শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২২ পূর্বাহ্ন

আপডেট
অর্ধশত নারীর সঙ্গে রোমান্স স্ক্যাম, প্রতারিত ৫০ নারী, গ্রেপ্তার ১

অর্ধশত নারীর সঙ্গে রোমান্স স্ক্যাম, প্রতারিত ৫০ নারী, গ্রেপ্তার ১

অর্ধশত

নিজস্ব প্রতি‌বেদক : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রায় অর্ধশত নারীর সঙ্গে রোমান্স স্ক্যাম ও স্বপরিবারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার ফাঁদে ফেলে প্রতারণার অভিযোগে একজন‌কে গ্রেপ্তার করেছে ডিএম‌পির সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃ‌তের নাম- মো. বেনজির হোসেন (৪০)।

সিটিটিসি বলছে, প্রতারক বেনজিরের ফেসবুকে ভূয়া জৌলুসপূর্ণ প্রোফাইল তৈরি করে এই প্রতারক নিঃসঙ্গ নারী ভিক্টিমদের টার্গেট করে প্রথমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করতো। পরে বিয়ের প্রলোভন ও স্বপরিবারে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ক‌রে‌ছে বছরের পর বছর ধরে। প্রথমে বিশ্বাস তৈরি করে সেই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে লাখ লাখ টাকা এমনকি কোটি টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটিয়েছেন এই প্রতারক।

সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এ তথ্য জা‌নি‌য়ে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান ব‌লেন, বেনজির হোসেন শাহিদ হাসান নামে আমেরিকা প্রবাসী এক বাংলাদেশী বিমান চালকের প্রোফাইল হুবহু কপি করে Shahid Hasan (Pilot Officer) নামে একটি ভুয়া ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করে। ফেসবুক প্রোফাইলটিকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য সে নিয়মিত শাহিদ হাসানের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে বিমান চালানোর ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতো। প্রতারক বেনজির হোসেন ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেইজে নিঃসঙ্গ নারী ভিক্টিমদের টার্গেট করে ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে প্রথমে প্রেমের ফাঁদ ফেলে, পরে বিয়ের প্রলোভন ও স্বপরিবারে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাতো। সে অডিও কলে ভিক্টিমদের সাথে কথা বললেও কখনোই ভিডিও কলে নানান অজুহাতে কথা বলতো না। এক পর্যায়ে সে বিভিন্ন সময় বিপদে পরার কথা বলে তার দেয়া বিভিন্ন নগদ নাম্বারে (প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা ১৯টি নগদ নাম্বারের বিষয়ে জানা গিয়েছে) ধাপে ধাপে লাখ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। প্রতারক বেনজির হোসেন এর প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১৩টি নগদ নাম্বারে গত ৪ মাসে ১ কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।

আরো  পড়ুন: নৌকার মনোনয়ন পেলেন যারা

প্রতারক বেনজির হোসেন নড়াইল জেলায় নিজের বাড়িতে থেকে প্রতারণার কাজ করলেও ক্যাশ আউট করতো তার বাড়ি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে যশোর ও খুলনা জেলায় বিভিন্ন নগদ ক্যাশ আউট পয়েন্টে। তার প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিম এবং নগদ নাম্বারের রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহৃত এনআইডি অন্য ব্যক্তির নামে। ক্যাশ আউট করার সময় প্রতারক বেনজির হোসেন পরিচয় ও চেহারা গোপন করার জন্য ক্যাপ, সানগ্লাস ও মুখে মাস্ক পড়ে থাকতো।

তিনি আরও জানান, এমনই একজন ভিক্টিম স্বপ্না (ছদ্মনাম) একজন সিঙ্গেল মাদার। প্রতারক বেনজির হোসেনের প্রতারণার স্বীকার হয়ে গত সাত মাসে বিভিন্ন নগদ নাম্বারে প্রতি মাসে ১৪-১৫ লাখ করে টাকা দিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা খুইয়েছেন। একই সময়ে অপর একজন ভিক্টিম জান্নাত (ছদ্মনাম) প্রতারক বেনজির এর কাছে খুইয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ টাকা। প্রতারক বেনজির হোসেনের স্মার্ট ফোনে ৫০ এরও অধিক ভিক্টিমের সন্ধান পাওয়া গে‌ছে।

স্বপ্না এবং জান্নাত গত এক সপ্তাহের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে অভিযোগ নিয়ে সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে প্রতিকারের জন্য আসলে সাইবার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন টিম তাদের মামলা করার পরামর্শ দেয় এবং ছায়া তদন্ত শুরু করে। ভিক্টিম স্বপ্না রাজধানীর ওয়ারী থানায় প্রতারণার বিষয়ে ২১ নভেম্বর মামলা দায়ের করেন। ২২ নভেম্বর ছায়া তদন্তে নেমে বিশদ প্রযুক্তিগত অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে বেনজির হোসেনকে শনাক্ত করে খুলনার ফুলতলায় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত নগদ নাম্বার থেকে ক্যাশ আউটের সময় সন্ধ্যায় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।

বেনজির হোসেন এর সম্পদের পাহাড়

দৃশ্যমান কোন আয়ের উৎস না থাকা স্বত্ত্বেও বেনজির হোসেন গত কয়েক বছরে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থ দিয়ে বিপুল অর্থ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। গত কয়েক বছরে প্রতারণার অর্থে মালিক হয়েছেন ৫ বিঘা জমির উপর বাগান বাড়িতে (২ তলা ডুপ্লেক্স ভবন), অনুমানিক ৩ বিঘা জমির উপর সম্প্রতি কেনা বিলাসবহুল ভবন, নড়াইলে বিভিন্ন জায়গায় অনুমানিক ২০ বিঘা মাছের খামার, নড়াইলে বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ভবন, যশোর ও সাভারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবন ও বিপুল ব্যাংক ব্যালেন্স।

সাংবা‌দিক‌দের এক প্রশ্নের জবাবে ‌সি‌টি‌টি‌সি প্রধান বলেন, বেনজির এইচএসসি পাস করে একটা চাকরিতে যোগ দেয়। চুরির দায়ে সেই চাকরি চলে যায় তার। তি‌নি খুবই নিন্মবিত্ত পরিবারের। তার বাবা সেই অঞ্চলের বিভিন্ন হাট বাজারে তালের শাস বিক্রি করতেন। তবে খুব মেধাবী ছি‌লেন। বেন‌জি‌রের বৈধ কোন পেশা নেই। তার মূল পেশাই প্রতারণা করা। এলাকার সাধারণ মানুষ সন্দেহ করলেও নানা অপরাধের জড়িত থাকায় কথা বলতো না।

তিনি বলেন, একজনের অভিযোগের ফলে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি। তার প্রতারণার শিকার অসংখ্য নারী। আমরা ইতোমধ্যে ৫০ জনকে পেয়েছি, যারা বেনজিরের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তার প্রতারণার শিকার হয়ে এক নারী আত্মহত্যাও করেছেন। ভিকটিমদের কাছ থেকে আপত্তিকর ছবিও সংগ্রহ করতো। অনেক ভিকটিম মানসম্মানের ভয়ে প্রকাশও করতে চান না।

আসাদুজ্জামান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তার ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করে দিয়েছে। সে গল্প বলতো সেই গল্প বিশ্বাসযোগ্য আকারে বলে ভিকটিমদেরকে প্রেমের ফাঁদে ফেলত। এরপর আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার সিলেটের কার্ড দেখা তো। যে ভিকটিম অভিযোগ করেছে সেই ভিকটিমের ভিসার কপিও তাকে পাঠিয়েছে। এসব বিশ্বাস করার জন্য সে নানা গল্প করত। তার কাছ থেকে ছয় মাসে এক কোটি টাকারও বেশি টাকা নিয়েছে।

 

প্রতিদিনের কাগজ

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |