শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৬ পূর্বাহ্ন

আপডেট
পিএসসির সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলীদের মালিক কারা?

পিএসসির সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলীদের মালিক কারা?

পিএসসির সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলীদের মালিক কারা?

নিজস্ব প্রতিবেদক :
পিএসসির সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলীকে নিয়ে এখন তুলকালাম চলছে। লাগাতার বিরামহীন ভাবে তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন। আবেদ আলীর চাকরি চলে গিয়েছিল ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। কিন্তু তার আগেই তিনি কোটি কোটি টাকার সম্পদ বানিয়েছেন প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। আবেদ আলী একা নন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের কেলেঙ্কারিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ কিন্তু সাধারণ মানুষের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে আবেদ আলী সহ যে ১৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের পক্ষে এককভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা সম্ভব। আবেদ আলীরা নিশ্চয়ই ওপরের কারও মদদে পৃষ্ঠপোষকতায় এবং আনুকূল্যেই প্রশ্নপত্র ফাঁস করার সুযোগ পেয়েছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। আর এ কারণেই মনে করা হচ্ছে যে আবেদ আলীদের মালিক কে? আবেদ আলীদের মালিককে খুঁজে না পাওয়া গেলে কোনও অবস্থাতেই প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করা যাবে না।

আবেদ আলী গাড়িচালক। পিএসসির বিভিন্ন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গাড়িচালক ছিলেন ২০১৫ সাল পর্যন্ত। তার গাড়িচালক হিসেবে ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তিনি গাড়ি চালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই সময় যারা পিএসসি চেয়ারম্যান ছিলেন এবং পিএসসির সদস্য ছিলেন, বিভিন্ন সময়ে তাদের গাড়ি আবেদ আলী চালিয়েছেন। আর সর্বশেষ তিনি এক এগারোর সময় নিযুক্ত হওয়া পিএসসির চেয়ারম্যান প্রয়াত শাহাদাত হোসেনের গাড়িচালক ছিলেন।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে পিএসসি কীভাবে ব্যবহৃত হতো তা সকলেই জানেন। এ সময় হাওয়া ভবন থেকে তালিকা আসবে এবং সেই তালিকা অনুযায়ী পিএসসি চাকরি দিত। হাওয়া ভবনের তালিকা ছাড়া কারও চাকরি পাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। আর এই সময় পিএসসি যে অরাজকতা এবং বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল, তার সুযোগ নিয়েছিলেন আবেদ আলী। আবেদ আলী এই সময় মূলত প্রশ্নপত্র ফাঁসের নেটওয়ার্কটি তৈরি করেছিল এবং সেটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের মহোৎসব হয়েছিল পিএসসিতে।

২০১৫ সালের পর থেকে আবেদ আলী প্রশ্নপত্র ফাঁসের যে ঘটনা ঘটিয়েছিলেন তা হল তৃতীয় পক্ষের সহযোগিতা। এসময় তিনি সরকারি চাকরিতে ছিলেন না। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ২০১৫ সালে তাকে পিএসসি চাকরিচ্যুত করে। এখন প্রশ্ন দাঁড়াল যে ২০১৫ সালের পরও আবেদ আলী প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন কি না এবং করে থাকলে কার মদদে এবং পৃষ্ঠপোষকতায় করেছেন? পিএসসির প্রশ্ন পত্র তৈরি এবং প্রশ্নপত্র নির্বাচনের যে পদ্ধতি তাতে এই ধরনের প্রশ্নপত্র ফাঁস করা কঠিন এবং প্রায় অসম্ভব। একেবারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে যারা প্রশ্ন প্রণয়ন করছেন, প্রস্তাব বাছাই করছেন এবং চূড়ান্ত করছেন, তারা ছাড়া এই প্রশ্নপত্র কারও পক্ষে ফাঁস করা সম্ভব নয়।

পিএসসির চেয়ারম্যান নিজেই জানিয়েছেন, একাধিক সেট তৈরি হয় এবং লটারির মাধ্যমে একটি সেট চূড়ান্ত করা হয়। তিনি এটিও জানিয়েছেন যে, একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া কারও পক্ষেই জানা সম্ভব নয় যে কোন সেট দিয়ে পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু একজন দুর্নীতিবাজ বা প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী যদি সবগুলো সেট পেয়ে যান এবং সব গুলো সেট যদি তিনি বিতরণ করেন তাহলে কোন না কোন সেটের প্রশ্ন কমন পড়বে। অর্থাৎ পাঁচটি সেটই যদি একজন শিক্ষার্থী পায় তাহলে তিনি ওই পাঁচটি সেট পড়াশুনা করেই বিসিএস পরীক্ষায় ভালো করতে পারেন। আর এ কারণেই এখন খুঁজে দেখা দরকার যে, এই খপ্পরে সঙ্গে কারা জড়িত। পিএসসির প্রশ্নপত্র প্রণয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে যা বলা হয় তাতে প্রশ্ন প্রণয়নকারী, প্রশ্ন বাছাইকারী ছাড়া কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয়। এমনকি পিএসসির চেয়ারম্যানের পক্ষেও এটি জানা সম্ভব না। তাই যারা প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেছেন, প্রশ্ন চূড়ান্ত করেছেন এবং যারা প্রশ্নপত্র বাছাই করেছেন এবং এটি যেখান থেকে ছাপা হয়েছে তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে আবেদ আলীরা কোটি কোটি টাকার প্রশ্নপত্র বাণিজ্য করেছেন। প্রশ্ন হলো তাদের কি খুঁজে বের করা হবে?

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |