শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২০ অপরাহ্ন

তাহলে কি একই সংস্কৃতির দিকে যাবে বাংলাদেশ!

তাহলে কি একই সংস্কৃতির দিকে যাবে বাংলাদেশ!

দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে এক নতুন বাস্তবতার মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশে গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহ। দেশে একটি গণ-অভ্যুত্থান ঘটছে। গণ-অভ্যুত্থানের এই পরিস্থিতির পটভূমি তৈরি হয়নি এক দিনে, এটা তৈরি হয়েছে এক দশক এবং কমপক্ষে কয়েক বছর ধরে।

হাসিনা সরকার হটালেও সামনে আসছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। তরুণদের চোখে মুখে যে বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন তা বাস্তবায়নে একের পর এক বাঁধা আসতে পারে।  যে বাঁধাগুলো সামনে আসবে তার একটি আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সহজ হবে।

দেশের ক্ষমতায় আসবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।  এরপর সকল রাজনৈতিক দল পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের পর্যাপ্ত সময়ও পাবে।  এসময় ক্ষমতা হারানো দল আওয়ামী লীগও বসে থাকবেনা।

বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতার পর দীর্ঘসময় ক্ষমতা ছিল। তরুণ প্রজন্ম আওয়ামী লীগের শাসন আমল প্রত্যক্ষ করতে পারলেও বিএনপির শাসন আমল প্রত্যক্ষ করতে পারেনি এখনও।  সেক্ষেত্রে আওয়ামী সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাদের কার্যক্রম গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে পুরো তরুণ সমাজ যাদের রক্তের বিনিময়ে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতার পট পরিবর্তন হয়েছে।

বিএনপি নিয়ে তরুণদের ভাবনা: আওয়ামী লীগ যেমন বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল তেমনি বিএনপিও দেশের মধ্যে অন্যতম একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল।  বেশিরভাগ তরুণ মনে করেন বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ মুদ্রার এপিট-ওপিট।

বেশিরভাগ তরুণদের সাথে কথা বললে তারা বিএনপির কার্যকলাপে খুবই বিরক্ত এটা প্রকাশ পেয়েছে।  বিরক্তের কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, তারা যেখানে নতুন বাংলাদেশের গড়ার জন্য রক্ত দিয়ে সরকার হটিয়েছে সেখানে বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠন উল্টা চিত্র প্রদর্শন করেছে।  বিভিন্ন এলাকা পাড়া মহল্লায় প্রতিশোধ পরায়ণ আচরন শুরু করে দিয়েছে।  আবার আওয়ামী লীগের মত করেই বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, দমন নিপরন, ক্ষমতা প্রদর্শন শুরু করে দিয়েছে।  এছাড়া এত কষ্টে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের কারিগররা যখন দেশ গুছাতে ব্যস্ত তখন বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠন নিজেদের লোকবল নিজেদের দাপট দেখাতে ব্যস্ত।  এমনকি দেশের কথা না ভেবে দলটি বৃহৎ সমাবেশও করছে।

পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে তরুণদের টোন বুঝতে না পারলে বিএনপিকে চরম মাশুল দিতে হবে: দীর্ঘ অনেক বছর ক্ষমতা না থাকা দল বিএনপি।  নানা দমন নিপীড়নে নাস্তা বুধ দলটি।  ছাত্র-জনতার কল্যাণে আওয়ামী সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিএনপি ফের চাঙ্গা ভাব নিয়ে আছে। দলটির নেতাকর্মীরা ভাবছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছে এখন তারাই পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসবে।  কিন্তু দলটিকে ভাবতে হবে যে সরকারকে ছাত্র-জনতা কয়েকদিনে ক্ষমতা থেকে নামাতে পেরেছ সেখানে বিএনপির মত দলকে সহজে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবেনা।

নতুন বাংলাদেশের তরুণদের টোন বুঝতে হবে। তারা কীরকম বাংলাদেশ চায়। তারা কীরকম রাজনৈতিক দল চায় তা বুঝতে হবে।

ক্ষমতায় আসতে পারে তরুণ প্রজন্মের কোন দল: দলীয় রাজনীতির জাঁতাকলে পড়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ দেশের প্রায় সকল সেক্টর। এসব সেক্টরে দুর্নীতি, রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ, হয়রানি মানুষকে এক প্রকার বিষিয়ে তুলেছে।  হাসিনা সরকার ক্ষমতায় গ্রহণের পূর্বে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় ছিল। তখনও একইভাবে সব সেক্টরে দুর্নীতি ছিল। তখনও মানুষ বিষিয়ে উঠেছিল।

অর্থাৎ ক্ষমতায় বদলায় কিন্তু দেশের সার্বিক অবস্থার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কোন পরিবর্তন হয় না।  বলাই যায় বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ মুদ্রার এপিট-অপিট।

দেশ গঠনের দায়িত্ব নিয়েছে তরুণ প্রজন্ম। যারা গড়ে তুলতে চায় স্বপ্নে সোনার বাংলাদেশ।  আওয়ামী লীগের মত শক্তিশালী এক সরকারকে যে তরুণ প্রজন্ম আন্দোলন করে নামাতে পারে তাদের হাতেই গড়ে উঠবে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ এমনটা বিশ্বাস করাই যায়।  সেক্ষেত্রে তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে যে রাজনৈতিক দল সামনের দিকে কার্যক্রম পরিচালনা করবে তারাই এগিয়ে থাকবে।

যে সংস্কৃতি থেকে বের হতেই হবে: আমাদের চিরাচরিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। এইসব সংস্কৃতিই সমাজের বিষফোড়া।  বিষফোড়ার অংশবিশেষ নিম্নে উপস্থাপন করলাম।  যেগুলো বাস্তবায়িত হলে নতুন বাংলাদেশ বাস্তবে রূপ নিবে:

১।  সকল স্তরের দুর্নীতি মূল উৎপাটন করতে হবে।

২। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সহ যাবতীয় বাজারের দাম সঠিক রাখার জন্য সিন্ডিকেট নামক বিষফোড়া কেটে ফেলতে হবে।

৩।  পরিবহনসহ সকল স্তরের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।

৪।  প্রকৃত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

৫।  পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।  কোনোভাবেই কোন রাজনৈতিক প্রপগান্ডায় ব্যবহার করা যাবেনা।  পুলিশের সাথে সম্পর্ক থাকবে জনগণের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের নয়।  এছাড়া পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের কীভাবে আধুনিকভাবে তৈরি করা যায় তার জন্য অন্যা অন্য উন্নত দেশের পুলিশি ব্যবস্থা ফলো করা যেতে পারে।

৬।  বিচারব্যবস্থা রাজনীতি মুক্ত করা

৭।  বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতি থাকবে কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি হয়ে নয়। ছাত্রসংসদ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

৮।  সড়কে সম্পূর্ণ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।  সকলকে আইন মানতে বাধ্য করা।  রিকশা থেকে শুরু করে সকল যানবাহনকে শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরিয়ে আনতে হবে।  সড়কে শৃঙ্খলা সবচেয়ে যে বিষয়টি টনিকের মত কাজ করে তা হলো জরিমানা।

১০।  রাজধানী ঢাকাকে একদম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, সকল অবৈধ দোকানপাট, বসতবাড়ি উচ্ছেদ করতে হবে। এছাড়া ফুটপাত মুক্ত করতেই হবে।

১১।  রাজধানী থেকে সকল কলকারখানা সহ রাজধানীতে অপ্রয়োজনীয় মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম ঢাকার বাহিরে স্থাপন করা।  যেমন কৃষি মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, ম]সৎ ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।

১২।  এছাড়া অপ্রয়োজনীয় মন্ত্রণালয় সহ যাবতীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহের কার্যক্রম ছোট করে ফেলা এবং ধীরে ধীরে বিলুপ্ত করে ফেলা।

১৩।  বিদেশে অর্থপাচার বন্ধে প্রয়োজনীয় সকল কঠোর পদক্ষেপ

১৪।  প্রবাসীদের যথাযথ সম্মান দেওয়া

মাত্র ১৪টি পয়েন্ট দিয়ে দেশ গঠনের পরামর্শ প্রদান সম্ভব নয়।  তবুও উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা থাকলো।

নতুন ভোর, নতুন বাংলাদেশ।  প্রত্যাশা অনেক।  হতাশাকে দুরে ঠেলে আগামীর কথা ভেবে আমাদের তরুণ প্রজন্ম আরো এগিয়ে যাক এমনটাই প্রত্যাশা।

লেখক : আমিরুল ইসলাম আসাদ প্রধান সম্পাদক, বিডি২৪লাইভ ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ (বনেক) কেন্দ্রীয় পরিষদ।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |