বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩৮ অপরাহ্ন

একজন আদর্শ শিক্ষক সমাজ বিনির্মাণের হাতিয়ার

একজন আদর্শ শিক্ষক সমাজ বিনির্মাণের হাতিয়ার

মো: শফিকুল ইসলাম,ঘাটাইল :

বলা হয়”চরিত্র মানব জীবনের রাজমুকুট”। চরিত্রহীন ব্যক্তি পশুর সমান। প্রবাদে আছে,When wealth is lost, nothing is lost; when health is lost, something is lost, when character is lost, all is lost. যিনি মানসম্মত শিক্ষা দান করেন, তিনিই শিক্ষক। একজন আদর্শ শিক্ষকের  বেশ কিছু মৌলিক গুণাবলী থাকা উচিত।

আদর্শ শব্দের অর্থ অনুকরণযোগ্য, শ্রেষ্ঠ, নমুনা, দৃষ্টান্ত, আয়না, দর্পণ ইত্যাদি। একজন পুরুষের অনুকরণে চরিত্র উন্নত করা যায় তাই আদর্শ।

আর আদর্শ শিক্ষকের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান এবং শ্রেণিকক্ষের বাইরের জীবন। শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে থাকেন শিক্ষার্থীদের সাথে, আর শ্রেণিকক্ষের বাইরে থাকেন তাঁর ছাত্র- শিক্ষকসহ বৃহত্তর মানব সমাজের সাথে। শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী সর্বত্রই প্রস্ফুটিত হয় শিক্ষকের আচার আচরণে।

ধরণীতে মানব কুলের আদর্শ শিক্ষক হলেন আল্লাহর সর্বশেষ রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (স:)। মহান আল্লাহ বলেছেন,

هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّيْنَ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِيْنٍ،

‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি নিরক্ষরদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসূল হিসাবে পাঠিয়েছেন। যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াত সমূহ পাঠ করেন ও তাদেরকে পবিত্র করেন। আর তাদেরকে কিতাব ও সুন্নাহ শিক্ষা দেন । সুরা (জুমু‘আহ)

রাসূল (স:) বলেছেন وَإِنَّمَا بُعِثْ مُعَلِّمًا ‘আমি শিক্ষক হিসাবে প্রেরিত হয়েছি । মুআবিয়া বিন হাকাম আস-সুলামী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (স:) সম্পর্কে বলেন,
مَا رَأَيْتُ مُعَلِّمًا قَبْلَهُ وَلاَ بَعْدَهُ أَحْسَنَ تَعْلِيمًا مِنْهُ فَوَاللهِ مَا كَهَرَنِى وَلاَ ضَرَبَنِى وَلاَ شَتَمَنِى

আমি তাঁর পূর্বে ও পরে তাঁর চেয়ে সুন্দর শিক্ষাদানকারী শিক্ষক আর দেখিনি। আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে বকাবকি করেননি, মারেননি এবং গালমন্দ ও করেননি’।

মক্কায় আরকাম (রাঃ)-এর গৃহ ছিল তাঁর শিক্ষাদান কেন্দ্র। এছাড়া কাবা চত্বর বিভিন্ন জনসমাবেশ ও মেলায় গিয়ে তিনি শিক্ষাদানের কাজ করতেন। মদীনায় হিজরতের পর মসজিদে নববীতে প্রতিনিয়ত শিক্ষাদানের কাজ চলত।

মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ , অর্থ :তোমরা জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস কর, যদি তোমরা না জানো (আম্বিয়া)।

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (স:) বলেছেন, أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّىْ إِمَامُكُمْ فَلاَ تَسْبِقُوْنِىْ بِالرُّكُوْعِ وَلاَ بِالسُّجُوْدِ وَلاَ بِالْقِيَامِ وَلاَ بِالاِنْصِرَا , অর্থ :  হে লোক সকল! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের ইমাম। সুতরাং তোমরা আমার আগে চলে যেও না রুকূ‘তে, না সিজদায় , না ওঠায় , না বসায় , না সালাম ফিরানোতে ।

ইসলাম শিক্ষককে মহান ব্যক্তিত্ব ও শ্রদ্বার পাত্র হিসেবে স্বীকৃতি দান করেছে। যার বিবরণ কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, الرحمن علم القرأن করুনাময় শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা নিজেই সর্বপ্রথম শিক্ষক। সুতরাং যে কাজ আল্লাহ তায়ালা করেছেন উক্ত কাজে যে ব্যক্তি আত্মনিয়োগ করবে তার চেয়ে আর কেউ সম্মানের অধিকারী হতে পারেন না।

শিক্ষার্থীদেরকে সন্তানের মতো স্নেহ করেন শিক্ষকগণ। রাসূলুল্লাহ( স) বলেছেন انما انالكم مثل الوالد لولد সন্তানের জন্য পিতা যেমন, আমিও তোমাদের জন্য তেমন। হজরত মুআবিয়া ইবনে হাকাম সুলামী (রা.) বর্ণনা করেন, ما رايت معلما قبله ولابعده احسن تعليما منه فوالله ما قهرني ولا ضربني ولاشتمني- আমি রাসূলুল্লাহ (স) থেকে শ্রেষ্ঠ কোনো শিক্ষক পূর্বেও দেখিনি এবং তাঁর পরেও দেখিনি ।

“শিক্ষা জাতীর মেরুদন্ড” এর মর্মার্থ বর্তমান জাগতিক সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার একমাত্র মাধ্যম শিক্ষক। তাই শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদার আসনে বসিয়ে মানব কল্যাণ সাধনের পথ খুঁজতে হবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2025 Protidiner Kagoj |