রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন
আসাদুজ্জামান তুহিন: পরিবার নিয়ে গোপনে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মাহমুদুল ইসলাম। গতবছর সৌদি এয়ারলাইনসের একটি বিমানে করে তিনি দেশত্যাগ করেন। তবে কেন তিনি পালিয়ে গেলেন, সে সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে পারেননি। দায়িত্ব ফেলে থানার ওসির এভাবে পালিয়ে যাওয়া নিয়ে বিব্রত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ নিয়ে তাঁরা অভিবাসন পুলিশ থেকে দরকারি কাগজপত্রও সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু গণমাধ্যমের সামনে কেউ কোনো কথা বলতে চাননি। ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাসুম আহম্মদ ভুইয়ার সাথে কয়েক দফা মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেই রিসিভ করেননি। জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, অবসর জনিত কারনে চাকুরী ছেড়ে চলে গেছেন। তবে তার চাকুরী আরও ছিল। এখন তিনি কোথায় আছেন তা জানি না, অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে।
ওসি মোঃ মাহমুদুল ইসলাম বডিগার্ড আব্দুল লতিফ জানান, স্যার অবসরে চলে গেছেন। চাকরী আরও ছিল। কোথায় আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্যার সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে বা কানাডায় আছেন। আমি আর কিছু জানি না। ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন,ওসি মোঃ মাহমুদুল ইসলাম, ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানা,ভালুকা মডেল থানা ও ত্রিশাল থানায় কর্মরত ছিলেন। তিনি হঠাৎ করে অবসর জনিত আবেদন দিয়ে কোথায় চলে যান জানি না । এখন আপনার কাছে শুনছি সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। নিখোঁজ থাকা প্রসঙ্গে খোঁজ করতে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন যে তিনি আমেরিকা পাড়ি জমিয়েছেন। এরপর তাঁর বিদেশ গমন সম্পর্কে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পুলিশের কাছে জানতে চাওয়া হয়। পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে পুলিশকে জানানো হয়, গতবছর জানুয়ারী মাসে যেকোন দিন সকালে সৌদি এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে করে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন।
সরকারি একজন কর্মকর্তা, বিশেষ করে পুলিশের মতো সুশৃঙ্খল বাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে বিদেশে যেতে হলে অনেক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগ, পুলিশ সদর দপ্তরসহ বেশ কয়েকটি পর্যায়ের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এত কিছু পাশ কাটিয়ে কাউকে না জানিয়ে তিনি কীভাবে বিমানবন্দর পার হলেন, জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ওসি মাহমুদুল ইসলাম নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভ্রমণের আমন্ত্রণ-সংবলিত একটি চিঠিও জোগাড় করেন। সেই আমন্ত্রণের ওপর ভিত্তি করে ভিসা নেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোঃ মাহমুদুল ইসলাম কোতোয়ালী মডেল থানা,ভালুকা মডেল থানা ও ত্রিশাল থানা এলাকায় দায়িত্ব পালনের সময় দুটি হাউজিং কোম্পানির হয়ে জমি দখল,মাদক কারবারে সহায়তা করেছিলেন। এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এলাকার মানুষ পুলিশ সদর দপ্তরে একাধিক অভিযোগও করেন। তিনি ছাত্রজীবনে জামালপুর আশেক মাহমুদ সরকারী কলেজের ছাত্রদলের জিএস ছিলেন। এমন একজন কর্মকর্তা ময়মনসিংহের তিনটি থানায় পদায়ন করার সুযোগ করে দেন। এতে করে প্রায় ৫ বছরে শতকোটি কামিয়েছেন। চাকুরীতে থাকা অবস্থায় বিদেশে টাকা পাচারও করেছেন।