শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩১ অপরাহ্ন

আপডেট
আনারসের রাজ্যে কফি চাষ, শিক্ষকতা ছেড়েও সফল কৃষক টাঙ্গাইলের ছানোয়ার তাবিথ আউয়াল সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বাফুফের নতুন সভাপতি ছাত্রলীগ মিছিল-মিটিং করলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ব্যবস্থা: আইজিপি এসআই আকরাম হোসেনের অবৈধ সম্পদ : অবাক দুদক কর্মকর্তারা হালদা নদীর সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আমাদের জাতীয় দায়িত্ব; জিল্লুর রহমান সিরাজদিখানে হাজী মাসুদ রানার ব্যক্তিগত অর্থায়নে আল কোরআনের পাখিদের নিয়ে মধ্যাহ্নভোজ কমলাপুর স্টেশনের স্ক্রিনে লেখা ‘আ.লীগ জিন্দাবাদ’, যা জানা গেল বিয়ের ৪ মাসের মাথায় নববধূর রহস্যজনক মৃত্যু, পরিবারের অভিযোগ হত্যা  যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত সিএমএইচ থেকে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৬৬৬ জন
মিরসরাইয়ে ৫ বছরে ইলিশ আহরণ কমেছে ২২৭ মেট্রিক টন

মিরসরাইয়ে ৫ বছরে ইলিশ আহরণ কমেছে ২২৭ মেট্রিক টন

কামরুল হাসান, মিরসরাই : গত পাঁচ বছরে মিরসরাইয়ে ইলিশ আহরণের চিত্র চরম হতাশাজনক। ইলিশের মৌসুমেও সাগর থেকে যেন মাছ উধাও। পাঁচ বছরে মিরসরাইয়ে সাগরে ইলিশ মাছ আহরণ কমেছে ২২৭ মেট্রিক টন। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সরকার বছরের মধ্যে একাধিকবার সাগরে এবং নদীতে মাছ আহরণ বন্ধ রেখেও সাগরে ইলিশ মাছ বাড়ছে না কেন তা এখানকার জেলারাও বোধগম্য নয়। জেলাদের ধারণা, মিরসরাইয়ের চরে গড়ে ওঠা মিরসরাই অর্থনৈতিক শিল্পাঞ্চলের কারণে ইলিশের আহরণ কমেছে। মিরসরাই উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানায়, মিরসরাইয়ের ২৯টি জেলে পাড়ায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ২ হাজার ৫৫৭ জন। ২০১৬ সালের আগে ২০২৬ জন জেলে নিবন্ধিত হয়। ২০২১ এ নিবন্ধিত হয় ১০০ জন। এর পরবর্তী বছরগুলোতে নিবন্ধন পায় আরো ৪৩১ জন জেলে।

মৎস্য অফিসের তথ্য অনুসারে, মিরসরাইয়ে ২০১৮ সালে ইলিশ আহরণ হয় ৩৪২.১ মেট্রিক টন। ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৩২২.৬ মেট্রিক টনে। ২০২০ সালে পূর্ববর্তী বছর থেকে ৫ মেট্রিক টন মাছ বেশি আহরণ হয়। অর্থাৎ ২০২০ সালে ইলিশ আহরণ হয় ৩২৭.৪ মেট্রিক টন। এতে স্থানীয় জেলেদের মাঝে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালে এসে আবারও ধাক্কা খায় এখানকার জেলেরা। ওই বছর ইলিশ আহরণ হয় ২৫২.৩ মেট্রিক টন। এভাবে কমতে থাকে ইলিশ আহরণ। ২০২২ সালে হঠাৎ ধস নেমে আসে ইলিশ আহরণে। ওই বছর আহরণ হয় মাত্র ১৪৭.৪ মেট্রিক টন ইলিশ। কিন্তু সেই ধাক্কা আর সামাল দিতে পারেনি মিরসরাইয়ের ২৯টি জেলে পাড়ার কয়েক হাজার জেলে। ২০২৩ সালে আগস্ট মাস পর্যন্ত ইলিশ আহরণ হয় মাত্র ৩৭.৩ মেট্রিক টন। এক বছরের ব্যবধানে আহরণ কমে যায় ১১০.১ মেট্রিক টন। এবার হতাশা ভর করে জেলে পাড়ার বাসিন্দাদের মাঝে। অনেকে বদলে ফেলছেন নিজ পেশা।

চলতি বছর অক্টোবরে ২২ দিনের বন্ধের পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত ইলিশ আহরণ হয় মাত্র ৫৬ মেট্রিক টন। ধারণা করা হচ্ছে চলতি বছর হয়তো আরো ৪৪ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ হলে মোট আহরিত ইলিশের পরিমাণ দাঁড়াবে ১০০ মেট্রিক টন। ফলে বিগত পাঁচ বছরে ইলিশ আহরণ কমেছে ২২৭ মেট্রিক টন। এদিকে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের দেওয়া দুই দফা সাগরে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার উদ্যোগে কোর্স্ট গার্ডের সমন্বয়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়। চলতি বছরে দুই দফা অভিযান পরিচালনা করে কয়েক লাখ টাকার নিষিদ্ধ জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়। স্থানীয়দের ধারণা মিরসরাইয়ে সাগর পাড়ে অর্থনৈতিক শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠায় ইলিশ আহরণ কমেছে। তবে অর্থনৈতিক অঞ্চলের সব কয়টি শিল্প কারখানা চালু হলে নদীতে ইলিশ আহরণ আরো কমে যেতে পারে ধারণা তাঁদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মায়ানী ইউনিয়নের জয়নব গ্রামের জেলা বাদল জলদাশ জানান, তার ১০ সদস্যের সংসার। প্রত্যেক বছর ইলিশের মৌসুম এলে দাদনে জাল বিক্রি করেন তিনি। পরে ইলিশ মাছ আহরণ করে সেই দাদনের টাকা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু বিগত কয়েক বছর সাগরে ইলিশ আহরণ কমে যাওয়ায় দাদনের টাকা পরিশোধ করতে স্থানীয় এনজিও থেকে প্রচুর পরিমাণ ঋণ নিতে হচ্ছে। এছাড়াও বছরে দুইবার ইলিশ আহরণ বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটান।মায়ানি ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের জেলে রনজিৎ জলদাশ জানান, ইলিশ এখন সোনা হরিণ। ইলিশ আহরণের আশায় মাছ ধরার নৌকা ও জাল কিনতে স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু মাছতো ধরা পড়ছেই না, বরং ঋণের কিস্তি দিতেই এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এদিকে স্থানীয় জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইতিমধ্যে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারখানা নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। উৎপাদনে গিয়েছে একাধিক শিল্প কারখানা। এসব কারখানার বর্জ্য যদি সাগরে গিয়ে পড়ে ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাইয়ের সহাকরী সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাহিদ আল মাহমুদ বলেন, মিরসরাইয়ের ইলিশের আহরণ চিত্র হতাশাজনক। আগে যেভাবে উপকূলে ইলিশ পাওয়া যেত, বর্তমান চিত্র ঠিক তাঁর ওল্টো। এটার প্রধান কারণ হচ্ছে ইলিশের উৎপাদন ও প্রজনন ক্ষেত্র গুলো মারাত্মক ভাবে ক্ষতি সাধন হচ্ছে। এছাড়াও অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারণে ঘাটগুলো বদলে ফেলায় ইলিশ আহরণ কমেছে। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে আমরা বন্ধের দিনগুলোতে সাগরে বিশেষ অভিযান জোরদার করছি। আমরা আশা রাখছি চলতি বছরে ১০০ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ হতে পারে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |