শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৬ পূর্বাহ্ন

আপডেট
বেপরোয়া স্বতন্ত্র এমপি মালেক বাহিনী !

বেপরোয়া স্বতন্ত্র এমপি মালেক বাহিনী !

বেপরোয়া স্বতন্ত্র এমপি মালেক বাহিনী !

আতিকুল ইসলাম তিশন : পান থেকে চুন খসলেই সাধারণ মানুষকে মারধরের শিকার হতে হচ্ছে সংসদ সদস্য আব্দুল মালেক সরকারের সমর্থকদের হাতে। শুধু মারধর নয়, অনেককে মামলা দিয়েও করা হচ্ছে হয়রানী। এতে প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। ময়মনসিংহ- ৬ ফুলবাড়িয়া আসন থেকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নিবার্চিত হওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন আলহাজ্ব আব্দুল মালেক সরকার ও তাঁর অনুসারীরা। তাদের একের পর এক বেপরোয়া কর্মকান্ডে আতংকের জনপদ হয়ে উঠেছে উপজেলাটি। হত্যা, সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তাকে মারধর, স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চাঁদাবাজি সবকিছুতেই এমপির অনুসারীরা। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সংসদ সদস্যের এমন কর্মকান্ডে রাজনীতিতে অস্থিরতা বাড়ছে।

সংবাদ প্রকাশের জেরে গত ২২জুলাই রাতে স্থানীয় সাংবাদিক মোশারফ হোসেন শুভকে ফুলবাড়িয়া থানার সামনে মারধর করেন সংসদ সদস্য আব্দুল মালেক সরকারের সমর্থকরা। এঘটনায় তিনি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সংসদ নিবার্চনের জেরে গত ১৩ই মে রাতে ফুলবাড়িয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুর রহমান রবি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মালেক সরকারের সমর্থক জয়নাল আবেদীন দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এনামুর রহমান রবির শ্যালক আক্তার উল আলম শুভ (৩০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঘটনার ১৪দিন পর মারাযান।

গত ২৭ মার্চ এমপি আব্দুল মালেক সরকারের অনুসারীদের মারধরের শিকার হন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বেলায়েত হোসেন। ২৯ জানুয়ারী ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ভূমি উপসহকারী ছামিউল ইসলামকে ব্যাপক মারধর করেন এমপির অনুসারীরা। এঘটনায় তিনি একটি মামলা দায়েরও করেছেন। সংসদ নিবার্চনের পরপরেই ভাংচুর চালিয়ে এমপির অনুসারীরা নিয়ন্ত্রণে নেন আলম এশিয়া পরিবহন। এসব ঘটনায় রাজনৈতিক নেতা প্রশাসনিক কর্মকতার্দের মধ্যে ব্যাপক আতংক বিরাজ করছে। রাজনৈতিক সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতার দাবি স্থানীয়দের।

আহত সাংবাদিক মোশারফ হোসেন শুভ বলেন, এমপি আব্দুল মালেক ও তাঁর অনুসারীদের বেপরোয়া কর্মকান্ড নিয়ে বিভিন্ন সময় সংবাদ প্রকাশের জেরে আমাকে মারধর করা হয়েছে। গত ২২ জুলাই রাতে এমপির ছেলে এহসানুল আহমেদ রিফাত সরকারের নির্দেশে মাহাবুবুল আলম ভাঙ্গারী রাকিবসহ ১০—১২ জন থানার সামনে আমাকে মারধর করে। এসময় ভবিষ্যতে এমপির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকী দেয়া হয়। এঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজও রয়েছে। থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরেও পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। তাদের হুমকীতে পরিবার—পরিজন নিয়ে প্রাণনাশের ভয়ে আছি।

এবিষয়ে এমপির ছেলে ও ফুলবাড়িয়া উপজেলা ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক এহসানুল রিফাত আহমেদ সরকার বলেন, সাংবাদিক নিউজ করবে সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু তাকে (সাংবাদিক শুভকে) আমার নির্দেশে মারধর করা হয়েছে সেটা সঠিক নয়। সাংবাদিক লাইমলাইটে আসতে আমাদের নাম জড়াচ্ছেন। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেক।

ফুলবাড়িয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুর রহমান রবি বলেন, সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করার অপরাধে আব্দুল মালেক সরকারের লোকজনের হাতে আমার শ্যালককে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে। হত্যাকারীদের বাঁচতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন এমপি। হত্যাকারীদের পক্ষে এমপির একটি অডিও কথপোকথনেই প্রমাণ করে আমরা ফুলবাড়িয়াবাসী কতটা অসহায়। পূর্ববিরোধের জেরে গত ২৭ মার্চ ফুলবাড়িয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বেলায়েত হোসেনকে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে ৭-৮জন এমপির অনুসারী মারধর করেন। পরে তিনি ৩১ মার্চ বদলী হয়ে সদর উপজেলায় যোগদান করেন।

এবিষয়ে ফুলবাড়িয়া উপজেলার সাবেক মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বেলায়েত হোসেন বলেন, এখন ফুলবাড়িয়ায় চাকরি করাটা যে কারও জন্য একটু চ্যালেঞ্জিং। আমার প্রতি অন্যায় হয়েছে, আমি আর বেশিকিছু বলতে চাই না।
ফুলবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, ফুলবাড়িয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে। শুভ হত্যাকান্ডসহ বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় এমপি ও তাঁর অনুসারীদের নাম আসছে, যা মোটেও কাম্য নয়। এলাকার মানুষ এসব ঘটনায় ফুঁসে উঠছেন। এমপিকেই উদ্যোগ নিয়ে এলাকার পরিবেশ শান্ত করতে হবে।

ফুলবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক সেলিম বলেন, গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ফুলবাড়িয়ার পরিবেশ খুবই শান্ত ছিল, আব্দুল মালেক সরকার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ফুলবাড়িয়ার জনপদ অশান্ত হয়ে উঠেছে। নির্বাচনের পর থেকেই এমপি ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ আসছে। এর দায়ভার দল নিবে না। একজন জনপ্রতিনিধিকে আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিৎ। সাংবাদিককে মারধর অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্ত করে পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এসব বিষয়ে সংসদ সদস্য আব্দুল মালেক সরকার বলেন, শুভ হত্যা, শিক্ষা অফিসার ও সাংবাদিককে মারধর কারা করেছে, কেন করেছে প্রশাসনেই ভালো বলতে পারবে। যারা দীর্ঘদিন ফুলবাড়িয়া শোষণ করেছে, তারা এখন সুবিধা না পাওয়ায় এসব রটাচ্ছে। সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় আমার ছেলে কোন ভাবেই জড়িত নন। কারণ তখন আমার ছেলে ঢাকায় ছিল। ফুলবাড়িয়া যে কোন সময়ের তুলনায় এখন ভালো চলছে দাবি করেন আব্দুল মালেক সরকার।
ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, সাংবাদিক মোশাররফ হোসেন শুভ তাকে মারধরের ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ফুলবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আব্দুল মালেক সরকার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে গত ৭ জানুয়ারীর নিবার্চনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নিবার্চিত হন।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |