ওয়াসিফ আল আবরার, ইবি: জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কে “শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ সম্পন্ন নিরাপদ ক্যাম্পাস” হিসেবে গড়ে তুলতে চলমান সংকট ও সীমাবদ্ধতা নিরসনের নিমিত্তে এবং কাঙ্খিত ক্যাম্পাস বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রশাসনের নিকট ১১০ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।

শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব নসরুল্লাহর কনফারেন্স রুমে উপাচার্যের হাতে এই দাবি সমূহ পেশ করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি এইচ এম আবু মুসা ও সেক্রেটারি মাহমুদুল হাসান সহ সংগঠনের সদস্যরা।

১১০ দফা প্রস্তাবনার মধ্যে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো তাদেরকে চিহ্নিত করে অতিদ্রুত একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, ২০১২ সালে গুমের শিকার দুই শিক্ষার্থী ওয়ালিউল্লাহ ও আল মুকাদ্দাসের সন্ধান কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ, শিক্ষার্থীদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের সাথে সম্পৃক্ত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী ও তাদের দোসরদেরকে চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ, বিগত ১৬ বছরে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, যে সকল স্থাপনা ও ফলক ফ্যাসিবাদের আইকনদের নামে নামকরণ করা হয়েছে তা অবিলম্বে পরিবর্তন, নির্মাণাধীন হলগুলোর নামকরণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যশীল মনীষীদের নামে অথবা জুলাই বিপ্লবের শহীদদের নামে নামকরণ, জ্বলাই বিপ্লব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে গবেষণাপত্র প্রকাশের পদক্ষেপ গ্রহণ, থানা গেইটে প্রতিষ্ঠা প্রস্তুর ঘিরে দৃষ্টিনন্দন ইবি মিউজিয়াম গড়ে তোলা, হল পরিচালনা ও সিট বন্টনে ‘প্রতি হলে আবাসন, নিশ্চিত করবে প্রশাসন’এই স্লোগানকে কার্যকর, আইন করে গণরুম ও গেস্টরুম কালচার চিরতরে বিলুপ্ত, ফ্যাসিজমের স্টেকহোল্ডার বাতিত ক্যাম্পাসের সকল সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত অন্যতম।

এছাড়াও, আবাসন নিশ্চিতের পূর্বে শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট এবং হলে ইন্টারনেট সেবা ও খাবারের মান উন্নতকরণ, ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব অনুষদের পাশাপাশি কৃষি অনুষদ বৃদ্ধি, প্রতি বিভাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক ও ক্লাসরুম নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষকদের মূল্যায়নের ব্যবস্থা ও সেরা শিক্ষকের জন্য বেস্ট টিচার অ্যাওয়ার্ড প্রদানের ব্যবস্থা, পরীক্ষার অন্তত ৭ দিন পূর্বে টিউটোরিয়াল ও ক্লাসে উপস্থিতির নম্বর প্রকাশ, রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক প্রভাবমুক্ত স্বচ্ছ নিয়োগ ব্যবস্থা, মেধাবৃত্তির সংখ্যা ও পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বৈরশাসনামলে লাগামহীনভাবে বর্ধিত বিভিন্ন ফি কমিয়ে যৌক্তিক ফি নির্ধারণ, রাষ্ট্র ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে লাইটিং ও সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে চাকুরীর প্রস্তুতিমূলক বইয়ের সরবরাহে ‘জব এইড কর্নার’ চালুর পাশাপাশি সপ্তাহে ৭ দিন সকাল ৭ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা, কেন্দ্রীয় মসজিদের নির্মাণ কাজ সমাপ্তি, সকল ধর্মের অনুসারীদের উপাসনায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত, চিকিৎসা কেন্দ্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি, ওয়ার্ড এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার ও নার্স নিশ্চিত ও ঔষধ সরবরাহ বৃদ্ধি এবং হল ভিত্তিক চিকিৎসা সহকারী নিয়োগ দানের দাবি জানিয়েছে ছাত্রশিবির।

এছাড়াও, ১১০ দফা প্রস্তাবনার মধ্যে আইন প্রণয়ন করে ইকসু গঠন, প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজড করা, শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল পরিচয়পত্র প্রদান, সিলেবাসে গবেষণা অন্তর্ভুক্তি এবং গবেষণা সুবিধা বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহী করতে আর্থিক প্রণোদনা দান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে একটি রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা, কুষ্টিয়া রেলস্টেশন থেকে ক্যাম্পাসকে অন্তর্ভুক্ত করে ঝিনাইদহের কোটচাদপুর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপন, পরিবহন বিভাগের জন্য একটি স্থায়ী এ্যাপ, স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, IIER এর উদ্যোগে বেসিক ইসলাম ও কুরআন শিক্ষার বিভিন্ন কোর্সের আয়োজন, মনোরম পরিবেশ ও স্বাস্থ্য-সুরক্ষা নিশ্চিত করতে Green Campus, Clean Campus স্লোগানকে ধারণ করে পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণ, সকল দুর্লভ উদ্ভিদের চারা রোপণ, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া চালু ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে খাবারের গুণগত মান বৃদ্ধি, জমি অধিগ্রহণ করে মানসম্মত স্টেডিয়াম ও একটি সুইমিং পুল তৈরী, ছুটির দিনেও জিমনেশিয়াম খোলা রাখার পাশাপাশি পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি নিশ্চিত ও মাঠের দুপাশে গ্যালারি নির্মাণ এবং রাস্তা পারাপারের জন্য মেইনগেটে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন তারা।

ইবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এইচ এম আবু মুসা বলেন, আমরা উপাচার্যের কাছে হস্তান্তর করেছি। উপাচার্য স্যার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরা আপাতত ইকসু নির্বাচনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। দলীয় সংগঠনের প্রতিনিধি কিন্তু সবকিছু বলতে পারে না। তবে ইকসু ভিপি যিনি হবেন তিনি পদের কারণে সিন্ডিকেট সদস্য হন। এক্ষেত্রে তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করে দাবিদাওয়া পেশ করার জন্য ভূমিকা রাখতে পারেন। আমাদের প্রস্তাবনা গুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা যথাসাধ্য সহযোগীতা করবো।