শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২০ অপরাহ্ন

আপডেট

এখন দিল্লিতে, তারপর…

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে এক দফা দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে একটি হেলিকপ্টারে গণভবন ছাড়েন শেখ হাসিনা। সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানাও ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টায় সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার তথ্য নিশ্চিত করেন।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গতকাল বেলা আড়াইটার পর সামরিক উড়োজাহাজে করে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন রাজনৈতিক আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে। ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বিকেল ৫টা ৩৬ মিনিটে শেখ হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি ভারতের নয়াদিল্লির গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। এরপর ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল বাংলাদেশের দেশত্যাগী সদ্যসাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। ভারতের গণমাধ্যম দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ইংল্যান্ডের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। আর তার বোন শেখ রেহানা আগে থেকেই দেশটির নাগরিক।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির মধ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল টানা সাড়ে ১৫ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা পদত্যাগ ছেড়ে দেশ ছাড়েন। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে গত ১৪ জুলাই চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা কোটা পাবে না তো কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?’ তার ওই বক্তব্যের পরদিন থেকে আন্দোলন আরও তীব্র হয়। এর আগে ৫ জুলাই এ আন্দোলন শুরু হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন এ বছরের ১১ জানুয়ারি। এর আগে ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। এরপর২০১৪ সালে বিএনপিসহ প্রধান বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া একতরফা দশম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনা টানা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন তৃতীয়বারের মতো। ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। ওই নির্বাচনে আগের রাতেই ব্যালটে সিল মারার ব্যাপক অভিযোগ ছিল। এই নির্বাচন ‘রাতের ভোট’ নামে পরিচিতি পায়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি আবারও প্রধানমন্ত্রী হন। তবে দেশের প্রধান বিরোধী দলগুলো অংশ না নেওয়ায় এ নির্বাচন নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। এতে নিজ দল আওয়ামী লীগ নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী করে ‘ডামি’ প্রতিদ্বন্দ্বিতার আয়োজন করা হয়। এ নির্বাচনকে বিরোধীরা ‘ডামি নির্বাচন’ বলে আখ্যা দেন। ছয় মাসের মাথায় গণ-আন্দোলনের মুখে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়লেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে গতকাল ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যম জল্পনামুখর হলেও এ বিষয়ে ভারত সরকার কোনো মন্তব্য করেনি। দেশটির গণমাধ্যম দ্য হিন্দু শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সূত্রকে উদ্ধৃত করে এক প্রতিবেদনে বলেছে, যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পারেন। তার সঙ্গে থাকা বোন শেখ রেহানা যুক্তরাজ্যের নাগরিক। কোটা আন্দোলন নিয়ে ভারত সরকার বেশ কিছুদিন পর সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে শুধু জানিয়েছিল, সেখানে যা চলছে, তা সেই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এক সপ্তাহ পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওই একই মন্তব্য করে বলেছিলেন, তাদের আশা, দ্রুত শান্তি ফিরবে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। গতকালও ভারত সরকার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

দুপুরে শেখ হাসিনার ঢাকা ছাড়ার খবর জানাজানির পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে প্রচার হতে থাকে নানা অসমর্থিত খবর। এসব খবরের মধ্যে রয়েছে ১. শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে আগরতলা গেছেন। ২. তিনি ঢাকা থেকে কলকাতা গেছেন। ৩. ভারত থেকে শেখ হাসিনা বিশেষ বিমানে দিল্লি রওনা হয়েছেন। ৪. হেলিকপ্টারে চেপেই তিনি দিল্লি রওনা হয়েছেন। ৫. দিল্লি বিমানবন্দরে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত অসমর্থিত খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত ও দেশত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি পরিবহন বিমান গতকাল সন্ধ্যায় দিল্লি-উত্তর প্রদেশ সীমান্তে গাজিয়াবাদের কাছে হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। সেখানে তার সঙ্গে দেখা করেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাননি। চেয়েছেন যুক্তরাজ্যের কাছে। তা গ্রাহ্য হলেই তিনি লন্ডনে রওনা হবেন। ততক্ষণ ভারত তাকে সাময়িক আশ্রয় দেবে। শেখ হাসিনা যে সময় দিল্লির অদূরে পৌঁছান, প্রায় সে সময়ই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দেখা করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি, শেখ হাসিনার দেশত্যাগ, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগ ও বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের নিরাপত্তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে তিনি অবহিত করেন।

সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, আজ মঙ্গলবার সংসদে জয়শঙ্কর বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দিতে পারেন। ভারতের সরকারি সূত্রে জানা যায়, বিরোধীরা দাবি তোলার আগেই সরকার নিজে থেকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সংসদকে অবহিত করতে চাইছে; বিশেষ করে বাংলাদেশে যেহেতু বহু ভারতীয়র বসবাস। শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য লন্ডন অন্তত গণমাধ্যমের দাবি তা-ই। কিন্তু কীভাবে তিনি সেখানে যাবেন, তা নিয়ে কোনো মহলে স্বচ্ছ ধারণা নেই। বিশেষ বিমান, নাকি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে এ বিষয়ে চলছে জল্পনা। এ-ও জানা যায়নি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার কথা হবে কি না।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |