বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৯ পূর্বাহ্ন
শহিদুল্লাহ মনসুর, জাবি: দীর্ঘ ৮ বছর নেই কমিটি। সমস্যা ও সংকটের মধ্যখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। যেকোন সংকটকালে সমস্যাসংকুল পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা অনেকখানিই নির্ভর করে নেতৃত্ব নৈপুণ্যের ওপর। রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক নেতৃত্ব—সবখানেই প্রয়োজন হয় যোগ্য নেতার। যিনি সংকটকেও সমাধানের পথ খোঁজেন; কঠিন পরিস্থিতি সামলে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যান। এ ক্রান্তিকালে পাল্টে যাওয়া বাংলাদেশে আবার প্রশ্ন উঠেছে যোগ্য নেতৃত্বের। কেমন নেতৃত্ব চায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কর্মীরা?
এ প্রসঙ্গে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু নাঈম বলেন, কমিটি অবশ্যই ভারসাম্যপূর্ণ হতে হবে যেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে কাজ করা যায়। সেক্ষেত্রে মাস্টার্স অধ্যয়নরত অথবা রেজাল্ট প্রকাশ হয়নি তাদের রাখা যেতে পারে। এমন কারো কমিটিতে আসা উচিত হবে যাতে দলের সার্বজনীনতা হারায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে। আর নেতৃত্ব হলো একটি ‘শিল্প’, যার মাধ্যমে একটি দল বা সংস্থাকে কার্যকর করা যায়, দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণ করা হয় ও সততার সঙ্গে সদস্যদের অনুপ্রাণিত করে সম্মিলিত লক্ষ্য অর্জনে পরিচালনা করা হয়। সততা, দৃঢ় নৈতিকতা এবং উচ্চনৈতিকমান একজন ভালো নেতার অপরিহার্য গুণ। একজন সফল নেতা ব্যক্তিত্ব, সাহসিকতা, স্বচ্ছ দৃষ্টি এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার অধিকারী হন ও দলকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পারফর্ম করতে উৎসাহিত করে সাংগঠনিক সফলতা নিশ্চিত করেন। অতএব এমন কাউকে নেতৃত্বে আসা দরকার যারা সাধারণদের মধ্যে কাজ করতে পারবে।
একই প্রসঙ্গে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সোলাইমান সাব্বির বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ব্যাতীত প্রায় সকল রাজনৈতিক সংগঠনের শাখা কমিটি রয়েছে। কিন্তু বিগত ৬ বছরেরও অধিক সময় ধরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি নেই। আসন্ন কমিটি প্রসঙ্গে যেটি বলতে চাই সেটি হচ্ছে, বর্তমান শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রমে অভ্যস্ত নয়, তারা বুদ্ধিভিত্তিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। যারা বিগত বছরগুলোতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ব্যানারে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝান্ডা বহন করেছেন, তারা বর্তমানে বেশিরভাগই বিশ্বিবদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। প্রাক্তনদের অবদান কখনোই ভোলবার নয়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বলেছেন, “ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।” তাই বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং পরিস্থিতিতে কমিটি প্রসঙ্গে, তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা উচিত হবে না। অন্যদিকে স্নাতক অধ্যায়নরত নবীন শিক্ষার্থীদের দ্বারা কমিটি ঘোষণা করলে শাখা সংগঠনটি নেতৃত্ব সংকটে ভুগবে। এমতবস্থায় উভয়দিক বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশু বিদায়ী নিয়মিত শিক্ষার্থী দ্বারা সংগঠনটির দায়িত্বভার চালনা করলে উক্ত সমস্যার সমাধান হবে, একই সাথে শিক্ষার্থীদের কল্যানের লক্ষ্যে শুদ্ধ রাজনৈতিক চর্চা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতে পাবে বলে আশা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহ মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, আমি মনে করি গত ষোল বছরে যারা হামলা মামলার শিকার হয়েছে কমিটিতে তাদেরই আসা উচিত। আর তাছাড়া রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা অনেক বড় বিষয়। যারা বিগত দিনে ছাত্রদলের ঝান্ডা উচু করে ধরেছে তাদেরকে মূল্যায়ন অবশ্য জরুরি। আমরাও চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক, তবে স্বৈরাচারী আমলে ছাত্রদলের নেতৃত্বে যে গ্যাফ হয়েছে তা কমিয়ে আনা জরুরি। দে্শ নায়ক তারেক রহমান যাকে যোগ্য মনে করভে তাকেই দিবেন। আমরা ভালো কিছুর প্রত্যাশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবিদুর রহমান বলেন, যারা দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে দলের জন্য নিঃস্বার্থ কাজ করে গেছেন তাদের ভুলবার নয়। তারা আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বি নয়, তারা আমাদের রাজনৈতিক গুরু। ক্যাম্পাস রাজনীতিতে প্রাক্তনদের পুনর্বাসন তাদের ত্যাগ তিতিক্ষাকে ছোট করবে এবং সাধারণ ছাত্রদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে বলে মনে করি। প্রাক্তনদের জন্য বিকল্প পথ সৃষ্টি করে তাদেরকে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। যেমন কেন্দ্রীয় ছাত্রদল/যুবদল হতে পারে। ২৪ এর অভ্যুত্থানকে মাথায় রেখে রানিং স্টুডেন্ট এর মধ্য থেকেই কমিটি হওয়া শুধু বাঞ্চনীয় নয় বরং আবশ্যক। রাজনীতি হবে শিক্ষার্থীবান্ধব। জেনারেশন গ্যাপ চলমান সাধারণ ছাত্রের পালস বোঝার অন্তরায় ও তারা তা প্রত্যাখ্যান করবে, নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতির (জাকসু) বিরুদ্ধে এবং জাবি ছাত্রদল শাখাকে সংকটে ফেলতে পারে।
এর আগে ২ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে পল্টনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ১৬ ই ডিসেম্বর’র পূর্বে জাবি ছাত্রদলের কমিটি ওেয়ার আশ্বাস দেন আবু আফসান কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জাবি শাখার কমিটি’র গঠনে দায়িত্ব প্রাপ্ত মোহাম্ম ইয়াহইয়া।