলিলের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশে আদালত আরো বলেন, ‘নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার শিক্ষার্থী যাতে নির্ভয়ে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন, সে জন্য তিন দিনের মধ্যে তাকে হলে সিট বরাদ্দ দিতে হবে। পাবনা ও কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারকে এ শিক্ষার্থী ও ঘটনার সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।’ ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার ঊর্মির কাছ থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করে ধারণ করা ভিডিও আদালতে জমা দিতেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। আইনজীবী গাজী মো. মহসীন আদেশের পর সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত আগামী ৮ মে পরবর্তী আদেশের জন্য রেখে এই সময়ের মধ্যে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দিতে ইবির উপাচার্য ও প্রক্টরকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখবেন উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সঙ্গে সঙ্গে তা আদালতের নজরে আনত’।”

গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত প্রায় ৩টা পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হন প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী। তিনি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তার অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীরা মিলে তাকে মারধরের পাশাপাশি বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে। এ ঘটনায় পরদিন তিনি বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে হল প্রভোস্ট, প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি ভয়ে হল ছেড়ে বাড়িতে চলে যান ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থী।

এ ঘটনায় সংবাদমাধ্যমে খবর-প্রতিবেদন হলে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগ। পরে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর মধ্যে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা, ঘটনার অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মহসীন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ওই রিটের প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ওই ছাত্রী নির্যাতন ও নিপীড়নের ভিডিও ধারণের ঘটনা তদন্তে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসককে তিন সদস্যের কমিটি করার নির্দেশ দেন। আদেশের অনুলিপি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে কমিটি করতে বলা হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন আদালত। সেই সঙ্গে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্যাতনকারী দুই শিক্ষার্থীকে (তখন পর্যন্ত দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল) ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বলা হয়। আর নির্যাতনের কোনো ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হয়ে থাকলে বিটিআরসিকে তা দ্রুত অপসারণ করতে বলেন আদালত। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ আদেশ অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হলে হাইকোর্ট বুধবার আদেশের জন্য রাখেন। সে ধারাবাহিকতায় শুনানির পর আদালত পর্যবেক্ষণসহ আদেশ দেন।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |