শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২৮ অপরাহ্ন

আপডেট
গ্রেট রিলিজিয়াস-সেক্যুলার লিডার শেখ মুজিব এবং ১৫ই আগস্ট

গ্রেট রিলিজিয়াস-সেক্যুলার লিডার শেখ মুজিব এবং ১৫ই আগস্ট

ভণ্ডরা

কবি শেখ হাবিবুর রহমান বাবু 

বঙ্গবন্ধুর উপর মহাকাব্য লিখতে গিয়ে  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাবলিক লাইব্রেরিতে একটি বইএর দিকে চোখ আটকে গেল;চরম পত্রের  কথক প্রয়াত বিখ্যাত সাংবাদিক জাতির পিতার প্রিয় মাস্টোর এম আর আক্তার মুকুলের “মুজিবের রক্ত লাল”বইটির দিকে!

কি অসাধারণ সব তথ্য! মহান নেতার অজানা ঘটনা সংবলিত বইটি!সেখানে ১৯৭৩সালে বঙ্গবন্ধু যখন আলজিয়ার্সে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সম্মেলনে প্রথম বারের মত যোগ দিলেন,মহান নেতার সফর সঙ্গি হয়ে মুকুল ভাইও গেলেন। বিশ্ব নেতৃত্বের চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছেন এক হিমালয়-মানবকে!তখন প্রায় ৯০/৮৯টি দেশের রাষ্ট্রএবং সরকার প্রধান গেলেন,মঞ্চে একে একে পরিচয় চলল।আলজেরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন।পরিচয়ের একপর্যায়ে ইয়াসির আরাফাতের পরিচয় পর্বে উপস্থিত সকল রাষ্ট্র ও সরকার প্রাধানগণ সবাই এক সাথে হাততালি দিলেন কিন্তু সবাই বসেই ছিলেন। প্রায় আধা মিনিট চলল সেই করতালি।
এক পর্যায় সদ্যোস্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পরিচয় প্রদান করার সঙ্গেসঙ্গেই ছয় ফুট এক ইঞ্চি উচ্চতার এক হিমালয় সদৃশ ব্যক্তিত্ব, ধবধবে সফেদ পাজামা পাঞ্জাবী, সাথে সেই কাল রঙের মুজিব কোট পরিহিত মোটা ফ্রেমের চশমা পরে যখন মঞ্চে উঠলেন তখন ঘোটা রাজাকীয় হল রুমের সমবেত বিশ্ব নেতৃবৃন্দ নিজনিজ আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মুহুর্মুহু করতালি! সেই করতালি চলল প্রায় তিন মিনিট! শেষে আলজেরীয় রাষ্ট্রপ্রধানের ইশারায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দের মোহ কাটল!
৭৩এর ন্যাম সম্মেলনে সকল রাষ্ট্রীয় অতিথিদেরকে সাগর সৈকতে ফ্রান্সের রেখে যাওয়া বাংলোগুলোকে আরও আধুনিক করে অতিথিদের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হল।সবার মত সদ্যো স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুও এরূপ একটি কটেজে উঠলেন।পরদিন আলজেরীয় রাষ্ট্রীয় সরকারের নিয়মানুযায়ী সকল রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের অতিথিশালায় খোলা জীপে করে যাবতীয় পানীয় নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কটেজে  প্রটোকল অনুযায়ী কয়েকজন রাজকীয় কর্মকর্তা হাজির হলেন। স্নীত হেসে প্রটোকল কর্মকর্তাদেরকে মহান নেতা সকল পানীয় ফিরিয়ে নিতে  নির্দেশ দিলেন —-উপস্থিত সকল আলজেরীয় উর্ধবতন কর্মকর্তাগণ বিস্মিত হয়ে কিছুক্ষণ থ বনে রইলেন! কারণ বঙ্গবন্ধু ছাড়া সম্মেলনে যোগ দেয়া সকল মুসলিম রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানগণই ওয়াইন সহ সকল পানীয় গ্রহণ করলেন!
পরের দিন আলজেরিয়ার একমাত্র ইংরেজি পত্রিকা পুরো পৃষ্ঠাব্যাপী বঙ্গবন্ধুর উপর ছাপলেন বিশেষ সংবাদ, হেডলাইন ছিল”The Leader without beard; Neither visited night club nor touched wine in whole life”শ্মশ্রু বিহীন নেতা;জীবনে কোন দিন নৈশ ক্লাবে যাননি এমনকি কোন মদও স্পর্শ করেননি!অর্থাৎ নাইট ক্লাব আর বারের দেশ আলজেরিয়ায় যে সমস্থ বিশ্বনেতারা সেদিন গিয়েছিলেন এদের অধিকাংশই সেদিন ক্লাবে গিয়েছিলেন এবং এমনকি অনেক মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান পানীয় গ্রহণ করেছিলেন কেবল বঙ্গবন্ধু ছাড়া!
এই মহান মুসলিম নেতা বঙ্গবন্ধু যিঁনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম, তিঁনি তার ঐতিহাসিক মহাকাব্যিক  ভাষণেও বলেছেন,”আমি মানুষ, আমি মুসলিম, আমি বাঙ্গালি’। যাঁর পূর্বপুরুষগণ এই বঙ্গীয় হিন্দু অধ্যূসিত ব-দ্বীপে পারস্য থেকে ইসলামের আলো ছড়াতে এসেছিলেন সেই রক্তের প্রবল উত্তারাধীকার মধুমতী নদীর জলেধূয়া টুঙ্গিপাড়া গাঁয়ের আবাল্য মানবপ্রেমিক শিশু খোকা-মুজিব ভাই-বঙ্গবন্ধু অত:পর স্বাধীন বাংলার স্থপতি, বাঙ্গালি জাতীর জনক রাজনীতির মহাকবি, শান্তির দূত শেখ মুজিব!
স্কুল জীবনে এক বন্ধুকে জমিদারের বন্দিশালা থেকে মুক্ত করে আনা খোকা মাত্র ১৩/১৪ বছর বয়সেই প্রথম সাত দিন জেল খাটলেন!সেই থেকে মানবতাবাদী, নিপীড়িত, নিষ্পেষিত, শোষিত মানুষের কণ্ঠস্বর মাত্র ৫৫বছরের জীবনে ১৮বার নিক্ষিপ্ত হলেন জেলের অন্ধকার সেলে, জীবন থেকে খোয়ালেন প্রায় ১৪টি বছর।
স্কুল জীবনেই তৎকালীন অবিসংবাদী নেতা,পূর্ব-বাংলার মূখ্যমন্ত্রী শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বিশাল ব্যক্তিত্বের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়ালেন –স্কুলের ছাত্রদের হোস্টেল ঘর ও অন্যান্য দাবি আদায়  করে নেতৃত্বের বীজ বপন করলেন! সেই থেকেই সোহরাওয়ার্দীর ছায়ায় নিজেই হয়ে উঠলেন মহা এক অশত্থ-বট বৃক্ষ রূপে, যে বৃক্ষ ছায়া দিলেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের হাজার হাজার বছর ধরে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী দ্বারা রাজনৈতিক- অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ভাবে  শাসিত-শোষীত-ধর্ষিত এক পরাধীন জাতিকে—-এনে দিলেন অমল এক লাল-সবুজের পতাকা-স্বাধীন মানচিত্র- স্বাধীন ভূখণ্ড আমার সোনার বাংলা, বাংলাদেশ!
কোলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে পড়তে যাওয়া,সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শ অত:পর দেশভাগের আন্দোলন সহ ৪৭পূর্ব প্রতিটি আন্দোলনে একজন নিবেদিত নিষ্ঠাবান কর্মী, একজন যুবনেতা,একজন ছাত্রনেতা হয়ে হয়ে বিশাল অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার সঞ্চয় করে এগুতে থাকলেন।
ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের খসড়াতে যদিও স্টেটসের কথা উল্লেখ ছিল অর্থাৎ পাকিস্তান নামের একটি রাষ্ট্র আরেকটি হবে ভাষাভিত্তিক পূর্ব বাংলা পশ্চিম বাংলা সমেত  স্বাধীন দেশ,যে দেশের প্রধান হবেন টুঙ্গি পাড়ার সেই লিকলিকে লম্বা ছেলেটি অর্থাৎ শেখ মুজিবের কথাই তখনকার সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মাথায় রেখেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে জিন্নাহ বললেন, এটা ছাপার ভুল,স্টেটের জায়গায় স্টেটস হয়ে গেছে!যাইহোক জিন্নার কথাই মেনে নিয়ে আমাদের নেতৃবৃন্দ ধর্মভিত্তিক এক উদ্ভট বিকলাঙ্গ রাষ্ট্র চিন্তাকে মেনে নিয়ে জন্মদিলেন এক বিষবৃক্ষ ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্র যা পশ্চিম পাকিস্তান আর প্রায় হাজার মাইল দূরে অবস্থিত বঙ্গীয় ব-দ্বীপ বাংলদেশকে অবহিত করল পূর্বপাকিস্তান নামে।আমরা যেন সতীনের সৎ ভাই হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের ঝুটা আর উচ্ছিষ্ট ভোগী জাতিতে পরিণত হলাম।চলল অত্যাচারের স্টিমরোলার,সংখ্যায়-উৎপাদনে-অবদানে-রপ্তানি আয়ে সব ক্ষেত্রে পূর্ব-পাকিস্তান তথা পূর্ব বাংলার অবদান পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে বেশি হলেও ভোগের বেলায় তারা আর কাজের বেলায় আমরা!শোষণের মাত্রা দিনদিন চরম আকার ধারণ করতে থাকে সেই ইতিহাস সবাই জানে।
শুরুতেই আঘাত হানল আমাদের হাজার বছরে গড়ে উঠা প্রিয় বাংলা ভাষাকে হত্যা করে  বাঙালিকে উর্দু ভাষায় দীক্ষিত করার ষড়যন্ত্র দ্বারা! একদল জিন্নার গোলাম উর্দুকে পবিত্র ভাষাজ্ঞান করতে লাগল,পবিত্র আল-কুর-আনের মত মনে করে তাদের ঘরেঘরে কুরআনের পাশাপাশি উর্দু কিতাব শোভা পেতে লাগল,কিন্তু পাকিস্তানী শাসক অচিরেই বুঝতে পারল এই বাংলায় ক্রমশ বড় হচ্ছে এক অগ্নিবীণা, যার মোহনীয় বাঁশির সুরে জেগে উঠেছিল বাংলার ছাত্র জনতা–বুকের রক্ত দিয়ে ঠেকিয়ে দিল পাকিস্তানীদের বিকলাঙ্গ চিন্তাকে!এই ক্ষেত্রে পরবর্তী ইতিহাসকে আমি একটি কবিতার মাধ্যমে তোলে ধরতে চাই—-
ছিলাম পরাধীন
অন্যের অধীন
ছিল আমাদের
বড়ই দুর্দিন।
ছিল হাহাকার
ঘরেঘরে বাংলার,
ছিলনা অধিকার
বাংলায় কথা বলার।
বায়ান্নতে এসে
নিষেধের প্রতিবাদে
ঝরল তাজাপ্রাণ,
এভাবেই হয়েছিল
ভাষার সমাধান।
ছিলনা পতাকা
আমাদের স্বাধীনতা,
এমনি করে হায়
কণ্ঠক মাড়িয়ে
ছয়টি দফা নিয়ে
স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর
নাম তার শেখ মুজিবর।
তারপর এসে যায় উনসত্তর
বুঝে গেছি স্বাধীনতা
নয় বহুদূর।
তারপর সত্তর
অবাধ নির্বাচনে
জিতে যায় নৌকা
আর শেখ মুজিবর।
ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা
প্রতিবাদে ফুঁসে উঠে
বীর জনতা।
রেসকোর্স ময়দানে
সাতই মার্চে,
উত্তাল মহা এক
জনসমুদ্রে,
ধীরলয়ে হেঁটে আসে
মহানায়ক মুক্তিদাতা।
বজ্র কণ্ঠে গেয়ে উঠেন
স্বাধীনতা স্বাধীনতা।
এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম
নাম তার শেখ মুজিবুর রহমান।
কৃষক শ্রমিক তাঁতি জেলে
আর ছাত্রজনতা,
সমস্বরে গেয়ে উঠেন
স্বাধীনতা আহা স্বাধীনতা।
ধূর্ত শৃগাল যেন ইয়াহিয়া,
পঁচিশ মার্চে কালরাত্রি
অপারেশন সার্চলাইট
চলে ঢাকায়।
মেতে উঠে হায়েনারা
গণহত্যায়।
পিলখানা  রাজারবাগ
শাঁখারি বাজারে
হত্যাযজ্ঞ চলে নির্বিচারে।
শিশু-বৃদ্ধ আর নারী হত্যা
তাণ্ডব দাহে জ্বলে
সারা বাংলা।
ধর্ষণে মেতে উঠে নরপশুরা,
তাদের দোসর সাজে
রাজাকারেরা।
নয়টা মাস কিযে বিভীষিকাময়
আহা নয়টি মাস,
সারা বাংলার ঘরেঘরে
হয়েছে কত সর্বনাশ!
অবশেষে মুক্তিসেনার দল
মুজিব তাদের বল,
হায়েনা-হাঙ্গরের কবল থেকে
ছিনিয়ে আনে এক
রক্তে ধুয়া অমৃত সুধা,
স্বাধীনতা আহা স্বাধীনতা।
এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম
নাম তার শেখ মুজিবুর রহমান।
এনে দিল বেঁচে থাকার
অমৃত সুধা
রক্তে ধুয়া স্বাধীনতা
আহা কিযে স্বাধীনতা!
একসাগর রক্তের বিনিময়ে হায়েনা পাকিস্তানী ও সাম্রাজ্যবাদী দোসরদের পরাজিত করে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ-ধারাবাহিক কারিশমেটিক নেতৃত্বের কাছে পরাজিত অপশক্তি নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করল।এদিকে যুদ্ধবিদ্ধস্ত প্রায় ধবংসপ্রাপ্ত শূন্য অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ভাবে পুনঃগঠন করার জন্য যুগোপযোগী শোষণহীন সমাজ-অর্থনীতি গঠনের পরিকল্পনায় গলদঘর্ম, অন্যদিকে কুটনৈতিক ভাবে বিদেশী বন্ধুরাষ্ট্রসমুহের স্বীকৃতি আদায়ে ব্যস্ত বঙ্গবন্ধু। কিন্তু পরাজিত অপশক্তি আর তাদের সাম্রাজ্যবাদী দোসরদের মিত্ররা এবং ধর্মান্ধ ইসলামী রাষ্ট্র বিশেষ করে সৌদি,লিবিয়া সহ কয়েকটি ইসলামী রাষ্ট্র,চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের চরম বিরোধীতার মুখে ইস্পাতকঠিন বঙ্গবন্ধু নীতিতে আপোষহীন!
ন্যাম সম্মেলনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনার এক পর্যায়ে প্রিয় কমরেড ফিদেল ক্যাস্ট্রো বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে বলেছিলেন,আমি হিমালয় দেখিনি বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি!বঙ্গবন্ধুকে দেশী বিদেশী সকল ষড়যন্ত্রের কথা খুলে বললেন,পাকিস্তান ফেরৎ সেনাকর্মকর্তা ও পাকিস্তানী আনুগত্যের আমলাদের পুনঃবহাল রাখার মারাত্মক ভুলের কথা বলে বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করলেও ক্যাস্ট্রো বলেছিলেন,নেতা,আপনি শেষ হয়ে যাবেন!এ কথা শুনে বঙ্গবন্ধু হতবিহল হয়ে নীরব হয়ে যান!
ক্যাস্ট্রো:”এক্সিলেন্সি মুজিব,আপনি কিন্তু নিশ্চিহ্ন হতে যাচ্ছেন”
সৌদি সরকারের ষড়যন্ত্রের কারণে যখন সদ্যোস্বাধীন বাংলাদেশের মুসলমানগণ হজ্জ করার অনুমোতি পাচ্ছিল না,অহঙ্কারী বাদশা ফয়সালের সাথে সাক্ষাতের প্রয়োজন ছিল বঙ্গবন্ধুর কিন্তু বাদশা নানা অজুহাতে এড়িয়ে যেতে থাকলেও বঙ্গবন্ধুর সফর সঙ্গি ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের অক্লান্ত চেষ্টায় অবশেষে সৌদি বাদশাহর সাক্ষাৎ মিলল!সাক্ষাৎকারের চৌম্বক অংশ হুবুহু তোলে ধরা হল:—
বাদশা:আমি শুনেছি যে,বাংলাদেশ আমাদের কাছে কিছু সাহায্য প্রত্যাশী। দয়া করে বলুন আপনারা কি চান?অবশ্য এসব সাহায্য দেয়ার জন্য আমাদের কিছু পূর্বশর্ত রয়েছে।
মুজিব:এক্সিলেন্সি, বেয়াদবি মাফ করবেন,আমি হচ্ছি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আমার মনে হয় না বাংলাদেশ মিসকিনের মত আপনাদের কাছে কোন সাহায্য চাচ্ছে।
বাদশাহ :তাহলে আপনারা কিংডম অব সৌদি এরাবিয়ার কাছে কি চাচ্ছেন?
মুজিব:বাংলাদেশের ফরহেজগার মুসলমানেরা পবিত্র কাবা শরিফে নামাজ আদায়ের অধিকার চাচ্ছে।এক্সিলেন্সি আপনি বলুন সেখানেতো কোন শর্ত থাকতে পারেনা।আপনি সুমহান, আপনার প্রতি প্রতিটি বাঙ্গালির গভীর শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে।কাবায় সমস্ত দুনিয়ার মুসলমানের নামাজ আদায়ের হক রয়েছে।
বাদশাহ :এসবতো আর রাজনৈতিক কথাবার্তা হল না।এক্সিলেন্সি, বলুন,আপনারা সৌদি কিংডমের কাছে কি সাহায্য প্রার্থনা করছেন?
মুজিব:এক্সিলেন্সি, আপনি জানেন,এই দুনিয়াই ইন্দোনেশিয়ার পর বাংলাদেশ হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম অধ্যুষিত দেশ,আমি জানতে চাচ্ছি আপনারা কেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না?
বাদশাহ :আমি পরম করুণাময় আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে জবাবদিহি করিনা।তবু আপনি একজন মুসলমান, এই জন্য বলছি,সৌদির স্বীকৃতি পেতে হলে বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করে “ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ করতে হবে।”
মুজিব:এই শর্তটা কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারেনা।মহান মুক্তিযুদ্ধে এই দেশের সকল ধর্মের লোক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে,জীবন দিয়েছে, প্রত্যেকেই কোন না কোন ভাবে দুর্ভোগ পোহায়াছে।সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালা শুধু আল মুসলিমীনই নন,তিঁনি হচ্ছেন রাব্বুল আলামীন। এক্সিলেন্সি, বেয়াদবি মাফ করবেন,আপনার সৌদি এরাবিয়ার নামও কিন্তু ইসলামিক রিপালিক অব সৌদি এরাবিয়া নয়,এই দেশটির নামকরন করা হয়েছে একজন মুসলিম রাজনীতিবিদ শ্রদ্ধাভাজন মরহুম বাদশাহ সোউদ এর সম্মানে কিংডম অব সৌদি এরাবিয়া,কই আমরাতো এ নামে কোন আপত্তি করিনি।
বাদশাহ :আমার আরো একটি শর্ত রয়েছে,অবিলম্বে পাকিস্তানী সকল যুদ্ধবন্দীদেরকে বিনা শর্তে মুক্তি দিতে হবে।
মুজিব:এটিতো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিষয়।তাছাড়া দুই দেশের মধ্যে এমন আরও অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে,যেমন বাংলাদেশ থেকে কয়েক লাখ পাকিস্তানীকে ফিরিয়ে নেয়া,বাংলাদেশের প্রাপ্য অর্থ ফিরিয়ে দেয়া।তাই বিনা শর্তে ৯১হাজার যুদ্ধবন্দীকে ছেড়ে দেয়ার প্রশ্নটি পৃথক ভাবে বিবেচনা করা বাঞ্ছনীয় হবেনা।আর এই জন্য সৌদি আরব এত উদগ্রীব কেন?
বাদশাহ :এক্সিলেন্সি, শুধু একটু মনে রাখবেন সৌদি আরব আর পাকিস্তান একই কথা।পাকিস্তান আমাদের সবচেয়ে অকৃত্রিম বন্ধু।তাহলে এক্সিলেন্সি, আরতো কোন আলোচনা থাকতে পারে না।তবে আমাদের শর্ত দুটি বিবেচনা করে দেখতে পারেন।
মুজিব:একটা বিষয় একটু বুঝিয়ে বললে খুশি হতাম।
বাদশাহ :এক্সিলেন্সি, বলুন কী?
মুজিব:এই যে প্রায় দুই বছর পর্যন্ত সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিচ্ছেনা ,এতে করে ফরহেজগার মুসলমানগণ যে হজ্জ পালন করতে পারছে না সে কথা কি ভেবে দেখেছেন?এক্সিলেন্সি, এই ভাবে হজ্জ পালন থেকে বিরত রাখা কি জায়েজ হচ্ছে?
এরপর এখানেই আলোচনা শেষ হয়!
এভাবেই তিঁনি বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছিলেন!এখানে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে,পাকিস্তান আমাদের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে ৭৪সালের সেপ্টেম্বরে কিন্তু এই সৌদি সরকার দিয়েছে ৭৫এর ১৬আগস্ট, চীনও তাই করেছিল!সে যাইহোক, বঙ্গবন্ধু
বলেছিলেন বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত,আমি শোষিতের পক্ষে,বিশ্বের শোষক সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে যায় এই শ্লোগান, অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তান পূর্বপাকিস্তানকে শোষণ করে। মুক্তিযুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তান নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় নিরস্ত্র বাঙ্গালির উপর,আর যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি পশ্চিম পাকিস্তানকে সমর্থন দেয় কিন্তু যুদ্ধে পরাজয় বরণ করে যে ক্ষত সৃষ্টি হয় ১৯৭৫এ ১৫ই আগস্টে সেই জ্বালা মিটিয়েছে বলে আগস্ট হত্যা কাণ্ডের কারণ-বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেন।প্রশ্ন জাগে ১৫আগস্ট গভীর রাতে কেন আমেরিকান দূতাবাসের রহস্যময় গাড়ি ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর এলাকায় টহল দিয়েছিল!নিশ্চয় সেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আগেই যুক্তরাষ্ট্র অবগত ছিল।৭৪এর দুর্ভিক্ষ ঘটানোর ক্ষেত্রে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা,হেনরি কিসিঞ্জারের অপপ্রচার সহ নানান ষড়যন্ত্রই প্রমাণ করে এই হত্যাকান্ড যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের যোগসাজশ রয়েছে।
চির শত্রু পাকিস্তানের পরাজয়ের রিরংসা, ৫২,৬৬,৬৯,৭০ এবং একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি নিশ্চয় অহংকারী ভুট্রোকে তাড়াকরে বেড়াত,তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা, বিশ্বনেতা হয়ে যাওয়া,বঙ্গবন্ধুর প্রতি মানুষের ভালবাসা যার কাছে পাকিস্তানী নেতৃবৃন্দ এবং তাদের তাবেদার এদেশীয় পদস্খলিত রাজনীতিবিদদের অন্তরে ভীষণ জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তার্জাতিক ও দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য পাকিস্তানী আদর্শে বিশ্বাসী বাংলাদশের সেনাবাহিনীতে বহালকৃত উচ্চাভিলাষী উন্মার্গগামী সেনাসদস্যরা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ঘটিয়ে দিল এই বাংলায়।
হত্যাকারীরা তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়,হত্যাকান্ডটির মূলহোতা ফারুকের নেতৃত্বে একটা খুনির দল ট্যাংক ও ভারি অস্ত্র নিয়ে সম্ভাব্য প্রতিআক্রমণের আশংকা ঠেকাতে রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্প ও বিমান বন্দরকে ট্যাকল করার দায়িত্ব পালন করে কিন্তু দুভার্গ্য জাতির সেই সুসজ্জিত রক্ষীবাহিনী নির্বিকার থেকেগেল!কোন প্রতিঘাত করল না!
মাত্র গুটিকয়েক পদস্খলিত বহি:ষ্কৃত উন্মাদ-উন্মার্গামী সৈনিকবেশি খুনি,
মধ্যরাতে ঘুমন্ত জাতির পিতা ও তাঁর স্বজন হত্যার রিরংসায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে ট্যাংক আর সাঁজোয়া যান সহ ৬শতাধিক খুনির বহর নিয়ে খুলাপ্রান্তরে টেংকের উপর দাঁড়িয়ে
জাতিরপিতাকে হত্যার ভাষণ দেয় ঘাতক ফারুক,ঘোটা সেনা-নৌ-বিমান এবং তেজোদীপ্ত রক্ষীবাহিনী কেউ ঘুণাক্ষরে টের পেলনা –এ আরেক চরম প্রহসন, চরম নির্লিপ্ততা-উদাসীনতা-দায়িত্ব বরখেলাপ!
ঘাতকেরা গ্রুপে গ্রুপে এগিয়ে গেল তিনটি বাড়িতে,কামান থেকে গোলা ছুঁড়ল, গুলির বিকট শব্দে চারদিক প্রকম্পিত,
অথচ সুসজ্জিত সেনা-নৌ-বিমান -রক্ষীবাহিনীর সবাইকি সেদিন বেঘোরে কাল ঘুমের অতলান্তে ছিল?আক্রান্ত নির্ভিক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সেদিন তাঁর স্বজনদেরকে বাঁচাতে নিশ্চয় রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত তিনবাহিনীকেই এগিয়ে আসার আহবান করেছিল,তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল কেএম সফিউল্লাহকে বঙ্গবন্ধু সেদিন ফোনে তাঁকে রক্ষার আহবান করেছলেন,প্রতিউত্তরে জনাব কেএম সফিউল্লাহ বলেছিলেন,আই এম ডুইং সামথিং স্যার,আপনি কি ৩২নম্বর থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন?বলে আর কিছুই করতে পারলেন না!প্রশ্ন জাগে কেন খুনি-নিসুদক-ঘাতকরা ক্যান্টনমেন্ট থেকে কোন আক্রমণের আশঙ্কা করল না?তাহলে কি ঘোটা ক্যান্টনমেন্ট সেদিন সাম হাউ ম্যানেজ হয়ে গিয়েছিলেন—সেই প্রশ্ন অবশ্যই জাতি করতে পারে।তাহলে কি কাপুরুষ হয়ে গিয়েছিল সেদিনের সেই সেনা-নৌ-বিমান আর সুসজ্জিত রক্ষীবাহিনী!
যখন ৩২নম্বর আক্রান্ত হল জাতির পিতার বিশ্বাস ছিল সবাই এগিয়ে আসবে—অথচ এ যেন পলাশীর প্রান্তরে মীরজাফরের ভূমিকায় ঘোটা প্রশাসন যন্ত্র,বঙ্গবন্ধুর ডাকে কেবল এগিয়ে এসেছিল এক বীর যোদ্ধা নাম তাঁর কর্নেল জামিল উদ্দীন! অথচ তিঁনি  স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সামরিক সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়েই তড়িঘড়ি করে কালবিলম্ব না করেই সামরিক ড্রেস পরে নিজেই তার প্রিয় লাল ওয়াগন ম্যক্সগাড়ি চালিয়ে এগিয়ে এসেছিল ওয়ান ম্যান আর্মি হয়ে,পথিমধ্যে খুনিদের প্রবল বাঁধা উপেক্ষা করে যখন পৌঁছল ৩২নম্বরের গেটে,খুনিদের প্রতি হুংকার ছুঁড়ে ভীতরে প্রবেশ করতেই ঘাতকের ভারী মেশিনগানের একঝাঁক বুলেটে শহীদ হলেন স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপিতাকে রক্ষাকরার ডাকে সাড়া দেয়া একমাত্র দেশপ্রেমিক বীর সৈনিক, বাকী সব ছিল সেদিন কাপুরুষ — অন্তত একজন তাঁর রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে অবিচল থেকে কিছুটা কলঙ্ক ঘুচাল কর্নেল জামিল উদ্দীন ,তোমাকে অভিবাদন!
খন্দকার মোশতাক, সায়েম ও জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পৃষ্ঠপোষক:
আপিল বিভাগ বঙ্গবন্ধুর হত্যামামলার রায়ে লিখেছেন, ‘লেফটেনেন্ট কর্নেল শাহরিয়ার রশিদ তার স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দীতে বলেছে,তাহের ঠাকুর যখন খন্দকার মোশতাকের ভাষণ তৈরি করছিল তখন জিয়াও সেখানে উপস্থিত ছিল।”জিয়া যে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাথে যোগসাজশ করত তা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ তার লেখা বই ‘ডেমোক্রেসি এন্ড দ্যা চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপমেন্ট’-বইতে লিখেছেন,’যে সব সেনা কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তারা তাদের ত্রাণকর্তা হিসাবে জিয়াকে পেয়েছিল।তিনি আরও লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাথে জিয়াউর রহমানের যোগসাজশ ছিল।’
আন্তার্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লণ্ডন ভিত্তিক ‘সান্ডে টাইমস ‘পত্রিকায় ১৯৭৬ সালে ৩০মে’তে খুনি ফারুকের এক পৃষ্ঠা প্রবন্ধ ছেপেছিল,সেখানে সে লিখেছে যে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে জিয়াউর রহমানের সাথে তার বিস্তারিত কথা হয়।
তাছাড়া ১৯৮৫/৮৬সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে আমার স্বীয় বিদ্যালয় হাজী আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের  মাঠে ফ্রিডম পার্টি কর্তৃক আয়োজিত এক সমাবেশে খুনি ফারুক-রশিদের দম্ভোক্তি ছিল,সেখানে সে বঙ্গবন্ধু হত্যা সাথে জিয়াউর রহমানের মৌন সম্মতির কথা উল্লেখ করেছিল!সে সমাবেশে আমি নিজেও একজন প্রতিবাদী স্কুল ছাত্র হিসাবে আওয়ামীলীগ এর অন্যান্য নেতা-কর্মীর সাথে যোগ দিয়ে ছিলাম।খুনিরা তখন ওপেন অস্ত্র উঁচিয়ে বুলেটপ্রুফ গাড়িতে করে এসেছিল!
এতসব প্রমাণ ছাড়াও এই ইতিহাস বিরল হত্যাকাণ্ডের খুনিদেরকে যে স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক হত্যাকাণ্ডের মাত্র ৪২দিন পর ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল,পরবর্তীতে ১৯৭৯সালে ৬এপ্রিল জেনারেল জিয়াউর রহমান চীফ মার্শাল ল এডমিনিস্ট্রেটর ও অবৈধ রাষ্ট্রপতি হয়েও এই কুখ্যাত ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশটি সংবিধান ভূক্ত করে আইনে পরিণত করে এবং খুনিদের কিভাবে পুরুস্কৃত করে তা নিচে উল্লেখ করা হয়েছে—এরপরও যদি এই জঘন্যতম  হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে কারও যদি সন্দিহান থাকে তবে সেটা হবে সত্যের অপলাপ।
তাই যদি না হত তাহলে ১৯৯৬সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে যখন ১২নভেম্বর এই কাল আইনটি বাতিল করে তখন বিএনপি এবং জামাত কেন ওয়াক আওট করেছিল?কেন বিএনপি জোট সরকারের সময় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ৪২বার হত্যাচেষ্টা করা হল।২১আগস্ট গ্রেনেড হামলা করল জিয়াপুত্র তারেকের নির্দেশে।কেন হঠাৎ করে বেগম খালেদা জিয়া যিনি একাধিক জন্মদিনের মালিক তিনি শোকের মাসের ১৫আগস্টে তার জন্মদিন পালনের উৎসব করে?
জেনারেল জিয়া রাষ্ট্রপতি থাকাবস্থায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে চাকরি এবং পদোন্নতির ব্যবস্থা করেছিল। দেশের বিপক্ষে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। খালেদা জিয়ার আমলেও এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে।
৮ জুন ১৯৭৬ সালে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে উল্লেখিত ১২ জনকে বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়া হয়েছিল-
১. শরিফুল হক ডালিম (মেজর ডালিম), চীনে প্রথম সচিব।
২. আজিজ পাশা, আর্জেন্টিনায় প্রথম সচিব।
৩. একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, আলজেরিয়ায় প্রথম সচিব।
৪. বজলুল হুদা, পাকিস্তানে দ্বিতীয় সচিব।
৫. শাহরিয়ার রশীদ, ইন্দোনেশিয়ায় দ্বিতীয় সচিব।
৬. রাশেদ চৌধুরী, সৌদি আরবে দ্বিতীয় সচিব।
৭. নূর চৌধুরী, ইরানে দ্বিতীয় সচিব।
৮. শরিফুল হোসেন, কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব।
৯. কিসমত হাশেম, আবুধাবিতে তৃতীয় সচিব।
১০. খায়রুজ্জামান, মিসরে তৃতীয় সচিব।
১১. নাজমুল হোসেন আনসার, কানাডায় তৃতীয় সচিব।
১২. আবদুল সাত্তার, সেনেগালে তৃতীয় সচিব।

উল্লেখিত খুনিদের নিয়োগপত্র ঢাকা থেকে লিবিয়ায় পৌঁছে দিয়েছিলেন শমসের মবিন চৌধুরী। এর আগে ওই বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসে তাদের সঙ্গে আলোচনা-সমঝোতার জন্য তৎকালীন মেজর জেনারেল নুরুল ইসলাম লিবিয়ায় গিয়েছিলেন।

১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বরে জিয়াউর রহমানের নির্দেশে ফরেন সার্ভিস ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়। তবে উল্লিখিত ১২ সেনা কর্মকর্তা ফরেন সার্ভিসে যোগ দিতে রাজি হলেও প্রধান দুই হোতা ফারুক ও রশীদ জিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করে চাকরি না নিয়ে ব্যবসা করার মনস্থির করেন। জিয়াউর রহমান তাদের ব্যবসার মূলধন হিসেবে আর্থিক সহযোগিতা করে। ফারুক ও রশীদ লিবিয়া সরকারের বিশেষ অনুকম্পা লাভ করে।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের স্বার্থরক্ষার জন্য জিয়া-খালেদা সরকার রীতিমতো প্রতিযোগিতায় মত্ত থেকেছে। প্রয়াত বেনজির ভুট্টো সরকার পাকিস্তানে খুনি মহিউদ্দিন আহমেদকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালেও সৌদি সরকার এ খুনিকে সৌদি আরবে বাংলাদেশের মিশন উপপ্রধান হিসেবে গ্রহণ করে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মেজর ডালিমকে বেইজিং থেকে হংকংয়ে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তাকে পোল্যান্ডের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স নিয়োগ দেওয়া হলে সে সময়ে সমাজতান্ত্রিক পোল্যান্ড সরকার তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। পরে তাকে কেনিয়ায় হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। মেজর নূর তখন ব্রাজিলে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এর আগে তিনি আলজেরিয়ায় কাউন্সিলর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। মেজর রাশেদ চৌধুরী টোকিওতে কাউন্সিলর পদে নিযুক্ত ছিলেন। মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন সৌদি আরবের মিশন উপপ্রধান হিসেবে (বেনজির ভুট্টোর সরকারও করাচিতে একই পদে তার নিয়োগ গ্রহণ করেনি), মেজর শরিফুল হোসেন ওমানে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স দায়িত্ব পালন করেছেন। উল্লেখ্য, তাঁরা সবাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিনিস্টার হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন।
মূলত, এই জিয়াউর রহমান ছিলেন ক্ষমতা লোভী। যখন বিপথগামীরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার বিষয়ে জিয়াউর রহমানের কাছে পরামর্শের জন্য আসে, সে সময় তিনি তাদেরকে চুপ না করিয়ে উৎসাহ দেন। যার প্রমাণ স্বরূপ দেখা যায়, জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণের পর তার আশে পাশে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা থাকলেও তাদের কোনো প্রকারের শাস্তি না দিয়ে উল্টো বহাল তবিয়তে জীবন যাপনের ব্যবস্থা করে দেন।
জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই হাজার দণ্ডপ্রাপ্ত  যোদ্ধাপরাধী ও বিচারাধীন একাত্তরের ঘাতকদেরকে জেল থেকে ছেড়ে দিল,গোলাম আজমকে দেশে ফিয়ে এনে নাগরিকত্ব দিল,জামাতে ইসলামকে রাজনৈতিক ভাবে পুনর্বাসিত করল,রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী করল,আব্দুল মান্নান কে মন্ত্রী করল,ধর্মকে পুঁজি করে মানুষকে ধুঁকা দিতে লাগল।বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে মারাত্মক অপপ্রচার চালাত লাগল—যা জিয়ার গড়া বিএনপির নেতা-কর্মীরা আজও চালিয়ে যাচ্ছে!
দীর্ঘ প্রায় ৭বছর বঙ্গবন্ধুর বেঁচে যাওয়া শেষ দুই উত্তারাধীকার শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে নির্বাসনে রেখেছিল জিয়াউর রহমান।
অবশেষে ১৯৮১সালের ১৭মে অবৈধ সামরিক সরকার জিয়াউর রহমানের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে পিতার মতই সেদিন এক ঝঞ্ঝা বিক্ষোব্ধ বাংলার বুকে লাখো জনতার মাঝে পৌঁছেই কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন,আমার আর হারাবার কিছু নাই,ফাঁসির রজ্জু নিয়ে এসেছি,প্রচলিত আইনেই বাংলার মাটিতে জাতির পিতাকে হত্যার বিচার করব।আর চার দিকে তখন লক্ষলক্ষ জনতা সেদিন শ্লোগান দিয়ে বলেছিল, হাসিনা তোমাই কথা দিলাম পিতৃহত্যার বদলা নেব।সেই শ্লোগান সত্যে পরিণত হল।দেশের প্রচলিত আইনেই শত বাধা ও ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু সহ প্রায় ২৩জনকে নির্মম ভাবে খুন করে যে খুনি-নিসুদক-ঘাতকরা দম্ভ করে বেড়াত আর বলত,we killed sheikh Mujib,dare put me on trial.ইতোমধ্যে অনেক খুনিরই ফাঁসি হয়েছে বাকিরা এখনো বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে।আশা করি অচিরেই বাকি দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিরাও ফাঁসিতে ঝুলে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবে। পরিশেষে আমার লিখা কবিতা আগস্টের শোকগাথা দিয়েই শেষ করছি, জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু —

আগষ্টের শোকগাথা
—————————-
তুমি তো মহান পিতা,
তোমার রক্ত চুষে বেড়ে উঠা
ছারপোকার দল তোমাকে নয়—
হত্যা করেছিল বাংলাদেশ,
হত্যা করেছিল বাঙ্গালীর বিশ্বাস,
হরণ করেছিল বাঙ্গালীর সমভ্রম।

তুমি তো বাঙ্গালীর পিতা,
একাত্তরের বিশ্বাস ঘাতকেরা
তোমার ঔদার্য আর মহানুভবতাকে
দুর্বল ভেবে তোমাকে চরম আঘাত হেনে
চেয়েছিল মুছে দিতে বাংলার স্বাধীনতা।

তুমি তো রাজনীতির মহাকবি,
তোমার ছায়াতলে নিত্য বেড়ে উঠা
আততায়ী পাকাদর্শের প্রেতাত্মারা
এক লোভী জেনারেলের মদদে
মধ্য আগষ্টের সুবেহ সাদিকে
মুয়াজ্জিনের “হায়া লাসসালা”–প্রভূর
নামের আহবানকে উপেক্ষা করে
হিমালয় সম পিতা-তোমার পদতলে
দাঁড়িয়ে একদল কাপুরুষ -উন্মার্গ সৈনিকবেশী জিঘাংসায় উন্মত্ত হায়েনার পাল,ইতিহাস-মানচিত্র বদলে দিতে
পিতৃ হত্যার দায় এঁকে দিল জাতীর ললাটে,
বিংশ শতাব্দীর কারবালায় এসেছিল
সেই সীমার বয়ে দিতে ফোরাত নদীর
তীরে সেই পুরনো হাহাকার—হত্যা করল
জায়া-জননী ভ্রাতা-ভগিনী আর এক বেহেস্তী গোলাপ সদৃশ শিশু রাসেলকে।

তুমি তো রাখাল রাজা,
তোমার মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়েছিল
রাখালিয়া বাঁশির সুর,ছলাৎ নদীর সঞ্চারণী আর কৃষকের লাঙ্গলের ফলা,
মর্সিয়া শোকে পাথর ও কাতর হয়েছিল
তোমার সাত কোটি সন্তানেরা।

তুমি তো শান্তির দূত,
আকাশের মত চওড়া শ্বেতকপোতের মত
কোমল তোমার বুকে চালিয়ে ছিল আঠারটি বুলেট—-তুমি লুটিয়ে পড়নি;পড়েছিল বাংলাদেশ আর তোমার আপন পতাকা।

তুমি তো কল্পনার ফিনিক্স পাখি,
তোমার পবিত্র দেহটাকে পাপীদের বড় ভয় ছিল,টোমাকে নিয়েগেল তোমার বেড়ে উঠা টুঙ্গিপাড়ায়—সেই অমরাবতী নদী
মধুমতীর জলের তীরে।
তোমার সোনার দেহটাকে ৫৭০’র সাবানে
ধূয়ে মার্কিন মোটা কাপড়ে ঢেকে শুয়ে দিল তোমার প্রিয় মৃত্তিকায়;কিন্তু সাড়ে তিন হাত মাটির কুহর ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের দেহটাকে ঠাঁই দিতে অক্ষম—
তুমি উন্মগ্ন বীরাত্মা রূপে আর সতেজ ও
বলিষ্ঠ হয়ে উঠলে;তোমার কণ্ঠস্বর হয়ে উঠল প্রলয় শিঙ্গা ;তোমার চেতনা হয়ে উঠল সার্বজনীন চেতনা—তোমার আবেগ হয়ে উঠল প্রমত্ত সাগরের উন্মন্থিত ঢেউ
তোমার প্রবহমান রক্ত হয়ে উঠল অগ্নিগিরির লাভা
তুমি উচ্চতায় হিমালয়কে ছাড়িয়ে আকাশ স্পর্শ করলে—আর ঘাতক ও ষড়যন্ত্রীরা
ইতিহাসের আঁস্থাকুড়ে ঝুলে আছে লাশ হয়ে;তুমি মরনির—কারণ তোমার দৃঢ় প্রত্যয়ে জন্ম নিল একটি জাতি একটি দেশ একটি পতাকা,
তাই তুমি ফিরে এলে অমর হয়ে।

 

লেখক : শেখ হাবিবুর রহমান বাবু কবি

অর্থনীতির অধ্যাপক বঙ্গবন্ধু-গবেষক

 সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

 

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |