শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন

আপডেট
আওয়ামী লীগের সামনে কঠিন পাঁচ চ্যালেঞ্জ

আওয়ামী লীগের সামনে কঠিন পাঁচ চ্যালেঞ্জ

আওয়ামী লীগের সামনে কঠিন পাঁচ চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
সাম্প্রতিক কালে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র সফলভাবে দমন করতে পেরেছে আওয়ামী লীগ সরকার। বিশেষ করে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ক্ষয়ক্ষতির দগ্ধ স্মৃতি বহন করে আছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান। আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছে এবং সরকার পতনের যে নীলনকশা তা বাস্তবায়ন হতে দেয়নি—এটা যেমন সত্যি সেরকমই সত্যি হলো পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি। সামনের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগকে অনেকগুলো কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে এবং এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করেই টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় থাকা দলটিকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে হবে।

১. আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নেতিবাচক এবং অসত্য সংবাদ: আওয়ামী লীগের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় অস্বস্তির কারণ হলো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক এবং অসত্য খবরের স্তূপে। ১৭ জুলাই থেকে ঢাকা সহ সারা দেশে যে তাণ্ডব ঘটেছে, সেই তাণ্ডবের সঠিক খবর বিদেশে যাচ্ছে না। বরং গুজব, একপেশে সরকার বিরোধী খবরগুলোই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রাধান্য পাচ্ছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সূত্র ধরে এ সমস্ত খবরগুলোই প্রভাবশালী দেশ এবং আন্তর্জাতিক মহলে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যেন ভুল তথ্য না যায় এবং সরকার সম্পর্কে ভুল ধারণা বিভিন্ন দেশ গ্রহণ না করে সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২. নাশকতার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া: এই কয়েকদিনের তাণ্ডবে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ আলাদা আলাদা ভাবে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দিচ্ছে। কিন্তু সার্বিক ভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আর এই ক্ষয়ক্ষতি আওয়ামী লীগকে দ্রুত পোষাতে হবে। এমনিতেই দেশ অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কম। তার মধ্যেই এই বিপুল পরিমাণ ক্ষতি পোষানোর জন্য আওয়ামী লীগকে বড় রকমের বিনিয়োগ এ যেতে হবে। আর এর মধ্যে অনেকগুলোই আছে বৈদেশিক মুদ্রা নির্ভর। আর এ কারণেই এই সব মেরামত এবং পুনরায় চালুর করাটা সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। যেমন মেট্রোরেল এখন বন্ধ রয়েছে। মেট্রোরেলের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুনর্গঠন করতে এক বছর সময় লাগবে বলে বলা হচ্ছে। কিন্তু এই এক বছর মানুষের ধৈর্য থাকবে কি না সেটিও একটি বিষয়। তাছাড়া এই যন্ত্রপাতিগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন হবে বৈদেশিক মুদ্রা। এটি অপ্রত্যাশিত একটি ব্যয় এবং এই ব্যয় আওয়ামী লীগ কিভাবে মেটাবে সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন।

৩. সরকারের দুর্বলতা: এই ষড়যন্ত্র এবং নাশকতার মাধ্যমে সরকারের দুর্বলতাগুলো ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা ইত্যাদি প্রকট হয়ে উঠেছে। তাই আওয়ামী লীগকে দ্রুতই এই সমস্ত দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, সেটি দেখার বিষয়।

৪. শিক্ষাঙ্গনে শান্তি ও শৃঙ্খলা: এই ঘটনাগুলোর পর শিক্ষাঙ্গনগুলো এখন বন্ধ রয়েছে। শিক্ষাঙ্গন খোলার পর আওয়ামী লীগের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করার আগে ছাত্রলীগকে প্রায় সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। এই অবস্থায় ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে সহ অবস্থান করতে পারবে কি না, সেখানে আবার নতুন করে গোলযোগ হবে কি না সেটি এখন একটি অন্যতম বিবেচনার বিষয়।

৫. জনজীবনে স্বস্তি: এই সমস্ত সংকটের কারণে জনজীবনে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ নানা বিষয় নিয়ে অস্বস্তি যেন জনজীবনে ক্ষোভের সৃষ্টি না করে সেজন্য এখন থেকেই আওয়ামী লীগকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সামনের দিনগুলোতে এই চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে বর্তমান সরকারকে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |