রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন

গরমে বেড়েছে তালশাঁস বিক্রি- কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ বান্ধব তাল গাছ

গরমে বেড়েছে তালশাঁস বিক্রি- কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ বান্ধব তাল গাছ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : আমের রাজধানী খ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে জমে উঠেছে মৌসুমি ফল তালশাঁস বেচা-কেনা। জেলা শহরের নিউ মার্কেট ও বিভিন্ন এলাকার হাটবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ জনবসতি স্থানে প্রতিদিন তালশাঁস নিয়ে বসছেন ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা গেছে তালের শাঁসের দোকান গুলোতে সব বয়সী ক্রেতাদের ভিড়। প্রতি পিস তালের শাস (কাঁচা তাল) বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা হিসেবে। তবে কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ বান্ধব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষাকারী তাল গাছ। এক সময় গ্রামবাংলার অধিকাংশ বাড়ি, রাস্তা ও মাঠে প্রচুর পরিমাণ তালগাছ দেখা যেত। কালের পরিক্রমায় এখন হারিয়ে যেতে বসেছে তালগাছ। এখন আর তেমন দেখা মেলে না তালগাছ। বাবুই পাখির বাসার হাজার হাজার বাবুই পাখির কইছির-মিচির ডাকের মনোরম দৃশ্যও চোখে পড়ে না আর। তালগাছ কমে যাওয়ার ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে পুষ্টি সমৃদ্ধ মৌসুমি ফল তালশাঁসের উৎপাদন। বাড়ছে বজ্রপাতের ঝুঁকি। পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে তালশাঁসের কদর বাড়ছে। বর্তমানে অনেকেই তালের আঁটি রোপণ করে তাল গাছ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি বজ্রপাত রোধে বিভিন্ন রাস্তার ধারে তালগাছ রোপণ করছে বিভিন্ন সংস্থা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের নিউ মার্কেট এলাকায় তালশাঁস বিক্রি করছিলেন সদর উপজেলার বড়পুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা সোহেল রানা। তিনি বছরের অন্যান্য সময় রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। এই সময়টাতে বোরো ধান কাটা শেষে,তালের শাঁস বিক্রি করেন। সদর উপজেলার বরেন্দ্র এলাকাতে তার বাড়ি হওয়ায় তাল গাছের খোঁজ খুব সহজেই পেয়ে যান। কাগজ প্রতিবেদক কে তিনি বলেন একটি তাল থেকে দুই থেকে তিনটি শাঁস পাওয়া যায়। প্রতি পিস এখন ৫ থেকে ৬ টাকায় বিক্রি হয়। গ্রামে গ্রামে ঘুরে কচি তাল কিনে এনে বাজারে বিক্রি করেন তিনি । তালের সংখ্যা ভেদে একটি গাছের দাম পড়ে ৫শত থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতিদিন ৫শ থেকে ৭শ টাকার তালশাঁস বিক্রি করে লাভ হয়। সদর উপজেলার বাসিন্দা জামাল আলী। তার ভ্রাম্যমান দোকানের সামনে গিয়ে দেখা যায় পথচারীরা তার কাছে থেকে শাঁস কিনছেন। তালশাঁস বিক্রি করতে করতে তিনি বলেন ঝাপসা গরমে অস্থির মানুষ। পথচারীরা তালশাঁস খেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছে। কেউ একটু তরল, আবার কেউ একটু শক্ত শাঁস পছন্দ করেন। তবে অধিকাংশ মানুষ তরল ধরণের শাঁস পছন্দ করেন। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ কাঁদি (ছড়া) তাল বিক্রি হয় । তালের মৌসুম শুধু তাল বিক্রি করি, এবং বছরের অনান্য সময় বিভিন্ন কাজে জড়িত থাকি। গাছ থেকে তালের কাঁদি কেটে তা আবার নামানো, বাজারে নিয়ে আসা , তারপর কাটাকুটি করে তবেই ক্রেতার হাতে দিতে হয়।

তালশাঁস ক্রেতা শাজিদুল হক নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি বলেন আগে গ্রামের বাড়ির আশেপাশে খুব সহজেই পাওয়া যেত এই ফল। কিন্তু দিন দিন তাল গাছ কমে যাওয়ার কারণে তেমন আর পাওয়া যায় না। কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরছিলাম এসময় দেখলাম বিক্রি করতে। তালশাঁসে অনেক পুষ্টি গুণাগুণ রয়েছে। নতুন ফল আগের মত পাওয়া যায় না। তাই নিজে খাইলাম ও পরিবারের সদস্যদের জন্য কিনলাম।

একটি তালের শাঁসে ৯২ শতাংশই জলীয় অংশ। এতে আছে ক্যালরি, শর্করা, ক্যালসিয়াম, খনিজ, ভিটামিন সি। সকল বয়সের মানুষকে তালশাঁস খাওয়া প্রয়োজন । চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা সিভিল সার্জন এসএম মাহমুদুর রশিদ, প্রতিদিনের কাগজ কে বলেন, তালশাঁসের বেশির ভাগ অংশ জলীয় হওয়ায় শরীরে পানির চাহিদা মেটাতে সক্ষম এ ফল । কোন কারণে দ্রুত শরীর পানিশূন্য হশে যায় সেটিও পূরণ করতে পারে এই ফলটির শাঁস। তালশাঁসে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, রয়েছে। প্রচন্ড গরমে তালের শাঁস শরীরকে দ্রুত শীতল করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীরের কোষের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থও বের করে দেয়। তবে কারও যাদি ঠান্ডার সমস্যা থাকলে তাদের তালের শাঁস খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান থাকা উচিত।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |