শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রামে ৫ বিদ্যুৎকেন্দ্র অচল লোডশেডিং কমার সম্ভাবনা নেই

চট্টগ্রামে ৫ বিদ্যুৎকেন্দ্র অচল লোডশেডিং কমার সম্ভাবনা নেই

চট্টগ্রামে ৫ বিদ্যুৎকেন্দ্র অচল

মোঃ বেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে ঘনঘন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। দিন-রাত সমানতালে চলছে লোডশেডিং। এ রোজ অফিস-আদালতের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে । চট্টগ্রামে প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে, এর বিপরীতে মিলছে ১২০০ থেকে ১৩ মেগাওয়াট। এছাড়া চট্টগ্রামের পাঁচটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বন্ধ রয়েছে উৎপাদন। চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) জানিয়েছে, লোডশেডিংয়ের পরিমাণ এখন ২০০ থেকে ৩৫০ মেগাওয়াট। কখনও কখনও আবার সেটা ৪০০ মেগাওয়াটও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মূলত গ্যাস ও জ্বালানি সংকটের কারণেই এমনটা হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে সহসা মুক্তির সম্ভবনা দেখছে না পিডিবি।চট্টগ্রামের বিভিন্ন কলকারখানা সহ বিভিন্ন চাপাখানাসহ ব্যবসা কাজে দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে ।

চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানহাটের আসকারাবাদ এলাকা আগ্রাবাদ ডিভিশনের ১৪ নম্বর ফিডারের আওতাভুক্ত। গত সোমবার দিন ও রাত মিলে এই ফিডারে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করেছে ১৫ থেকে ১৬ বার।জানা গেছে, কাপ্তাই হাইড্রোলিক পাওয়ার প্ল্যান্ট-১ এ (৪৬ মেগাওয়াট) বর্তমানে পুরোটাই বন্ধ। কাপ্তাই হাইড্রোলিক পাওয়ার প্ল্যান্ট-২ এ (৪৬ মেগাওয়াট) সরবরাহ আছে। কাপ্তাইয়ের ৫০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে মিলছে ৪৬ মেগাওয়াট। কাপ্তাইয়ের অপর ৫০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ৩৫ মেগাওয়াট।অপরদিকে ২১০ মেগাওয়াটে রাউজান-১ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৯০ মেগাওয়াট। ২১০ মেগাওয়াটের রাউজান-২ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোটাই বন্ধ এখন। জুডিয়াক ৫৪ মেগাওয়াট থেকে মিলছে ৩৫ মেগাওয়াট। ১১০ মেগাওয়াটের বারাকা কর্ণফুলী থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে পুরোটাই। ১৫০ মেগাওয়াটের শিকলবাহা পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট পুরোটাই বন্ধ বর্তমানে।২৪ মেগাওয়াটের রিজেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ২১ মেগাওয়াট। ৫০ মেগাওয়াটের ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে মিলছে ৮ মেগাওয়াট। ১০০ মেগাওয়াটের জুলধা-১ পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২০ মেগাওয়াট। ১০০ মেগাওয়াটের জুলধা-২ পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে মিলছে ৫০ মেগাওয়াট।একইভাবে ১০০ মেগাওয়াটের জুলধা-৩ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৭৬ মেগাওয়াট। ২৬ দশমিক ৭ মেগাওয়াটে আরপিসিএল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে পাওয়া যাচ্ছে ২৫ মেগাওয়াট। ১০০ মেগাওয়াটের দোহাজারী বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৮৯ মেগাওয়াট।১০০ মেগাওয়াটের হাটহাজারী বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখন পুরোটাই বন্ধ। ৫০ মেগাওয়াটের বারাকা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে মিলছে ৩৭ মেগাওয়াট। ১০০ মেগাওয়াটের এনার্জিপ্যাক পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৯০ মেগাওয়াট। ৩০০ মেগাওয়াটের আনোয়ারা পিকিং প্ল্যান্ট থেকে পাওয়া যাচ্ছে ২৬৫ মেগাওয়াট। অন্যদিকে ২২৫ মেগাওয়াটের শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বর্তমানে পুরোটাই বন্ধ।

চট্টগ্রাম পিডিবির সুপারভাইজরি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডাটা অ্যাকুইজিশনের (স্ক্যাডা) নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘জ্বালানি সংকটের কারণে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে। গ্যাসের প্রেসার কম ও জ্বালানি তেলের সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।’তিনি বলেন, ‘লোডশেডিংয়ের পরিমাণ অনেক সময় পরিবর্তন হচ্ছে। আসলে বিদ্যুতের সরবরাহের ওপরই নির্ভর করছে লোডশেডিংয়ের নির্ধারিত মাত্রা।’প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে সরবরাহ আছে ১০৩৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু চাহিদা রয়েছে ১৫০০ থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।’পিডিবি চট্টগ্রাম জোনের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, পরিস্থিতি প্রতিনিয়তই বদল হচ্ছে। তাই কখন কী হবে, বলা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয়ভাবে যে নির্দেশনা আসছে আমরা সেভাবেই কাজ করছি। মূলত জ্বালানি সংকটের কারণেই পাওয়ার প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আমরা বিদ্যুৎ জেনারেশনের তালিকা করি প্রতিদিন সকাল ৭টা আর রাত ৭টায়। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে যে বিদ্যুৎ পাই, তাই বণ্টন করে থাকি।পরিস্থিতি এর চেয়েও খারাপ হতে পারে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বলা মুশকিল। সামগ্রিক অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, পরিস্থিতি বেগতিকই হবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2025 Protidiner Kagoj |