শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কার্যকরী কমিটি পাঁচ দিনে তিন বার অনুমোদন দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে ত্রিশালের রাজনৈতিক মহলের ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গত ২৩ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের প্যাডে দলটির ত্রিশাল উপজেলা শাখার কয়েকটি নাম হাতে কেটে চুড়ান্ত করে কার্যকরী কমিটি অনুমোদন দিয়েছে জেলা নেতৃবৃন্দ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমিটি ভাইরাল হয়। নানা মন্তব্য চলাবস্থায় ২৬ অক্টোবর সংশোধিত আরেকটি কমিটি দেয় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এই কমিটিতে ২৩ তারিখের দেওয়া কমিটির অনেকের নাম বাদ পড়ে। যারা কমিটিতে যুক্ত হয়েছিলেন তারা অনেকেই শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন, আবার যারা বাদ পড়েছেন তারা নিরব হয়ে পড়েছিলেন। গত ২৬ তারিখে কমিটির নেতৃবৃন্দ নিয়ে যখন উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিসে মতবিনিময় চলছিল ঠিক ঐ সময় ২৭ অক্টোবর আবার ত্রিশাল উপজেলা কমিটি চুড়ান্ত ভাবে অনুমোদন করে জেলা আওয়ামী লীগ।
এই অনুমোদনের সংবাদ পেয়ে ২৬ তারিখের অনুমোদিত কমিটির নেতৃবৃন্দ হতভম্ভ হয়ে যায়। সর্বশেষ চুড়ান্ত কমিটিতে বাদ পড়ে যায় ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র এবিএম আনিছুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এড, জালাল উদ্দিন খান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউল হক সবুজ, ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন আকন্দ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা হামিদুর রহমান, সাবেক উপেজলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আবুল কালাম ওরফে গুরু কালাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন আর রশিদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রুকন উদ্দিন খোকনসহ কয়েক ডজন ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতারা।
বিষয়টি নিয়ে ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন আকন্দ বলেন, ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী লীগের ৩টি কমিটি করেছে। ঠিক করেনি। আমি এটা আশা করিনি। এরা বোকামী করেছে। এই অবস্থায় ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী লীগ কমিটি চলতে পারে না।
আরও পড়ুন: হরতালে বাস চালানোর ঘোষণা মালিক সমিতির
ত্রিশাল আওয়ামী লীগের তিন কমিটির বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সস্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি এক রকম কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং বলেন, আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। দলের ক্লান্তি-লগ্নে আমি বাপের সম্পদ বিক্রি করে দল চালিয়েছি। আমি আওয়ামী লীগের সদস্য হয়ে মরতে চেয়েছি। ওরা আমাকে ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সদস্য পর্যন্ত করেনি। মেয়র সহ জনপ্রিয় কিছু পরিচিত নেতার নাম কেটে কমিটি অনুমোদন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছে। এটা দলের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।
ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে কথা বলেছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক আবুল কালাম ওরেফে গুরু কালাম। তিনি বলেন, ১৯৬৬ সাল থেকে ত্রিশাল আওয়ামী লীগের হাল ধরেছে আমার পরিবার। আমার বড় ভাই মরহুম আব্দুল হেকিম সরকার উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। আরেক বড় ভাই বীরমুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আবুল হোসেন চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছিলাম। আমার ভাতিজা মেয়র এবিএম আনিছুজ্জামান বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। সে ত্রিশাল উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন ২২ বছর। আমার আরেক ভাতিজা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিল। আমার আরেক ভাতিজা নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ছিল। কিন্ত কষ্টদায়ক বিষয়- উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে আমার পরিবারের কাউকে কোন সদস্য হিসেবে রাখেনি। এই প্রথম ত্রিশাল আওয়ামী লীগের দূর্গে আঘাত হেনেছে। পাঁচ দিনে তিন কমিটির নজির আমি কোথাও দেখিনি। এটা ত্রিশাল আওয়ামী লীগের জন্য অবশ্যই ক্ষতির কারণ হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ত্রিশাল উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান মাহমুদা খানম রুমা বলেছেন, আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। আমার পিতা আমিরাবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলাম। এমতাবস্থায় পাঁচদিনে ত্রিশালে কাঁটাছেড়া করে আমার নামসহ তিনটি কমিটির অনুমোদন দিয়েছে ময়মনসিংহ জেলা কমিটি। এখানে আমি কারো কাছে পদের জন্য দৌড়ঝাপ করিনি। কেন আমাকে একবার নাম দিয়ে নাম কেটে আবার দিয়ে আবার কাটে। যাদের সাথে এমন করা হয়েছে, সকলের সম্মান অক্ষুন্ন করা হয়েছে।
ত্রিশাল আওয়ামী লীগের ২৩ অক্টোবর সাক্ষরিত কমিটির সহ-সভাপতি হারুন আর রশিদ এর নাম কলম দিয়ে কেটে অন্য নাম বসিয়ে কমিটির অনুমোদন দেওয়ায় তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ছাত্রলীগ করেছি। উপজেলা যুবলীগ করেছি। আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলাম। দীর্ঘ ৩৮ বছর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত রয়েছি। কোন প্রকার বিরতি আমার ছিল না। আজ কোন এক অদৃশ্য কারণে আমাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে নাম কেটে দিয়েছে।
২৬ তারিখে অনুমোদিত কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে কমিটিতে স্থান পেয়েছিলেন কামাল হোসেন। এরপর ২৭ তারিখ সে কমিটিতে নেই। এ বিষয়ে তিনি বলেন, পাঁচদিনে তিন কমিটি। এটা ন্যাক্কারজনক, দুঃখজনক। আমাকে আপনি সম্মান না করেন, কিন্তু অসম্মান করার অধিকার আপনার নেই।
ত্রিশাল উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতিকে ২৬ তারিখের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগ অনুমোদন করেন। ২৭ তারিখের কমিটিতে সে নেই। বিষয়টি নিয়ে তার সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, প্রস্তাবিত কমিটিতে আমার নাম ছিল এবং জেলা কমিটি অনুমোদনও দিয়েছে। সর্বশেষ আমার কেটে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ত্রিশালে জনপ্রিয় নেতা ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, তার নামও কেটে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ত্রিশাল আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতির কারণ।
পরে ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের বাসায় গেলে, তিনি দ্বিতীয় তলায় অবস্থান করেন। তার সহযোগীদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন যে, তিনি ঘুমানোর জন্য উপরে রয়েছেন। পরে তার সাথে মুঠোফোনে কথা বললে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আবুল কালাম শামসুদ্দিন বলেন, আমি এবিষয়ে এখনি কোন মন্তব্য করতে রাজি নয় তবে ২৬তারিখ অনুমোদিত কমিটির বিষয়ে অবগত রয়েছি।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহেতাশামুল আলমকে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, সর্বশেষ জেলা আওয়ামী লীগ দপ্তর সস্পাদক যে কমিটি পাঠিয়েছেন সেটাই ফাইনাল। কে বা কারা আমাদের সরলতার সুযোগে কমিটির ছবি নিয়ে ফেইসবুকে ছেড়ে দিয়েছে।