শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২২ পূর্বাহ্ন

আপডেট
আলিশান বাড়িতে বিলাসী জীবন

আলিশান বাড়িতে বিলাসী জীবন

রেজাউল করিম রেজা : ময়মনসিংহ নগরীতে একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং কর্মচারিদের অনিয়মে উপার্জিত বিপুল অংকের কালো টাকায় জমি ক্রয়ের মাধ্যমে আলীশান ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা। তারা স্থানীয়ভাবে বিত্তশালী হিসাবে পরিচিত। সেই সুবাদে ময়মনসিংহ নগরীর গোলকিবাড়ি এখন অভিজাত এলাকা। ময়মনসিংহ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের প্রধান সহকারি,যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা,সমবায় কর্মকর্তা,ভূমি সহকারী কর্মকর্তা,ইউনিয়ন পরিষদ সচিব, পুলিশ কর্মকর্তাসহ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এখন বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। নিজ এলাকায় জমি ক্রয় কিংবা বাড়ি ঘর নির্মাণ করলে প্রতিবেশিদের কাছে দুর্নীতির কালো টাকার উৎস ফাঁস হয়ে যাবে এই আশঙ্কায় ময়মনসিংহ নগরীতে করেছেন এই বাড়ি।

দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত টাকা দিয়ে ময়মনসিংহ নগরীর গোলকিবাড়ি এলাকায় বাড়ি নির্মান করেন। যার খরচ অনুমান ২২ কোটি টাকা হয়েছে বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে। তাদের স্বপ্নের বাড়িতে স্ত্রী- সন্তানদের নিয়ে আয়েশি জীবনযাপন করছেন তারা। আর সেখান থেকেই কর্মস্থলে যাতায়াত করেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মুক্তাগাছা সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শাহীন আলম, ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের প্রধান সহকারি এনামুল হক,ভালুকার সমবায় কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম,জামালপুরের ভূমি সহকারি কর্মকর্তা (নায়েব) আব্দুল গনি,নান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদ সচিব শাহীন আলমসহ ১৬ জন সরকারী কর্মচারী প্রায় ২২ কোটি টাকা খরচ করে এই আলীশান বাড়ি গড়ে তুলেছেন। শহরের গোলকিবাড়ি এলাকায় এই সিন্ডিকেট প্রথমে ৫ কোটি টাকায় ৬ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। এরপর আরো অনুমান প্রায় ১৭ কোটি টাকা খরচ করে গড়ে তুলেন ১০ তলা বিশিষ্ট ভবন। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন থেকে ৮ তলা অনুমোদন নিলেও করেছেন ১০ তলা। গুলকিবাড়ি এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এই এলাকায় তাদের মত আরো কয়েকজনের আলিশান বাড়ি রয়েছে। গোলকিবাড়ি এলাকায় এখন অভিজাত এলাকা। এই এলাকায় কমপক্ষে ১০/১২ টি ভবন নির্মাণ করেছেন তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর একাধিক কর্মচারী। তাদের বেতনের টাকায় কোনোমতে জীবন ধারণের কথা। তারা একেক জন যেন টাকার কুমির। যুগের পর যুগ এরা ঘুরে ফিরে একই স্থানে বহাল তবিয়তে । ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের প্রধান সহকারি এনামুল হক দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থেকে শিক্ষক নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, শিক্ষকের এমপিওভুক্তি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন, জাতীয়করণ,অবসরের পর পেনশনের টাকা তোলা নিয়ে ঘুষ দুর্নীতি করেন অবাধে।

 

এ ছাড়াও নাম, বয়সসহ নানা বিষয় সংশোধন, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পেতে তার অফিস থেকে ফাইল পাঠাতে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নেন। আরেক সিন্ডিকেট সদস্য মুক্তাগাছা সহকারি যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শাহীন আলম । ঘুষ, দুর্নীতি অনিয়মের মহোৎসবে মত্ত থাকেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য প্রথমে নামের তালিকা বানান। নির্ধারণ করেন প্রশিক্ষণের স্থান, নাম। তৈরি করা হয় প্রকল্প। প্রকল্পগুলো অনুমোদন হয়। এরপর অফিসের চেয়ার-টেবিলে বসে শেষ করেন প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণার্থীদের নামে ইস্যু করা সনদপত্র গায়েবি বিতরণ করেন । শাহীন আলমের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

তার অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সরকারের গৃহীত কোনো প্রদক্ষেপ আলোর মুখ দেখছে না দীর্ঘদিন ধরে। একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে স্থানীয় মধ্যস্বত্বভোগীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এ সখ্যতাকে পুঁজি করে যুব মহিলা ও যুবকদের মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে অবৈধভাবে আর্থিক সুযোগ নিচ্ছেন। কর্মস্থলে অনিয়মিত থেকে বেশির ভাগ সয়মই গোলকিবাড়ি বহুতল ভবন নিজ প্রকল্প এলাকায় ব্যস্থ থাকেন। কিন্তু হাজিরা খাতায় একদিনেই গোটা মাসের হাজিরা দিয়ে চলে যান। দীর্ঘদিন যাবৎ মনগড়া অর্থাৎ নিজের ইচ্ছামত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। উপজেলার বেকার যুব মহিলা ও যুবকরা তার কম্পিউটার,সেলাই, ফসল চাষাবাদ, গবাদিপশু পালনসহ নানান প্রশিক্ষন বচ্ছিত। অথচ সরকারিভাবে এখাতে বরাদ্দ হলেও তা ব্যয় কিনা প্রশ্ন উঠেছে। সিন্ডিকেট সদস্য জামালপুরের ভূমি সহকারি কর্মকর্তা আব্দুল গনি ঘুষ ছাড়া কাজ করেন না।

ভূমিহীনদের জমি বরাদ্দ দেওয়ার নামে, জমির মিউটেশন, খাজনার টাকা বেশি আদায় করে কম টাকার রশিদ প্রদান, বাজারের ভিটি বরাদ্দের নামে টাকা নেওয়া এবং অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্ত করে দিতেও মোটা অংকের টাকা ঘুষ নেন তিনি। জামালপুর জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে ভূমিহীনদের নাম অনুমোদন হয়ে আসার পর জমির কবুলিয়ত দলিল করে দিতে টাকা লাগে তার কাছে । এছাড়াও বিভিন্নভাবে তিনি টাকা আদায় করেন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। গোলকিবাড়ি এলাকার অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আজিজুল মাস্টার জানান, আমি ৩৬ বছর প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেছি, দুটি ছেলে ও একটি মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করেছি। কিন্তু তাদের জন্য কোন সম্পদ রেখে যেতে পারবো না। আজ আমার এলাকায় ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সামান্য একজন কেরানিসহ কয়েকজন মিলে ১০ তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণ করেন। আমি জানিনা তারা এত টাকা কোথায় থেকে পেলেন।

সামান্য একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে এত টাকার মালিক হওয়া আমার কাছে স্বপ্ন মনে হচ্ছে। তাদের সম্পর্কে আরও খোঁজ নেন। ময়মনসিংহ নগরীর অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনীর সৈনিক ইকবাল করিম চৌধুরী জানান, এই ১০তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং টা খুব দ্রুতগতিতে কাজ সম্পন্ন করেছেন। আমি শুনেছি কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী নির্মাণ করেছেন। তারা এত টাকার মালিক কেমনে হলেন আমার মাথায় কাজ করে না। তবে শুনেছি কিছুদিন আগে দুদকের একটি টিম তাদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। এখন নিরব। তাদের এখানে দুদক অফিসের কেরানী প্রায়ই আসে। হয়তো তারা ম্যানেজ, তাই অনুসন্ধান বন্ধ। ময়মনসিংহের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি প্রকল্পে জেলায় ২৯২ কোটি টাকা হরিলুট হয়েছে। এভাগ সবাই পেয়ে আজ নামে- বেনামে কোটি কোটি টাকার জমি- প্লট ক্রয় করেছেন। এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কেরানী এনামুল হক জানান, কি দরকার নিউজ করার। সন্ধ্যার পর আমার এক পরিচিত সাংবাদিক আছেন। আপনার সাথে দেখা করবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |